ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাহিনীতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখাসহ রায়ে ৭ সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ নভেম্বর ২০১৭

বাহিনীতে পেশাদারিত্ব বজায় রাখাসহ রায়ে ৭ সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে বিদ্রোহের মতো পরিস্থিতি এড়াতে সৈনিকদের সঙ্গে অফিসারদের ‘ঔপনিবেশিক আচরণ ও ইগো’ থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছে উচ্চ আদালত। পিলখানায় হত্যা মামলার রায় ঘোষণায় হাইকোর্ট বলেছে, ‘সৈনিকরা কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও আত্মীয় এরা এদেশেরই সন্তান। যে কোন বাহিনীতে অধস্তনদের সঙ্গে উর্ধতনদের পেশাদারিত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত।’ বহুল আলোচিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার মামলায় রায় ঘোষণার সময় আদালত বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেনসহ তিন সদস্যের বৃহত্তর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার সময় এই মন্তব্য করে। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার। রবিবার থেকে মামলাটির রায় ঘোষণা শুরু করা হয়। রবিবার ও সোমবার দুই দিনই বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণার পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ (বর্তমান বিজিবি) মামলার রায়ে হাইকোর্ট সাতটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষণগুলোর মধ্যে রায়েছে-বিজিবির সম্মান ক্ষুণœ হয় এমন কোন কাজে তাদের নিয়োজিত না করা। ডালভাত কর্মসূচীর মতো উদ্যোগে তাদের অংশ নেয়া উচিত নয়। যে কোন বাহিনীতে অধস্তনদের সঙ্গে উর্র্ধতনদের পেশাদারিত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। বিজিবির কাঠামোতে বাহিনীর আইন অনুযায়ী সে সম্পর্ক প্রতিপালন করা প্রয়োজন। সেজন্য সময় সময় মতবিনিময় করা প্রয়োজন। পিলখানায় বিদ্রোহের আগে অধস্তনদের কিছু দাবিদাওয়া বিডিআরের উর্ধতনদের কাছে দেয়া হয়েছিল। তাদের দাবি বা কোন বিল বা পাওনাদি থাকলে তা পরিশোধে উদ্যোগ নেয়া। যদি কোন প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ থেকে থাকে, তাও প্রশমন করার উদ্যোগ নেয়া। এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দা বাহিনী ছিল। পিলখানায় সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার ছিল সংরক্ষিত। গোয়েন্দা বাহিনী বিদ্রোহের আগে কোন তথ্য দিতে কেন ব্যর্থ হয়েছে? এটা কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে দেখতে হবে বলে পর্যবেক্ষণে বলা হয়। বিচারপতি মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী রবিবার তাঁর পর্যবেক্ষণ পড়ে শোনান।এই রায়ে এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি পর্যবেক্ষণ রয়েছে। মূল রায়টি প্রায় ১০ হাজার পৃষ্ঠার। সোমবার রায় পড়তে গিয়ে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, তৎকালীন বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দারা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে, কেন তা আগে জানতে পারেননি। সেই ব্যর্থতা খুঁজতে একটি তদন্ত কমিটি করা দরকার। তিনি মহাপরিচালকের উদ্দেশে বলেন, কোন সমস্যা এলে তা তাৎক্ষণিক সমাধান করতে হবে। বিজিবির জোয়ানেরা কোন সমস্যা নিয়ে এলে তা মীমাংসা করতে হবে এবং বিজিবিতে সেনা কর্মকর্তা ও জোয়ানদের মধ্যে পেশাদারী সম্পর্ক থাকতে হবে। নজরুল ইসলাম প্রশ্ন করেন, কেন সে সময়ের বিডিআর ডালভাত কর্মসূচী নিল। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কর্মসূচী যেন না নেয়া হয়, সে ব্যাপারে বিজিবিকে সতর্ক করেন তিনি। আরেক বিচারপতি মোঃ শওকত হোসেন বলেন, কোন সেনা কর্মকর্তা সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে থাকবে না- এটাই ছিল বিদ্রোহে অংশ নেয়াদের মূল মনোভাব। তিনি জোয়ানদের সঙ্গে ঔপনিবেশিক (কলোনিয়াল) আমলের মতো ব্যবহার না করার কথা বলেন। তিনি বলেন, একই দেশ। এখানে সবাই ভাই ভাই। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাজার নিয়ন্ত্রণ বিডিআরের (বিজিবির আগের নাম) তত্ত্বাবধায়নে অপারেশন ডালভাতের মতো কর্মসূচী নেয়া ঠিক হয়নি। বিদ্রোহের আগে গোয়েন্দারা কেন এই সম্ভাবনার তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছিল তা তদন্ত করে দেখারও সুপারিশ করা হয়েছে রায়ে। রায়ে মোট সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে। * বিডিআরের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ডালভাত কর্মসূচীর মতো কর্মসূচী নেয়া উচিত নয়। * বাহিনীতে অধস্তনদের সঙ্গে উর্ধতনদের পেশাদারিত্বমূলক সম্পর্ক বজায় রাখা উচিত। বাহিনীর আইন অনুযায়ী সে সম্পর্ক প্রতিপালন করা প্রয়োজন। এজন্য সময় সময় মতবিনিময় করা প্রয়োজন। * পিলখানায় বিদ্রোহের আগে অধস্তনদের কিছু দাবিদাওয়া বিডিআরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। এ ধরনের আমলাতান্ত্রিকতা দূর করতে হবে। * বাহিনীতে প্রচ্ছন্ন ক্ষোভ থেকে থাকলে, জরুরী ভিত্তিতে তা প্রশমন করার উদ্যোগ নেয়া। * বাহিনীতে কারও কোন পাওনা থাকলে তাও দ্রুত পরিশোধ করা। * বিডিআরের নিজস্ব গোয়েন্দা থাকলেও বিদ্রোহের আগে তথ্য দিতে তাদের ব্যর্থতা তদন্ত করা।
×