কাঠবিড়ালির মন ভাল নেই। কিটিমিটি সকালে যে কাজ করল তাতে মন ভাল থাকার কথা নয়।
কিটিমিটি। কিমিমিটি আবার কে? কিটি হলো কাঠবিড়ালির ছেলের নাম। আর মিটি হলো মেয়ের নাম।
কী করেছে ওরা? কী করেছে, না? সকালে কাঠবিড়ালি কিটিমিটিকে কাঠবাদাম দিয়েছে। কিটি বলে, খাবে না। রোজ রোজ এক খাবার খেতে ভাল লাগে না। বলে, আমি খাব না। খাব না। আমাকে গাজর এনে দাও। কাঠবিড়ালি গাজর পাবে কোথায়? গাজর কি কাঠবিড়ালির খাবার?
মিটি কী করল, শুনো। মিটি গাছ থেকে বাদামগুলো নিচে ফেলে দিল। আর ইঁদুর ছানারা সেগুলো নিয়ে গেল। এখন সারা দিন খাবে কী?
কিটিমিটিকে নিয়ে আর পারা যায় না। এত রাগ করতে পারে ওরা! কাঠবিড়ালি বসে বসে ভাবছে। তার মন খারাপ।
কাঠবিড়াল এলো বন থেকে। কাঠবিড়ালির মন খারাপ দেখে বলল, কী হয়েছে গো? মুখটা এমন তবলা বানিয়ে বসে আছো কেন?
কাঠবিড়ালি বলে, কী আর হবে? তোমার ছানাদের তুমিই সামলাও। আমি আর পারছি না।
কী হয়েছে সেটা আগে তো বলো। তারপর কী করা যায় ভেবে দেখি। আমার কাঠবাদাম আনতে যেতে হবে। আমি কী করে ছানা সামলাই, বলো?
কাঠবিড়ালি সকালের ঘটনা খুলে বলল।
কাঠবিড়াল ছানাদের খুঁজতে গেল। কোথায় পাবে ওদের? কিটি গাছের উঁচু ডালে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর মিটি একটি ডালে চুপচাপ বসে আছে। কাঠবিড়াল মিটিকে বলল, তুমি এখানে বসে বসে কী করছ?
মিটি বলল, পাখিদের গান শুনছি। তুমি আমাকে গান শেখাবে, বাবা?
কাঠবিড়াল বলল, গান গাওয়া তোমার কাজ নয়। গান গাওয়া হলো পাখিদের কাজ।
মিটি রাগ করে। সে দৌড়ে গাছের মগ ডালে গিয়ে বসে। বলে, গান না শেখালে আমি নামব না। কোন দিনও নামব না। কিটিও মিটির সঙ্গে যোগ দিল। সেও বলল, হ্যাঁ আমাদের গান শেখাতে হবে। না হয় নামব না।
কাঠবিড়াল খুব মুশকিলে পড়ল। কার কাছে গান শেখাবে? এই সময় নিচ দিয়ে যাচ্ছিল এক শিয়াল। শিয়াল ওদের কথা শুনে বলল, আমিই তো গানের ওস্তাদ। গান শেখাই। শিয়ালের মুখে হাসি।
শিয়ালের কথা শুনে কাঠবিড়াল খুশি হয়। খুশি হবে না কেন? কিটিমিটি গান শিখবে। পাশের ডাল থেকে বানর সব কথা শুনছিল। কাঠবিড়াল বলল, তোমার হারমোনিয়াম, তবলা, ঢোল আছে তো?
শিয়াল বলল, তা থাকবে না
আবার। তবে গানের ওস্তাদ হলাম কেন? সব আছে।
শিয়াল বলল, তুমি কাল সকালে কিটিমিটিকে সাজিয়ে রেখ আমি এসে নিয়ে যাব।
পরদিন সকালে কাঠবিড়াল আর কাঠবিড়ালি কিটিমিটিকে সাজিয়ে দিল। শিয়াল কিটিমিটিকে নিয়ে গেল। পাশেই তো সে থাকে। সেখানে গান শেখাবে।
শিয়াল নিজের বাসায় গিয়ে কিটিমিটিকে লতা দিয়ে বেঁধে ফেলল। বলল, অনেক দিন ধরে তোদের খাব ভাবছি। সুযোগ পাচ্ছি না। আজ সে সুযোগটা পেলাম। ভাজি করে খাব। আহ্।
শিয়ালের কথা শুনে কিটিমিটি কাঁদতে লাগল। শিয়াল কি আর ওদের কান্না শুনে? সে গেল তেল, নুন, কড়াই, লাকড়ি আনতে। আর আগুন আনতে। সে মনে মনে ভাবল, কিটিমিটিকে ভাজি করে খেলেই মজাটা হবে।
কাঠবিড়ালের বোকামি আগেই সেই বানরটি বুঝতে পেরেছিল। তাই সে গাছের ডালে বসে দেখছিল শিয়াল কী করে? শিয়াল চলে যাওয়ার পর কিটিমিটির বাঁধন খুলে গাছের ডালে বসিয়ে দিল। তারপর বানর নিজেকে লতায় জড়িয়ে শুয়ে রইল।
শিয়ালের খুশি যেন ধরে না। আজ কিটিকে খাবে। কাল মিটিকে খাবে। সে চুলোয় আগুন জ্বালিয়ে হাঁড়িতে তেল ঢেলে গরম করল। বলল, এইবার কিটি তোমাকে ভাজি করে খাব। এসো পড়। সে গাছের পাশে গেল কিটিকে আনতে। গিয়ে দেখে কিটিমিটি নেই। লতা জড়িয়ে শুয়ে আছে বানর। বানরকে দেখে অবাক হলো শিয়াল। বলল, তুমি এখানে কেন? কিটিমিটি কোথায়?
বানর বলল, ভাজি করে খাবে না? খাও দেখি।
শিয়াল বলল, আরে না। আপনাকে কি ভাজি করে খাই?
এ কথা বলে শিয়াল পালাতে লাগল। বানরও তাকে লাঠি নিয়ে তাড়া করল। শিয়াল বন ছেড়ে পালিয়ে গেল।
বানর কিটিমিটিকে নিয়ে গেল মা-বাবার কাছে। বানর সব ঘটনা খুলে বলল। কিটিমিটি মা-বাবাকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলল। তারপর বলল, আমরা আর গান শিখব না।
কাঠবিড়াল বলল, যার যে কাজ তার সে কাজই করতে হয়। গান গাওয়া পাখিদের কাজ। তোমাদের কাজ নয়।
কিটিমিটি বলল, ঠিক বলেছো বাবা। আমরা আমাদের কাজ করব।
অলঙ্করণ : প্রসন হালদার