ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পেঁয়াজের বাজার আবারও অস্থির

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

পেঁয়াজের বাজার আবারও অস্থির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন পেঁয়াজ উঠতে বাকি আর সপ্তাহখানেক। ইতোমধ্যেই বাজারে এসেছে পেঁয়াজের পাতা। দাম সহনীয়; বিক্রিও হচ্ছে ভাল। এরপরও অস্থির হয়ে উঠেছে পেঁয়াজের বাজার। প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ এবার ৮০ টাকা নয়, ৮২ টাকাও নয়; এক লাফে ৮৫ টাকা। মৌসুমের শুরুতেই মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের এই মূল্যবৃদ্ধিতে বিস্মিত ক্রেতারা। বিক্রেতারা আগের মতোই সেই একই কথা বলছেন, ‘সাপ্লাই নাই’। তাই দাম বেড়েছে। তবে ক্রেতাদের একটি বড় অংশের অভিমত, সরকারের মনিটরিংয়ের অভাবই পেঁয়াজের এই মূল্য বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ। রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি দেশী পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকায়। আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বন্যায় পচে যাওয়া এবং আমদানি-পরবর্তী বাজারজাত সমস্যার কারণে বাজারে সৃষ্ট পেঁয়াজের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। এই সঙ্কট কাটাতে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশের আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, ভারত থেকে সড়কপথে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারজাত করতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২০ দিন। তাই বর্তমানে বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে, তা মূলত এখন থেকে ১৫/২০ দিন আগের আনা। সে অনুযায়ী তখন ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিল মাত্র ২৬ টাকা। এ সব কারণের পরে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে যাওয়ার পেছনে সবশেষে কাজ করেছে এক শ্রেণীর সিন্ডিকেটের অতি মুনাফার লোভ। দেশে উৎপাদনের কমতি দেখে অনেক আমদানিকারক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও প্রধান রফতানিকারক দেশ ভারত বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি করছে প্রতিকেজি ৩০ থেকে ৩১ টাকায়, সেই পেঁয়াজ দেশে বিক্রি হচ্ছে প্রায় তিনগুণ দামে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২২ থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ১৮ থেকে ১৯ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে উৎপাদন হয়। চাহিদার বাকি চার থেকে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করা হয়। মূলত এ আমদানিকৃত ৪/৫ লাখ টন পেঁয়াজই বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে। দেশে বর্তমানে তাহেরপুরী, বারি পেঁয়াজ-১ (তাহেরপুরী), বারি পেঁয়াজ-২ (রবি মৌসুম), বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ফলে বছরজুড়েই কোন না কোন জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট কোন মৌসুমে এসে পেঁয়াজের সরবরাহ কমার আশঙ্কা কম। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক বলেন, বৃষ্টিতে দেশের অভ্যন্তরে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। দাম এমনিতেই কমে যাবে। এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। রাজধানীর শ্যামবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী আরিফুল হক বলেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা তো আর কমেনি। চাহিদামতো পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। তাই দাম বেড়েছে। বিষয়টিকে স্বাভাবিক নিয়ম বলে জানান আরিফুল হক। পেঁয়াজ আমদানিকারক গোলাম মোস্তফা জানান, সরকারের বাজার পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও বাজার মনিটরিংয়ের গাফিলতি এই সময়ে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ার কারণ। সরকারের লোকজন ঠিকমতো বাজার, আবহাওয়া ও পরিবেশ পরিস্থিতি মনিটরিং করলে এ সমস্যার সৃষ্টি হতো না। এ সময়ে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়ে ঠিক, কিন্তু তা এতটা নয়।
×