ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেতনের ১৬ গুণ বেশি ওভারটাইম

চট্টগ্রামে সমুদ্রগামী নৌযান নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৪ নভেম্বর ২০১৭

চট্টগ্রামে সমুদ্রগামী নৌযান নিয়ন্ত্রণে বিশৃঙ্খলা

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ দেশে পণ্য আমদানির পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে দেশী ও বিদেশী পতাকাবাহী জাহাজ চলাচল সংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব সমুদ্রগামী জাহাজের পাশাপাশি ট্রলার, কোস্টাল জাহাজ, কোস্টাল কার্গো এবং ইঞ্জিনচালিত নৌযানের চলাচল ও যাবতীয় কার্যক্রম দেখভালের বিষয়টি নিয়ে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ফলে একদিকে যেমন নৌ দুর্ঘটনা বাড়ছে, তেমনি লাইসেন্স জটিলতাসহ অন্যান্য বিষয়ের ক্ষেত্রের দিকগুলোও যেনতেনভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, নৌপরিবহন অধিদফতরের অধীনে চট্টগ্রামে রয়েছে নৌ বাণিজ্য অধিদফতর। আর এ নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের অধীনে রয়েছে খুলনায় একটি সাব-অফিস। এ দুটি অফিসের সমুদ্রগামী জাহাজ ও ট্রলার, কোস্টাল কার্গো, কোস্টাল জাহাজ ও ইঞ্জিন বোটের সার্ভে কার্যক্রম যথাযথভাবে সম্পাদিত হচ্ছে না। অথচ এসব কাজের বিপরীতে চট্টগ্রামের নৌপরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রতি মাসে তার সরকার নির্ধারিত বেতনের চেয়ে প্রায় ১৬ গুণ বেশি ওভারটাইম গ্রহণ করার অভিযোগ উঠেছে। অপরদিকে, এ দফতরের অধীন খুলনায় অবস্থিত সাব-অফিসে এ জাতীয় নৌযানের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে চতুর্থ শ্রেণীর একজন এলডিএ’র (লোয়ার ডিভিশন এ্যাসিস্ট্যান্ট) স্বাক্ষরে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ২৪শ’ এবং মংলা বন্দর দিয়ে তিন শতাধিক সমুদ্রগামী জাহাজের চলাচল রয়েছে। এর পাশাপাশি রয়েছে কোস্টাল জাহাজ, কোস্টাল কার্গো, ট্রলার এবং ইঞ্জিনচালিত নৌযানসমূহ। এসব জাহাজের ফিটনেস ও ক্যাপ্টেন, ক্রুদের এনওসি প্রদানের বিষয়টি মুখ্য একটি বিষয় হলেও সংস্থার উর্ধতন কর্মকর্তাদের রহস্যজনক উদাসীনতার কারণে তা দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে। জাহাজের সার্ভে কাজ সম্পাদনের কাজটি একজন সার্ভেয়ার ইঞ্জিনিয়ার বা নটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের। কিন্তু বিগত আট বছর ধরে খুলনার নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের সাব-অফিসে এ কাজটি করছেন একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী বা এলডিএ। নৌপরিবহন অধিদফতর থেকে একজন নটিক্যাল সার্ভেয়ারকে পদায়ন করা হয় আট বছর আগে। কিন্তু তিনি ওই পদে যোগ না দিয়ে উপরন্তু ঢাকা সদর দফতরে চীফ নটিক্যাল সার্ভেয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য দফতরে প্রিন্সিপাল অফিসারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রয়েছেন। মূল দায়িত্ব প্রিন্সিপাল অফিসারের। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সমুদ্রগামী জাহাজ, ট্রলার, কোস্টাল জাহাজ ও কার্গো এবং ইঞ্জিনচালিত নৌযানের সার্ভে অফিসে বসেই প্রদান করে থাকেন। ফলে লাইফ টাইম নেই এমন নৌযানও ফিটনেস পেয়ে যাচ্ছে অহরহ। কর্মকর্তা সঙ্কট দেখিয়ে প্রিন্সিপাল অফিসার প্রতি মাসে বেতনের চেয়ে ১৬ গুণেরও বেশি অর্থ ওভারটাইম হিসাবে গ্রহণ করছেন। দিনের পর দিন বিষয়টি চলে এলেও এ নিয়ে নৌ বাণিজ্য অধিদফতরের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কোন ভ্রƒক্ষেপ নেই। পদোন্নতির ক্ষেত্রেও ঘাপলা ॥ অভিযোগ উঠেছে, খুব সহসা চট্টগ্রাম নৌ বাণিজ্য অধিদফতরে পদোন্নতি দানের একটি বিষয় রয়েছে। এক্ষেত্রে নিম্নমান সহকারী পদে কনিষ্ঠ একজন পিয়নকে জ্যেষ্ঠ দুজনকে ডিঙ্গিয়ে পদোন্নতি প্রদানের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছেন। ইতোপূর্বে তিনবার উক্ত পিয়নকে পদোন্নতি দেয়ার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। এ ধরনের দুটি ঘটনায় পদোন্নতি কমিটি প্রধান ও সাবেক মহাপরিচালক নৌ বাণিজ্য দফতরের মুখ্য কর্মকর্তাকে সতর্ক করেও দেন। কিন্তু সবই যেন কাগজে হয়ে আছে। একই কায়দায় লাইট হাউসের জন্য একজন বাতিরক্ষক নেয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে একজন কর্মকর্তার আত্মীয়র নাম চলে এসেছে। ওই কর্মকর্তা আবার পদোন্নতি কমিটির সদস্য সচিব ও পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মূল্যায়নও করে থাকেন।
×