ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলা পরিকল্পনায় সরাসরি জড়িত ছিল

এবার নব্য জেএমবির ‘হিটম্যান’ করিম গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২১ নভেম্বর ২০১৭

এবার নব্য জেএমবির ‘হিটম্যান’ করিম গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হামলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়নের সঙ্গে জড়িত আরও এক জঙ্গী পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম টিমের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। এর আগে অর্থায়নে জড়িত এক জঙ্গীর পিতা-মাতা ও এক বোনকে গ্রেফতার করা হয়। অর্থায়নে জড়িত আরও এক জঙ্গীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যদিও গোয়েন্দা তৎপরতায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে জঙ্গী হামলার সে পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। অভিযানের মুখে আত্মঘাতী হয়ে রাজধানীর পান্থপথে হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে নিহত হয় হামলা করতে আসা জঙ্গী সাইফুল ইসলাম। রবিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান আজাদ মসজিদের সামনে থেকে তানভীর ইয়াসিন করিমকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। করিম জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির সদস্য। তার ছদ্মনাম হিটম্যান-জিন। এ নামেই সে সংগঠনে পরিচিত। ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী জানান, আটক তানভীর ইয়াসিন করিম (৩২) জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের সক্রিয় নেতা। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম টিম সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট রাত চারটার দিকে ধানম-ির ৩২ নম্বরের খুব কাছে পান্থপথের মূল সড়কে অবস্থিত ৫৭/১/সি নম্বর চারতলা ওলিও ইন্টারন্যাশনাল হোটেলে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ওই জঙ্গীকে পুলিশ আত্মসর্মপণের জন্য আহ্বান জানায়। পরদিন ১৫ আগস্ট সকাল দশটার দিকে আত্মসর্মপণ না করে শরীরে বেঁধে রাখা শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হয়ে নিহত হয় ওই জঙ্গী। বিস্ফোরণে হোটেলের দেয়াল, দরজা, জানালা ও গ্রিল উড়ে কয়েক শ’ গজ সামনে রাস্তায় গিয়ে পড়ে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, নিহত জঙ্গীর নাম সাইফুল ইসলাম। জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে আত্মঘাতী হামলা করে শত শত মানুষকে হত্যার পরিকল্পনা ছিল তার। সাইফুল ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পরবর্তীতে সে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী (ফিদায়ী) স্কোয়াডের সদস্য হয়। সাইফুল বিস্ফোরক ভর্তি একটি ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে হোটেলটির ৩০১ নম্বর কক্ষে উঠেছিল। ধানম-ি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে ১৫ আগস্টের সমাবেশে হামলার পরিকল্পনা ছিল তার। হোটেলের বারান্দা থেকে ৩২ নম্বরের দিকে যাওয়ার মিছিলে হামলার পরিকল্পনাও ছিল তার। পরবর্তীতে শরীরে বোমা বেঁধে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেছিল সাইফুল। সাইফুলের পিতা আবুল খায়ের মোল্লা। বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার সাহস ইউনিয়নের নোয়াকাঠি গ্রামে। পিতা নোয়াকাঠির মাঠেরহাট মসজিদের ইমাম। পাশাপাশি সাহস ইউনিয়নের জামায়াতের কোষাধ্যক্ষ। খুলনার সরকারী বিএল কলেজে পড়াকালীন সাইফুল জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়ে। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সাইফুলকে আত্মঘাতী হামলার জন্য অর্থায়নকারী আকরাম হোসেন খান নিলয়, তার পিতা-মাতা ও এক বোন এবং গ্রেফতার তানভীর ইয়াসিন করিমের সন্ধান পায়। গ্রেফতার চারজন ও পলাতক একজনের অর্থায়নে সাইফুল শোক দিবসের অনুষ্ঠানে খুলনা থেকে হামলা করতে এসেছিল। সঙ্গে নিয়ে এসেছিল অর্থায়নকারীদের টাকায় কেনা বিপুল বিস্ফোরক, সুইসাইডাল ভেস্ট ও বোমা। মামলা তদন্তের ধারাবাহিকতায় গত ১০ নবেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখা ও বগুড়া জেলা পুলিশের সম্মিলিত অভিযানে রাজধানীর গুলশানের ১-এর ১২৭ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির ডি-৪ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে গ্রেফতার হয় হামলার মূল পরিকল্পনাকারী আকরাম হোসেন খান নিলয়ের পিতা আবু তুবার খান (৫৬), তার স্ত্রী সাদিয়া হোসনা লাকী (৪৬) ও মেয়ে তাজরীন খানম শুভ (২৯)। গ্রেফতাররা টাকা দিয়ে সাইফুলকে খুলনা থেকে ঢাকায় পাঠানোসহ যাবতীয় খরচের ব্যবস্থা করেছিল। নিলয়ের মাধ্যমে তার পিতামাতা ও বোন নব্য জেএমবিতে যোগ দেয় বলে পুলিশ জানায়। যোগদানের পর থেকেই তারা জঙ্গী সংগঠনটিকে আর্থিক সহায়তা করে আসছিল। তারা দলের ফান্ড সংগ্রহ করত। সেই টাকা সংগঠনের সদস্যদের এবং বিভিন্ন অপারেশন চালানোর জন্য ব্যয় করা হতো। যদিও গত ৮ নবেম্বর গুলশান এলাকা থেকে করিম ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রকাশনা সংস্থার মালিক তানভীর ইয়াসিন করিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছিল।
×