ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশালে ১৫ কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি বেহাত

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৬ অক্টোবর ২০১৭

বরিশালে ১৫ কোটি টাকার সরকারী সম্পত্তি বেহাত

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সরকারী কর্মকর্তা হয়েও ভূমিদস্যুদের পক্ষে ও সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার ঘটনায় নগরীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। অসৎ উপায়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সরকারী দায়িত্বশীল ওই কর্মকর্তার সহযোগিতায় ১নং খাস খতিয়ানের জন্য প্রস্তাবিত বরিশাল নগরীর ২৫নং ওয়ার্ডের রুপাতলী মৌজার (র‌্যাব-৮ এর স্থায়ী কার্যালয়ের সামনে) ৭২ শতক সম্পত্তি সম্প্রতি ভূমিদস্যুদের নামে রেকর্ড সংশোধনের আদেশ প্রদান করা হয়। এতে করে একমাত্র সরকারের প্রাপ্য প্রায় ১৫ কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হতে চলেছে। এ ঘটনায় সচেতন নগরবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে জরুরী ভিত্তিতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে ওই সরকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ভূমিদস্যুদের কবল থেকে মালিকবিহীন হিন্দু সম্প্রদায়ের (খ) তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ও ১নং খাস খতিয়ানের জন্য প্রস্তাবিত সম্পত্তি রক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে, রুপাতলী মৌজার জেএল ৫৬, এসএ ১৮৫০ খতিয়ানের ১১৪৬নং দাগের ৭২ শতক সম্পত্তির মূল মালিক রুপাতলী এলাকার হারান চন্দ্র পালের পুত্র যতীন্দ্র নাথ ও জিতেন্দ্র নাথ। দীর্ঘদিন থেকে যতীন্দ্র নাথ ও জিতেন্দ্র নাথ এবং তাদের কোন বৈধ ওয়ারিশের খোঁজ না থাকায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার ওই সম্পত্তির ওপর দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় কতিপয় ভূমিদস্যুর। বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ও রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দেশপ্রিয় চক্রবর্তীর ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বরের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এসএ রেকর্ডীয় মালিক যতীন্দ্র নাথ ও জিতেন্দ্র নাথের ৭২ শতক সম্পত্তি ৫৪ ধারায় ১৯৬০-৬২ সালের ৩৯১২ নং নামজারী মামলায় ১৯৬২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তারিখের আদেশে ওই সম্পত্তি জনৈক মেছের উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র আব্দুল মজিদ হাওলাদারের নামে ভুল নোট (ডিগ্রী) দেখা যায়। পরবর্তীতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তার লিখিত আদেশে তালাস অনুসন্ধান করে দেখতে পান ৫৪ ধারায় ১৯৬০-৬২ সালের ৩৯১২নং কেটি নামজারি কোন মামলাই হয়নি। সরেজমিন তদন্তে উল্লিখিত খতিয়ানের এসএ রেকর্ডীয় মালিকগণ ও তাদের কোন বৈধ ওয়ারিশ না পাওয়ায় ৭২ শতক সম্পত্তি ‘খ’ তফসিলভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত ছিল মর্মে দেশপ্রিয় চক্রবর্তী বরিশাল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ২০১৫ সালের ১০ মে এক আদেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইলিয়াছুর রহমান তৎকালীন তহশিলদার ও সার্ভেয়ার কানুনগোর সরেজমিন তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ৭২ শতক ভূমি ৯২ ধারা মোতাবেক খাস করার প্রস্তাব দেন। তার (সহকারী কমিশনার) প্রস্তাবের ভিত্তিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মোঃ শহিদুল ইসলাম সরেজমিন তদন্ত করেন। ঘটনাস্থলে বসেই জেলা প্রশাসক মালিক বিহীন এবং তাদের কোন বৈধ ওয়ারিশ না থাকায় ‘খ’ তফসিলভুক্ত পুরো ৭২ শতক অর্পিত সম্পত্তি ৯২ ধারার বিধান মোতাবেক ১নং খাস খতিয়ানের আওতায় নেয়ার জন্য সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রস্তাব দিতে বলেন। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে প্রস্তাবও দেয়া হয়। ফলে ওই সম্পত্তির একমাত্র মালিক সরকার। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বিষয়টি জানতে পেরে গত ১২ অক্টোবর বর্তমান ও সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবুল কালাম তালুকদার, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবীর, সদর ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ আক্তারুজ্জামান, তহশিলদার দীপক কুমার চ্যাটার্জীসহ অন্য কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরী বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ১৩ অক্টোবর উল্লিখিতরা সরেজমিন পরিদর্শন করে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে খোঁজখবর নিয়েছেন। এ বিষয়ে সার্বিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
×