ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ

প্রতিদিন সংবাদপত্রে যে সংবাদটি অনিবার্য তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা যেন নিত্য দিনের ঘটনা। এমন কোন দিন নেই, যে দিন সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ আহত নিহত হচেছ না। প্রতিদিনই ঝড়ছে তাজা প্রাণ। রাস্তায় নামলেই মৃত্যুদূত তাড়া করছে যাত্রী বা পথচারীকে। এখনই সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিকার ও প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্ঘটনার কারণে করও আজানা নয়। কিন্তু সমস্যাটি হচ্ছে, সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হচেছ না। ওভারলোডিং, ওভারটেকিং, ওভারস্পিড এবং চালকের অসাবধনতাই সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। অনিরাপদ সড়ক এবং আইন অমান্য করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। রয়েছে আইনের দুর্বলতাও। অধিকাংশ দুর্ঘটনার দোষী ব্যক্তিরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার পেয়ে যায়। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার তেমন জনকাক্সিক্ষত উদ্যোগ চেখে পড়ে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা না কমে উল্টো বাড়ছে জ্যামিতিক হারে। তবে অতি সম্প্রতি হাইকোর্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের পরিবারের করা ক্ষতিপূরণ মামলায় এক যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। রায়ে তার পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা খতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। মালিক চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিতভাবে গাড়ি চালানোর ফলে দেশে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশের বিদ্যমান মোটর ভেহিকলস অধ্যাদেশ- ১৯৮৩ নামে একটি আইন রয়েছে। কিন্তু ওই আইন সম্পর্কে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো জানতো না। আইনটি সম্পর্কে না জানার কারণে ক্ষতিগ্রস্তরা কখনও আদালতে আসেনি। তবে এই রায়ের ফলে তাদের আদালতে আসার সুযোগ সৃষ্টি হলো। এখন থেকে কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির সম্মুখীন হলে আহত ব্যক্তি তার নিজের পক্ষে অথবা নিহত ব্যক্তির ক্ষেত্রে তার পরিবার এই আইনের অধীনে আদালতে আসতে পারবেন। এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এই রায় থেকে সবাই শিক্ষা নেবে। দোষী বা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর হলে ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে। সকলের সামগ্রিক চেষ্টা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। সচেতন হতে হবে আমাদের সাবইকে। মৃত্যুকে অগ্রাহ্য করার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ কারও কাম্য নয়। আমরা সবাই চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি। সড়ক দুর্ঘটনায় দেশে প্রতিদিন মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ নজিরবিহীন। এই নির্দেশ সাধারণ মানুষের জন্য একটা উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে। পল্লবী, ঢাকা থেকে
×