
.
‘আপনারা দুইটি কাজ করেছেনÑআপনারা ইতিহাস নতুন করে লিখছেন, এবং সমাজের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তনের যাত্রাকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এ জন্যই আমরা আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা নারী দলের পেছনে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের পেছনে আমরা আছি।’Ñপ্রথমবারের মতো এএফসি এশিয়া কাপের মূল মঞ্চে জায়গা করে নেওয়া নারী ফুটবল দলকে জাঁকালো সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলছিলেন তাবিথ আউয়াল।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতির বক্তব্য খুবই প্রেরণাদায়ী। কিন্তু কথায় আছে, খালি মুখে কি আর চিরা ভেজে! ঐতিহাসিক এই অর্জনে যুব ও ক্রিড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। ২০২৪ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরদিন বাফুফে ভবনে উপদেষ্টা এক কোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেন। এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফুটবলারদের সেই অর্থ প্রদান করে।
যুব ও ক্রিড়া উপদেষ্টা এশিয়া কাপ নিশ্চিত করার পর অর্ধ কোটি টাকা বোনাস ঘোষণা করলেন। বাফুফে হাতিরঝিলে গভীররাতে সংবর্ধনা দিলেও আর্থিক কোনো পুরস্কারের ঘোষণা আসেনি। নতুন পুরস্কার ঘোষণা তো দূরের কথা, সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য ঘোষিত দেড় কোটি টাকা এখনও দিতে পারেনি ফেডারেশন কর্তারা। অথচ ফেডারেশনের কর্তারা (বিশেষ করে একজন সহ-সভাপতি) শুধু মিডিয়ায় আধুনিকতা, পেশাদারিত্বের বুলি আওড়ান! যুব ও ক্রিড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দায়িত্ব নেওয়ার পর ক্রিড়াঙ্গনে সাফল্য এলে তিনি তাৎক্ষণিক পুরস্কার ঘোষণা করেন। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন, অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল বিশ্বকাপে নিশ্চিত, নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন, সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ক্রিড়াবিদদের।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এত বড় অর্জনের পরও দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফে নীরব। অথচ আগেও এশিয়ান কাপের মূলপর্বে খেলেছে ভারত নারী ফুটবল দল। থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বাছাইপর্বে এবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবারও মূলপর্ব নিশ্চিত করেছে টিম ইন্ডিয়া। মেয়েদের এমন সাফল্যে তাদের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ পুরস্কার ঘোষণা করেছে অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ)। এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে অসাধারণ পারফরম্যান্সের জন্য ৫০,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এআইএফএফ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৬১ লাখ টাকা।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে গত বছর ৯ নভেম্বর দেড় কোটি টাকা ঘোষণা করেছিল বাফুফে। সেই অর্থ এখনও দিতে পারেনি। নারী ফুটবলারদের মধ্যে ঋতুপর্ণারা কয়েকজন মাত্র মাসে ৫৫ হাজার সম্মানি টাকা পান। দেশে নেই ঘরোয়া লিগ।
ফলে নারী ফুটবলারদের আর্থিক দুর্দশা প্রকট। এশিয়ান কাপ নিশ্চিতের পরও বাফুফে সভাপতির কাছ থেকে আর্থিক কোনো ঘোষণা না পাওয়ায় পুরো অনুষ্ঠানের আলো খানিকটা ম্লানই হয়েছে। কারণ প্রথমবারের মতো ইতিহাস গড়ে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ২০২৬-এ খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। আগামী এশিয়ান কাপটি বসবে অস্ট্রেলিয়ায়। সংবর্ধনার মঞ্চে মেয়েদের স্তুতি আর স্বপ্নের কথা বলেছেন তাবিথ, ‘নারী ফুটবল দলের কারণে আজ সারা বিশ্ব বাংলাদেশকে নতুন আলোয় দেখছে। আমরা আর কেবল বন্যা ও দুর্যোগের দেশ নইÑআমরা এখন ফুটবলের দেশ। আমরা নারী সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের দেশ। আমরা আর পিছনে ফিরে যাব না, নারীদেরও পেছনে পড়ে থাকতে দেব না।’ এগিয়ে চলার পথে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমাদের প্রতি অটুট সমর্থনের বার্তা দেন বাফুফে সভাপতি, ‘১৮ কোটি মানুষ আপনাদের পাশে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি। আমরা অঙ্গীকার করছি আপনাদের সঙ্গে থাকার। আপনারা এগিয়ে যান, পিছনে ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই।’ তাবিথ জানান বাংলাদেশের লক্ষ্য এখন স্পষ্ট, ‘আপনাদের জন্য আমাদের থাকবে সব রকম প্রার্থনা, অভিজ্ঞতা আর সহায়তা। এই যাত্রা থেমে যাওয়ার নয়। এখন আমাদের একটি অঙ্গীকার, একটি স্লোগান, একটি ট্যাগলাইনÑমিশন অস্ট্রেলিয়া।’
উল্লেখ্য আগামী বছরের মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপে অংশ নেবে ১২টি দল। স্বাগতিকসহ ইতোমধ্যে চারটি দল পেয়ে গেছে মূলপর্বের টিকিট। যেখানে ভাল করলে সুযোগ থাকবে বিশ্বকাপে খেলার। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেই বিশ্বকাপে খেলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বড় তারকা ঋতুপর্ণা চাকমা। সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে তাদের সেই স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে হবে।