ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

আরণ্যকের পঁয়তাল্লিশে পুষ্প ও মঙ্গল আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৩ অক্টোবর ২০১৭

আরণ্যকের পঁয়তাল্লিশে পুষ্প ও মঙ্গল আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রাটা শুরু হয়েছিল বহুবছর আগে। ১৯৭২ সালে যুদ্ধোত্তর স্বাধীন দেশে সংস্কৃতিচর্চার তাগিদে গড়ে ওঠে নাট্যদল আরণ্যক। নাটক শুধু বিনোদন নয়/শ্রেণী সংগ্রামের সুতীক্ষ্ন হাতিয়ার স্লোগানে যাত্রা করা দলটি নাটকের আশ্রয়ে বলেছে সমাজ পরিবর্তনের কথা। কল্যাণময় সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অঙ্গীকারে মঞ্চে এনেছে অনেকগুলো দর্শকনন্দিত নাটক। সময়ের পরিক্রমায় সেই নাট্যদলটি পূর্ণ করল প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর। সাফল্যের এ উদযাপনে দলের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পুষ্প ও মঙ্গল আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব শিরোনামের আয়োজনটির সূচনা হলো রবিবার। আরণ্যকের দর্শকনন্দিত প্রযোজনার সঙ্গে উৎসবে ঠাঁই পেয়েছে নরওয়ে, ইরান, হংকং ও ভারতসহ মোট আটটি নাট্যদলের নাটক। অমানবিকতার বিরুদ্ধে সাম্যের সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে রবিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে উৎসবের উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন অভিনয়শিল্পী ও শহীদ মুনীর চৌধুরীর সহধর্মিণী লিলি চৌধুরী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত ড. আব্বাস ভেইজি দেহনভি ও নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিডসেল ব্লেকেন। সম্মানিত অতিথি ছিলেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উৎসব ঘোষণার বক্তব্য রাখেন আরণ্যকের দলপ্রধান নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন আরণ্যকের প্রধান সম্পাদক মান্নান হীরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে লিলি চৌধুরী বলেন, নাট্যজীবনের অনেকদিন পেছনে ফেলে এসেছি। ঝঞ্ঝাবহুল জীবনের কত ঘটনা! ১৯৯২-৯৩ সালের পর আমি আর নাট্যাঙ্গনে আসতে পারিনি। এতদিন পরও আরণ্যক আমাকে মনে রেখেছে, আমি কৃতজ্ঞ। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, স্বাধীনতা উত্তর নাট্যধারায় দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যচর্চা শুরু করেছিল যেসব দল, আরণ্যক তার অন্যতম। আরণ্যক কখনও তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়নি। আমরা আরণ্যক বলতে বুঝি মামুনুর রশীদ। তার পুরো জীবনজুড়েই যেন আরণ্যক। সিডসেল বেলকেন বলেন, সংস্কৃতির সঙ্গে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। সামাজিক-অর্থনৈতিক নানান প্রেক্ষাপটে সংস্কৃতি পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। নাটক তারই একটি অংশ। ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু সংস্কৃতি আর নাটক কিন্তু দু’দেশের মানুষকে এক বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারে। এই উৎসবটি নরওয়ে আর বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। আব্বাস ভেইজি দেহনভি তার বক্তব্যে ইরান ও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনের কথা জানিয়ে দু’দেশের মধ্যকার সংস্কৃতিবিনিময় আরও জোরদার করার প্রস্তাব রাখেন। উৎসব ঘোষণায় মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা যে শিল্পের চাষই করি না কেন, শেষ কথায় শিল্পভুবনে তা একটি ফুল হয়েই ফুটে থাকে। তেমনি আরণ্যক ৪৫ বছরে সেই ফুলের চাষ করে আসছে। যুক্ত হয়েছে মঙ্গল কামনা। সমাজের বৈষ্যমের বিরুদ্ধে আরণ্যক ঘোষণা করেছে শ্রেণী সংগ্রামের অমোঘ বাণী। মানব কল্যাণের শেষ কথা হচ্ছে শ্রেণীহীন ও শোষণহীন সমাজ বিনির্মাণ। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় আরণ্যকের নাটক ‘ইবলিশ’। রচনার পাশাপাশি প্রযোজনাটির নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ। আজ সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনের সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে আরণ্যকের প্রযোজনা ‘ময়ূর সিংহাসন’। মান্নান হীরা রচিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শাহ আলম দুলাল। এছাড়াও উৎসবের বিভিন্ন দিনের সন্ধ্যায় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবেÑ আরণ্যকের নাটক ‘রাঢ়াঙ’, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরের ঋত্বিক নাট্যদলের ‘আঁধারে সূর্য’, আগরতলার নাট্যভূমির ‘রাইমা সাইমা’, শান্তিপুরের শান্তিপুর সাংস্কৃতিক দলের ‘বৃষ্টি বৃষ্টি’, আলীপুরের প্রাচ্য নাট্যদলের ‘সখারাম’, কলকাতার আয়ন্দা নাট্যদলের ‘অনুশোচনা’। ২৬ অক্টোবর জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হবে নরওয়ের ড্রাগ প্রোডাক্সজোনের নাটক ‘হেরিটেজ’। ২৭ অক্টোবর মঞ্চস্থ হবে ইরানের ভারবাটিম নাট্যদলের প্রযোজনা ‘মানাওস’। ২৮ অক্টোবর নন্দন মঞ্চে পরিবেশনা উপস্থাপন করা হবে হংকং থেকে আসা এশিয়ান পিপলস থিয়েটার সোসাইটি। প্রতিদিন নাটক মঞ্চায়নের আগে জাতীয় নাট্যশালার লবিতে আরণ্যক নাট্যদলের নাটিকা প্রদর্শিত হবে। উৎসবের আওতায় আরও রয়েছে অভিনয় কর্মশালা ও নাট্য আড্ডা।
×