ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষণিকের তরে একটু আনন্দ...

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

ক্ষণিকের তরে একটু আনন্দ...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওরা কেউই আসেনি সচ্ছল পরিবার থেকে। আগে ওরা লড়াই করত দারিদ্র্যের কশাঘাতের সঙ্গে। এখন ওরা লড়ে ফুটবল মাঠে, পায়ে বল নিয়ে। সেই লড়াইয়ে তারা সফল। তাও একবার নয়, চার-চারবার! এএফসি অনুর্ধ-১৪ বালিকা আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়নশিপে দু’বার, এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে (গ্রুপ ‘সি’) একবার। শেষেরটি একেবারেই টাটকা। সাফ অ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে চ্যাম্পিয়ন! প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই আসরের শক্তিশালী ভারতকে দু’বার হারিয়ে, কোন গোল হজম না করে এবং অপরাজিত থেকে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে গোলাম রব্বানী ছোটনের সুযোগ্য শিষ্যরা। মাঠের খেলা শেষ। ২৫ ডিসেম্বর ছিল বড়দিনের ছুটি। বাফুফে মেয়েদের ছুটি দিয়েছে ১৫ দিনের জন্য। ওই দিনই রাতে বেশিরভাগ ফুটবলারই গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জন-পরিবারের সান্নিধ্যে চলে গেছে শামসুন্নাহার, আনুচিং, মনিকা, নাজমা, ঋতুপর্ণারা। আগামী ১০ জানিয়ারিতেই তাদের ফিরতে হবে ঢাকায়, বাফুফে ভবনের ক্যাম্পে। বাড়ি যাবার আগের দিন শিরোপা জিতে মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবার আনন্দ উদ্যাপন করে সোনার মেয়েরা। আয়োজনটা ছিল সামান্যই। কেক কেটে সবাই মিলে খাওয়া। সেটাই দারুণ মজা করে, গান গেয়ে, হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে মেয়েরা করেছে। ফাইনালের আগে দলের অধিনায়ক মারিয়া মান্দা বলেছিল, ‘শিরোপা জিতে তারপর সবাই মিলে সেলিব্রেশন করব।’ সেটাই করে তারা, সাদামাটাভাবে। তহুরা জানায়, ‘আমি গান গাইতে পারি না, তবে গজল গাইতে পারি। একটু চেষ্টাও করেছি গাইতে। তবে বেশিক্ষণ উৎসব করতে পারিনি। অনেক ক্লান্ত ছিলাম। তাছাড়া পায়ে চোটও ছিল। ফলে খুব দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়ি।’ যারা বল পায়ে মাঠে খেলে জাতিকে ভাসায় আনন্দের বন্যায়, তাদের জীবনে আসলে আনন্দের উপলক্ষ আসে খুব কমই। বাবা-মা-ভাই-বোন ছেড়ে মাসের পর মাস থাকতে হয় অনুশীলন ক্যাম্পে। সপ্তাহে একদিন অনুমতি মেলে তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলার। ক্যাম্পে সবসময় থাকতে হয় কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে। করতে হয় কঠোর অনুশীলন। স্বভাবে বেশিরভাগই দারুণ লজ্জাবতী। পেটে বোমা মারলেও মুখ থেকে একটা কথা বের হয় কি না সন্দেহ, অথচ মাঠে ফুটবল পায়ে দেখলে তার বিপরীতই মনে হয়! জিততে হলে চাই পরিকল্পনা, চেষ্টা, পরিশ্রম, ধৈর্য্য আর মনোবল। এই মানবিক অনুভূতির লেশমাত্রও আজ থেকে সাত-আট বছর আগে ছিল না বাংলাদেশের জাতীয় দলের মহিলা ফুটবলারদের। একই অবস্থা ছিল বিভিন্ন বয়সভিত্তিক মহিলা দলগুলোরও। প্রতি ম্যাচেই যদি নামতা গুণে হালি হালি গোল হজম করতে হয়, তাহলে আত্মবিশ্বাস কোথায় থাকবে বলুন! হারার আগেই মানসিকভাবে ম্যাচে হেরে যেত বাংলাদেশের মেয়েরা। মনোবল দিয়ে কি অসাধ্য সাধন করা সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৫ মহিলা ফুটবলাররা প্রমাণ করেছে। তারই ক্ষুদ্র বিনোদন-উপহার তারা পেল কেক-ভক্ষণে ... ক্ষণিকের তরে কিঞ্চিৎ আনন্দ উদ্যাপন করে।
×