ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ৬

নারীদের ফসলের মাঠে কাজের বিরুদ্ধে মসজিদ থেকে মাইকিং

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭

নারীদের ফসলের মাঠে কাজের বিরুদ্ধে মসজিদ থেকে মাইকিং

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ১৩ ডিসেম্বর ॥ ফসল নষ্ট ও অসামাজিক কার্যকলাপের অজুহাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নারীদের ক্ষেত-খামারে (মাঠে) যাওয়া বন্ধ করতে মসজিদে বৈঠক ও মাইকে প্রচারের অভিযোগে ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাতেই ওই গ্রামে অভিযান চালিয়ে মসজিদের সভাপতি, সেক্রেটারি ও পেশ ইমামসহ ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার দুপুরে গ্রেফতারকৃত ৬ জনকে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুমারখালীর আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কুমারখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজীব আল রশিদ গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করলে বিজ্ঞ আদালত মসজিদের সভাপতি, সেক্রেটারি ও পেশ ইমামের ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন এবং অন্য আসামিদের জেল হাজতের প্রেরণের নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- কল্যাণপুর জামে মসজিদের সভাপতি মাওলানা মোঃ আলতাফ হোসেন (৪০), সেক্রেটারি মতিউর রহমান (৩৮), পেশ ইমাম আবু মুছাসহ (৩৬) আবুল হোসেন (৪০), আনছার (৫০) ও দাউদ সেখ (৩৮)। গত ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর কুমারখালীর শিলাইদহ ইউনিয়নের কল্যাণপুর জামে মসজিদে নারীদের ক্ষেত-খামারে যাওয়া বন্ধে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ মসজিদ কমিটির নেতাসহ বৈঠকে উপস্থিত ও জড়িতদের গ্রেফতার করে। পরে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপ্লব কান্তি সরদার বাদী হয়ে মসজিদ কমিটির নেতাসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। এ ব্যাপারে কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনুজ্জামান বলেন, নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার। নারীরা ক্ষেত-খামারে যেতে পারবে না এই মর্মে মসজিদ থেকে যে ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। তা প্রত্যাহার করে বুধবার সকালে পুনরায় মসজিদের মাইকে নারীরাও ক্ষেত-খামারে যেতে পারবেন এই মর্মে আরেকটি ঘোষণা প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিলাইদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালাহ্উদ্দিন খান তারেক বলেন, নারীরা মাঠে যেতে পারবে না এ ব্যাপারে মসজিদের বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেয়া এবং তা মসজিদের মাইকে প্রচার করা মোটেও উচিত হয়নি। উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে জরুরী আলোচনার নামে নারীদের ক্ষেত-খামারে যাওয়া বন্ধ করতে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, কল্যাণপুর জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা মোঃ আলতাফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান, পেশ ইমাম আবু মুছা, সহ-সভাপতি মজিবর রহমান মাস্টার, সিরাজ প্রামানিক প্রমুখ। ওই বৈঠকের শুরুতেই পেশ ইমাম আবু মুছা নারীদের ইচ্ছেমতো মাঠে যাতায়াত বন্ধের বিষয়ে তার বক্তব্য উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, নারীরা মাঠে গিয়ে উঠতি ফসলের ক্ষতি করে, নিজেরা নানা অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত হয় এবং মাঠে নারীদের একা পেয়ে অনেকে অসামাজিক কাজের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। এ ছাড়াও তিনি কোরান-হাদিসের আলোকে বক্তব্য উপস্থাপন করে নারীদেরকে ফসলের মাঠে যাওয়া বন্ধ করতে ও ফসল রক্ষার্থে মাঠ চৌকিদার নিয়োগের পরামর্শ দেন। বৈঠক শেষে নারীদের ফসলের ক্ষেতে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়। আর মসজিদের মাইকে নারীদের মাঠে যাওয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রচারের ঘটনা নিয়ে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় নারী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা নিন্দা এবং অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
×