ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাল সবুজের বাহারী রঙের পোশাকে সেজেছিল নগরবাসী

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৭

লাল সবুজের বাহারী রঙের পোশাকে সেজেছিল নগরবাসী

এম শাহজাহান ॥ মহান বিজয় দিবস উদযাপনে লাল সবুজের বাহারি রঙের পোশাকে সেজেছিল নগরবাসী। দূর থেকে যে কাউকে দেখলে মনে হয়েছে, গায়ে পতাকা জড়িয়ে দিয়েছেন। ক্রেতা আকর্ষণ ও বিক্রি বাড়াতে পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর ছিল মূল্যছাড়ের ছড়াছড়ি। ‘বিজয়ের আনন্দে চলো মাতি উচ্ছ্বাসে’ স্লোগানে কোন কোন প্রতিষ্ঠান ৫০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড় দিয়েছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি বিজয় দিবসের পোশাক সামগ্রী বিক্রি হয়েছে। বিজয় দিবস উদযাপনে বাসাবাড়িতে ভাল খানাপিনার ব্যবস্থা রেখেছিলেন নগরবাসী। মুদিপণ্যের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দু’দিনে তাদের বেচাবিক্রি অনেক বেড়েছে। বেচাবিক্রি বাড়ার কথা জানিয়েছেন মাছ-মাংসের বিক্রেতারা। জানা গেছে, বিজয় দিবস সামনে রেখে এবার ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের প্রস্তুতি ছিল। তাদের বেচাকেনা চলবে চলতি মাসের শেষ নাগাদ। এছাড়া এ মাসে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড় উৎসব বড়দিন এবং ইংরেজী নববর্ষ (থার্টিফাস্ট) উৎসব রয়েছে। সব মিলিয়ে পুরোমাস পোশাক সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা থাকবে। এছাড়া বিজয় উৎসব পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে চলতে থাকবে। মূল্যছাড়ের কারণে বেচাবিক্রি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। শুধু বিজয় দিবসের জন্য ‘ইয়োলো’ নামের দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠান দুদিনের জন্য সব ধরনের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছে। এ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের পাশাপাশি ওরিয়ন ফুটওয়্যার, এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, বিশ্ব রং সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পণ্যের ওপর ছাড় দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ইয়োলোর বিক্রয়কর্মী আহসান হাবিব জানালেন, বিজয় দিবস উদযাপনে ক্রেতাদের জন্য বিশেষ পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়া হয়েছে। তাদের বেচাবিক্রি ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর কেন্দ্র করে নতুন নতুন বিজয়ের পোশাক তৈরি হলেও এগুলো বিক্রি হবে মাস জুড়েই। এছাড়া এ মাসে আরও দুটি উৎসব রয়েছে। সব মিলিয়ে ভাল ব্যবসা-বাণিজ্য হবে ডিসেম্বর মাসে। জানা গেছে, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস হওয়ায় কোন কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্যের ওপর শুধু ১৬ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। ওরিয়ন ফুটওয়্যার ১৬ শতাংশ ছাড় দিয়ে পণ্য বিক্রি করছে। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান ৪৭ শতাংশ ছাড় দিয়েছে। এছাড়া প্রাণ, বেঙ্গল প্লাস্টিক, বিআরবি কেবলস, প্রাইম ব্যাংক, স্কয়ার ও বসুন্ধরা গ্রুপ বিজয় দিবসে পণ্যের বিক্রি ও প্রচার বাড়াতে ফেসবুকে বিজয়ের চোখ ধাঁধানো বাহারি সব ছবি ছেড়েছে। এদিকে, বিজয় দিবস মানেই বাংলার ইতিহাস। লাল সবুজে দাগকাটা একটি অধ্যায়। এ কারণে বিজয় দিবস উদযাপনে ফ্যাশন হাউসগুলোর থাকে নানান আয়োজন। বাবা-মায়েরা অন্তত পোশাকেও সন্তানের মনে গেঁথে দিতে চান বিজয়ের গল্পগুলো। ফ্যাশনেবল তরুণ প্রজন্মেও ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের মধ্যে বিজয় দিবসের আমেজ ফুটে উঠে। লাল-সবুজের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, কখনও মাথার ব্যান্ডে আঁকা লাল-সবুজ পতাকা, কখনও হাতের ব্রেসলেটে লেখা বাংলাদেশ শব্দটিতে ফুটে ওঠে তাদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার দৃঢ়তা। বিজয় দিবসের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আট বছরের শিশু সন্তান মাহিয়াকে নিয়ে এসেছেন তার মা ফারজানা আখি। মা-মেয়ে দুজনের গাঁয়ে লাল সবুজের পোশাক। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এই উদ্যানে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁর সেই ভাষণ মাহিয়া মুখস্ত করে ফেলেছে। কিন্তু কোথায় দাঁড়িয়ে তিনি সেই ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থান দেখাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেয়েকে নিয়ে এসেছি। এখানেই জাতিরজনক স্বাধীনতার বীজ বুনে দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের বিজয়। আর এই বিজয়ের পরিচয় বহন করে আমাদের লাল সবুজ পতাকাটি। এই লাল সবুজই যেন আমাদের পরিচয়। লাল সবুজ রং আমাদের আত্মার সঙ্গে মিশ্রিত গৌরবের রং।
×