ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নবান্ন উৎসব

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৩ নভেম্বর ২০১৭

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ নবান্ন উৎসব

ঋতুর পালাবদলে এখন প্রকৃতিতে হাজির হয়েছে হেমন্ত। ঋতু পরিক্রমায় এ চিরাচারিত নিয়মে এখন এসেছে হেমন্ত। সাঁঝের পরে হালকা কুয়াশায় জোনাকিরা জ্বলে-নেভে, সেই আলো আঁধারি কুয়াশা গায়ে মেখে হেমন্ত আসে। বড় কুণ্ঠাজড়িত পদক্ষেপ তার। মাঠে মাঠে কমলা কমলা রোদে এখন সোনা রাঙা ধান। প্রকৃতিতে সবুজ-হলুদ রঙের শোভা। হেমন্ত এলেই কৃষকের মন ভরে ওঠে অপার আনন্দে। কৃষকের গোলা ভরে উঠবে আমন, আউশ ধানে। নতুন হৈমন্তিক ধানের গন্ধে মৌ মৌ করা চারপাশে কেবল উৎসবের আমেজ। বাড়ি বাড়ি নতুন চালের পিঠা। রাত জেগে মা- চাচিদের উঠোন আলো করে পিঠা বানানোর নানা রকমের আয়োজন। নবান্নের নতুন ধানের পিঠে-পুলির স্বাদই আলাদা। কত না মজার সে পিঠা। পাটিসাপটা, ভাপা, চিতই, নকশি, ফুলছুরি, রসপিঠা, দুধকলি পিঠা, মালপোয়া পিঠা ইত্যাদি। পিঠার আটা তৈরি হয় ঢেকিতে। কেনা হয় গুড়, নারিকেল। বাংলার প্রধান কৃষিজ ফসল কাটার ক্ষণ হেমন্ত। কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন আচার অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হয়, নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। নবান্ন মানে নতুন অন্ন, অগ্রহায়ণে আমন ধান পাকার পর সাধারণত এ উৎসব পালন করা হয়। নবান্ন হেমন্তের প্রাণ। স্মরণাতীতকাল থেকে ১ অগ্রাহায়ণকে বলা হয়ে থকে ‘বাৎসরিক সুদিন’। ‘অগ্র’ অর্থ প্রথম। আর ’হায়ন’ অর্থ মাস। এ থেকেই ধারণা করা হয় যে, এক সময় হয়ত অগ্রহায়ণই ছিল বাংলা বছরের প্রথম মাস। এ সময় গ্রামে প্রায় বাড়ির মেয়ে-জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়। মেয়ে বাপের বাড়িতে নাইওর আসে। ঘরে ঘরে পিঠা, পুলি, পায়েস ক্ষীর এবং হরেক রকম মিষ্টান্নের আয়োজন করা হয়। ঘরে ঘরে কুটুম আসে। এ বাড়ি ও বাড়ি পিঠা দেয়া-নেয়া হয়। উৎসবের আনন্দে মাতোয়ারা হয় এ সময় পুরো গ্রাম বাংলা। নতুন চালের ভাত মুখে দেয়ার আগে মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়। শিরনি হাতে বাড়ি ফিরে গ্রামের ছেলে-বুড়ো সবাই। প্রতিবেশীকে মিষ্টিমুখ করিয়ে নির্মল আত্মতৃপ্তিতে ভরে ওঠে কৃষকের মন। এ সময় গ্রামে গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় মৌসুমি মেলা। এসব মেলায় দল বেঁধে ছেলে-বুড়ো সবাই যায়। গ্রামের জামাইরা মেলায় বাজার করে। এসব মেলায় নানা ধরনের নকশা করা পিঠা, মিষ্টি, ম-া, মিঠাই, নাড়ু সন্দেশ, নারিকেলসহ মাছ, মাংসও পাওয়া যায়। শখের মৃৎশিল্প, মাটির তৈরি তৈজসপত্র, কাঠ-বাঁশ, বেতের হস্তশিল্প কেনার হিড়িক পড়ে যায় এসব মেলাজুড়ে। নবান্নের মেলা গ্রামের সব শ্রেণী পেশার মানুষের পদভারে মুখরিত হয়। নবান্ন আমাদের ঐতিহ্যের শস্য উৎসব। সবশেষে নবান্নের কাছে প্রার্থনা, প্রতি নবান্নে আমাদের প্রতিটি সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে। সান্তাহার, বগুড়া থেকে
×