ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কাস্টমস আমলে নিচ্ছে না

শাহজালালে রেড চ্যানেল না থাকায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

শাহজালালে রেড চ্যানেল না থাকায় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত

আজাদ সুলায়মান ॥ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে কোন ‘রেড চ্যানেল’ নেই। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রেড চ্যানেল নেই এটা অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে। রেড চ্যানেল না থাকায় শুধু গ্রীন চ্যানেল দিয়েই শুল্ক আদায় ও চোরাচালান ঠেকানোর কাজ চলছে। দুটো চ্যানেলের কাজ একটি চ্যানেল দিয়ে করার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, বার বার তাগিদ দেয়ার পরও রেড চ্যানেল চালু করা যাচ্ছে না। কাস্টমস নানা অজুহাতে তা আমলে নিচ্ছে না। অথচ রেড চ্যানেল চালু করা গেলে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে রাজস্ব আদায় বেড়ে যাবে অন্তত পাঁচগুণ। জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার প্রকাশ দেয়ান জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রীন চ্যানেলে বসেই রেড চ্যানেলের কাজ চলছে। এটা এত গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধু রাজস্ব আদায় করার জন্যই তো বিমানবন্দরে কাস্টমস মোতায়েন করা হয়নি। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে আগমনী যাত্রীদের জন্য শুধু একটা মাত্র গ্রীন চ্যানেল দিয়েই লাগেজ ব্যাগেজ চেক বা স্ক্যান করা হয়। এতে শুল্কযোগ্য আইটেম থাকলে তা ধরা হয় এবং শুল্ক নির্ধারণ ও আদায় করা হয়। এই একটি মাত্র চ্যানেলে দুটো স্ক্যানার রয়েছে। এক সঙ্গে যখন ৭/৮ টা ফ্লাইট নামে তখন যাত্রীরা গ্রীন চ্যানেলে এসে বড় ধরনের জটলার মুখে পড়ে। এ সময় অনেক যাত্রীকে চেক বা তার লাগেজ স্ক্যান করা সম্ভব হয়নি। এতে অনেক যাত্রী মালামাল নিয়ে দ্রুত চলে যান। তাদের আটক করার সুযোগ বা উপায় থাকে না। আইকাও-এর রুলস অনুযায়ী একটি আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টে আগমনী যাত্রীদের জন্য রেড ও গ্রীন নামের দুটো চ্যানেল থাকা আবশ্যক। দুটোর কাজই দুরকম। ইমিগ্রেশন থেকে বের হয়ে লাগেজ সংগ্রহ করে সরাসরি গ্রীন চ্যানেলে যাবে- সেইসব যাত্রী যাদের কাছে কোন ধরনের শুল্ক পরিশোধযোগ্য কোন আইটেম নেই। তাদের শতকরা রেনডম করা হয়। যদি কোন শুল্কযোগ্য মালামাল না থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যদি থেকে থাকে আর এই চ্যানেল দিয়ে পার হবার সময় ধরা পড়েন তাহলে জরিমানাসহ তাকে শুল্ক দিয়েই বের হতে হয়। অন্যথায় মালামাল জব্দ করা হয়। অন্যদিকে যাদের কাছেই শুল্কযোগ্য মালামাল থাকে তারা সরাসরি চলে যাবেন রেড চ্যানেল দিয়ে। রেড চ্যানেল কাউন্টারে যেই অফিসার থাকেন- তার কাছে সরাসরি ঘোষণা দেবেন কি কি মালামাল আছে। তখন কাস্টমস কর্মকর্তা ওই মালের শুল্ক ধার্য করে স্লিপ দেবেন যাতে যাত্রী পাশের ব্যাংকে গিয়ে তা পরিশোধ করে মালামাল নিয়ে চলে যেতে পারেন। এটাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টমস রুলস। এটা আইকাও-এরও শর্ত। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। বার বার তাগিদ দেয়া হলেও তা আমলে নিচ্ছে না ঢাকা কাস্টমস হাউস। এ অবস্থায় বর্তমানে শুল্কযোগ্য মালামালের যাত্রীও বের হয়ে যাচ্ছে গ্রীন চ্যানেল দিয়ে। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হচ্ছে। তারা ঘোষণা না দিয়েই সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে একই তালে বের হয়ে যাচ্ছে। তাদের আটকানোর কোন সুযোগ থাকছে না। পূর্ব ঘোষণা বা গতিবিধি সন্দেহ না হলে অনেকেই শুল্কযোগ্য বা চোরাচালানের মালামাল নিয়েই বের হয়ে যাচ্ছে। শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে কোন রেড চ্যানেল নেই। রেড ও গ্রীন চ্যানেলের কোন পৃথক নির্দেশিকাও নেই। তবে পাশের একটা গেটে রেড চ্যানেল লেখা রয়েছে। সেই গেটটাও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এ বিষয়ে শাহজালালের নিরাপত্তা বিভাগ সূত্র জানায়, বছর কয়েক আগেও রেড চ্যানেলের যাত্রীদের আলাদা স্ক্যানার ও ডেস্ক না থাকলেও তাদের বের হওয়ার জন্য শুধু আলাদা একটা গেটের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই গেটটা কখনই খুলে দেয়া হয়নি। এতে রেড ও গ্রীন উভয়যাত্রীই এখন একই গেট দিয়ে বের হচ্ছে। এ সম্পর্কে বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইউসুফ জনকণ্ঠকে বলেন, দুনিয়ার সব দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ সংগ্রহের পর যাত্রীর কাস্টমস হলে দুটো চ্যানেলের কাউন্টার দেখতে পাান। দুটোর জন্য পৃথক পৃথক নির্দেশিকাও থাকে। কিন্তু শাহজালালে এ ধরনের কিছু নেই। সবাই যাচ্ছে একই গ্রীন চ্যানেল দিয়ে। ফলে চোরাকারবারিরা সুযোগটা নিচ্ছে। শুল্কযোগ্য কোন লাগেজের যাত্রী যদি ঘোষণা না দিয়ে রেড চ্যানেলের পরিবর্তে সরাসরি গ্রীন চ্যানেল দিয়ে বের হবার সময় ধরা পড়ে তাহলে তার শাস্তি ও জরিমানা অনেক বেশি। এজন্যই যদি রেড চ্যানেল থাকত তাহলে যাত্রীরা স্বেচ্ছায় ওই ডেস্কে গিয়ে কথা বলত এবং ঘোষণা দিয়ে শুল্ক পরিশোধ করার সুযোগ পেত। এতে রাজস্ব বাড়ত অনেক। অথচ এই রেড চ্যানেল চালু করতে বা খুব বেশি জনবল বা ব্যয়ও লাগে না। মাত্র একটা পৃথক স্ক্যানার ও একটা ডেস্কের দুজন অফিসার দেয়া হলেই কার্য সিদ্ধি হয়। এতে সরকারের রাজস্বও এক লাফে বেড়ে যাবে দশগুণ। এটা আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বার বার বিভিন্ন বৈঠকে বললেও কাস্টমস তা আমলে নিচ্ছে না। কেন নিচ্ছে না তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার প্রকাশ দেওয়ান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথমত আমাদের এত জনবল ও স্ক্যানার নেই। দ্বিতীয়ত শুধু রাজস্ব বাড়ানোই এয়ারপোর্টের কাজ নয়। একটা চ্যানেল দিয়েই দায়িত্ব পালন করা যায় তাহলে আর দরকার কি ?
×