ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভাঙ্গুড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সঙ্কট ॥ সেবা ব্যাহত

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ভাঙ্গুড়া  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সঙ্কট ॥ সেবা ব্যাহত

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১১ অক্টোবর ॥ ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সঙ্কটে চিকিৎসাসেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। চিকিৎসক সঙ্কট, এ্যাম্বুলেন্সের অভাব, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবসহ নানা কারণে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাসেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি দু’বছর পূর্বে স্ব^াস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আনুষ্ঠানিকভাবে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার দু’বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনিক অনুমোদন পায়নি। হাসপাতালে প্রশাসকসহ ১৫টি পদের বিপরীতে মেডিক্যাল অফিসার আছেন মাত্র ৪ জন। প্রায় দু’মাস পূর্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ শাহাদত হোসেন পদোন্নতির কারণে অন্যত্র বদলি হলেও সেখানে এখনও কাউকে পদায়ন করা হয়নি। ফলে তিনজন মেডিক্যাল অফিসারের মধ্যে ডাঃ হালিমা খানম ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকায় দাফতরিক ও বিভিন্ন কাজে প্রায় দিনই ব্যস্ত থাকেন। তাই মাত্র তিনজন ডাক্তার দিয়ে প্রতিদিন শতশত রোগীর চিকিৎসাসেবা দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা রোগীদের সেবা পেতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক দিন থেকেই এ হাসপাতালে রয়েছে একটি আধুনিক অপারেশন থিয়েটার। এখানে রয়েছে কোটি টাকা মূল্যের অপারেশনের যন্ত্রপাতি। তবে দু-একটি সিজারিয়ান ছাড়া আজ পর্যন্ত কোন অপারেশন হয়নি। কাজে আসেনি আধুনিক যন্ত্রপাতি। জনগণ বছরের পর বছর সেবা বঞ্চিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় সেই অপারেশন যন্ত্রপাতির ওপর ধুলো-ময়লার স্তর জমেছে। অভিযোগ রয়েছে, এখানকার নার্সরা সিজার করার জন্য কমিশনের বিনিময়ে প্রসূতিকে ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। হাসপাতালে নেই কোন গাইনোকলজিস্ট, সার্জন ও এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার। তাই সিজার ও অন্যান্য অপারেশন হয় না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ আর সরকারী এ হাসপাতালের সেবার দুর্বলতার কারণে অলি-গলিতে গড়ে উঠছে ক্লিনিক। প্রতিদিন সেসব ক্লিনিকে চলছে সিজারসহ বিভিন্ন ধরনের অপারেশন। তাছাড়া হাসপাতালটিতে শুরু থেকেই লোডশেডিংয়ের সময় আলো সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় বিদ্যুত চলে গেলে পুরুষ ও নারী-শিশু ওয়ার্র্ডসহ পুরো হাসপাতাল চত্বরে নেমে আসে অন্ধকার। শুধু জরুরী বিভাগের জন্য প্রায় পাঁচ বছর আগে একটি আইপিএস সরবরাহ করা হলেও তা বর্তমানে অকেজো। তাই জরুরী বিভাগ চালানো হচ্ছে হারিকেন জ্বালিয়ে। রোগীদের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত এ্যাম্বুলেন্সটির অবস্থা আরও করুণ। ১৯৯৫ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের সময় একটি এ্যাম্বুলেন্স সরবরাহ করা হলেও এ্যাম্বুলেন্সটি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কয়েক বছর আগেই তা নষ্ট হয়ে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তাই গত ২০১৫ সালের জুলাই মাসে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জন্য নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় স্থানীয় সংসদ সদস্যের অনুরোধে একটি এ্যাম্বুলেন্স প্রদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিলেও আজও সেটি এসে পৌঁছায়নি অথচ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার দেড় লাখ অধিবাসী এবং পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর ও চাটমোহর উপজেলার আংশিক মানুষ এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাসেবা নেন। এদিকে হাসপাতালে কাগজ-কলমে ৯৩ রকমের ওষুধ দেয়ার কথা থাকলেও রোগীরা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে আগত রোগীদের বিভিন্ন রোগের জন্য প্রায় একই ধরনের ওষুধ সরবরাহ করা হয় বলে জানান রোগীরা। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ হালিমা খানম জানান, এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে চিকিৎসক সঙ্কট এবং দুই বছরেও হাসপাতালের আধুনিক ভবন ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়নি বলে কিছু সঙ্কট রয়েছে। তবে একজন গাইনোকলজিস্ট হলেই আপাতত সিজারিয়ান অপারেশন করা যায়। এতে সিজারের পরিমাণও কমে আসবে বলে জানান তিনি।
×