ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য ইয়ার্ডে

আমদানি-রফতানি পণ্যের চাপে বেসামাল চট্টগ্রাম বন্দর

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৪ জানুয়ারি ২০১৮

আমদানি-রফতানি পণ্যের চাপে বেসামাল চট্টগ্রাম বন্দর

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমদানি-রফতানি। শিল্পের কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্যসহ আমদানি দিন দিন এতটাই বাড়ছে যে, চাপ সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষে। দিনরাত কন্টেনার ওঠানামা ও পণ্য ডেলিভারির পরও সৃষ্টি হচ্ছে জাহাজ জট, উঁচু হচ্ছে কন্টেনারের স্তূপ। সমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে আগের বছরের চেয়ে ৩ লাখ টিইইউএস বেশি। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গৃহীত পরিকল্পনাগুলো দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন বলে অভিমত বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং আমদানি-রফতানিকারকদের। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ টিইইউএস। আগের বছর হ্যান্ডলিং হয়েছিল ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৯ টিইইউএস। সে হিসাবে হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৩ লাখ টিইইউএস কন্টেনারের বেশি। গত বছর যে পরিমাণ হ্যান্ডলিং হয় তা-ও ছিল পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৩ লাখ টিইইউএস বেশি। যেভাবে আমদানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তাতে করে বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা দিয়ে দেশের অর্থনীতি এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যকে সার্ভিস দেয়া কঠিন হয়ে পড়তে পারে এমনই শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। কেননা, নতুন টার্মিনাল নির্মাণসহ বেশকিছু পরিকল্পনা থাকলেও অগ্রগতি বেশ ধীর। আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনও চলছে। কিন্তু কতদিন চলবে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ, আমদানি বাড়ছে জ্যামিতিক হারে, রফতানিও বাড়ছে। কিন্তু বন্দরের টার্মিনাল এবং জেটির সংখ্যা ও সুযোগ-সুবিধা সে হারে বাড়ছে না। সরকার দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রফতানি বৃদ্ধির টার্গেট নিয়ে এক শ’টি ইকনোমিক জোন প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম ইকনোমিক জোন মীরসরাইসহ বেশ কয়েকটি জোন প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে জোরেশোরে। মীরসরাইয়ে শিল্প প্লট বরাদ্দ, সড়ক নির্মাণ, বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্রসহ নানা অবকাঠামো ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শিল্পের কর্মকা- শুরু হয়ে গেলে এই বন্দরের ওপর চাপ কতটা বাড়বে তা সহজেই অনুমেয়। আর শিল্পজোনগুলোর আমদানি-রফতানি সামাল দিতে হলে দ্রুততার সঙ্গে বন্দর সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে হবে এখনই। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক জানান, বুধবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কন্টেনার ছিল ৩৮ হাজার ৩৮৫ টিইইউএস। বন্দর ইয়ার্ডের ধারণক্ষমতা ৩৬ হাজার টিইইউএস। এমন চাপের মধ্যে পণ্য ওঠানামার কাজ কিভাবে চলছে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, প্রতিদিন গড়ে চার হাজার টিইইউএস কন্টেনার ডেলিভারি হয়। সেই হিসাবে চালানো সম্ভব হচ্ছে। বুধবার বন্দর জেটি এবং বহির্নোঙ্গরে কাজ চলছিল ৫৮টি কন্টেনার জাহাজ ও মাদার ভেসেলে। আর কাজ চলছে না এমন জাহাজের সংখ্যা বহির্নোঙ্গরে ১২৬টি। তবে এরমধ্যে অয়েল ট্যাঙ্কার, স্ক্র্যাপ জাহাজসহ অনেক জাহাজই জেটিতে আসবে না। লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) জানায়, বহির্নোঙ্গরে ৮৮টি মাদার ভেসেল রয়েছে, যেগুলো থেকে পণ্য লাইটারিং হবে। আমদানির এত পণ্য লাইটারিংয়ের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক লাইটার জাহাজ নেই। সে কারণেও অপেক্ষমাণ জাহাজের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান ডব্লিউটিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বন্দরের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে পরিকল্পনাগুলো এখন দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবে রূপদান জরুরী হয়ে পড়েছে। কেননা, দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে। প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন নতুন শিল্প। জনসাধারণের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগও বেড়েছে। সঙ্গত কারণেই বাড়ছে আমদানি। সরকার আরএমজি সেক্টরে ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির টার্গেট নিয়েছে। এই রফতানির জন্য কাঁচামাল আমদানিও বৃদ্ধি পাবে। শিল্প জোনগুলো উৎপাদনে চলে গেলে বর্তমান বন্দরের সক্ষমতা দিয়ে আর চলবে না। তিনি বলেন, এ সক্ষমতা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে এর বেশি সেবা আশা করা যায় না। বরং যে দক্ষতার স্বাক্ষর বন্দর রাখছে তাও অনেক।
×