ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে চীন-ভারতকে সামাল দিচ্ছে ভুটান

প্রকাশিত: ১৮:৩৫, ৩১ আগস্ট ২০১৭

যেভাবে চীন-ভারতকে সামাল দিচ্ছে ভুটান

অনলাইন ডেস্ক ॥ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন বিশ্বের দুই বৃহৎ সেনাবাহিনীর অধিকারী। ডোকলাম ইস্যুতে দেশ দুটির সেনাবাহিনী একে অপরের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়। দেখা দেয় আরেকটা যুদ্ধের আশঙ্কা। ডোকলামকে ঘিরে ভারত ও চীনের মধ্যকার এই উত্তেজনার মাঝে পড়ে যায় আরেক প্রতিবেশী দেশ ভুটান। চীন ও ভারতের সেনারা আক্ষরিক অর্থেই ভুটানের দোরগোড়ায় অবস্থান নেয়। এমন উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ ছোট্ট ভুটানের কর্মকর্তারা ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো নীরবতা বজায় রাখেন। ক্ষমতাসীন নেতারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করা থেকে কঠোরভাবে বিরত ছিলেন। এমনকি শুরু থেকেই দেশটির গণমাধ্যম চীন-ভারতের কূটনৈতিক অচলাবস্থার খবর পরিবেশন করা থেকে ব্যাপকভাবে সংযত ছিল। অবশেষ প্রায় দু’মাসেরও বেশি সময় পর সোমবার ডোকলাম থেকে উভয় দেশই নিজেদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে শুরু করে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ৮ লাখেরও কম জনগণের দেশ ভুটান। বিশ্লেষকরা বলেছেন, এক্ষেত্রে দেশটির ধৈর্য ও পরিমিত আচরণই দুই পরমাণু অস্ত্রধর পরাশক্তির মাঝের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিরসনে সাহায্য করেছে। স্থলবেষ্টিত ভুটানের উত্তরে চীন নিয়ন্ত্রিত তিব্বত মালভূমি ও অন্য তিনদিকে ভারত। বহু বছর ধরে দেশটি চীন ও তার সবচেয়ে বড় মিত্র ভারতের সঙ্গে সূক্ষ্ম ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। তবে চীনের চেয়ে ভারতের সঙ্গে তাদের লেনদেনই বেশি। একদিকে ভারত ভুটানের সেনাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছে। অন্যদিকে তারাই ভুটানের জলবিদ্যুৎ ক্রয় করছে। এছাড়া দেশটিকে প্রতি বছর ৫৭৮ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে ভারত। দেশটির রাজধানী থিম্পুতে ভারতের এ প্রভাব সর্বত্রই দেখা করা যায়। থিম্পুর রাস্তায় শরীরচর্চা করা সেনা কর্মকর্তা থেকে শুরু করে পাহাড়ি এলাকায় ভারতীয় প্রকল্পগুলোতে নিযুক্ত সাধারণ শ্রমিক পর্যন্ত সবার মধ্যেই ভারতের প্রভাব স্পষ্ট। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও চীনে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত নিরুপমা মেনন রাও বলেন, ভুটান আসলেই দু’পক্ষের মাঝে আটকা পড়েছে এবং ডোকলাম ইস্যু সবকিছু সামনে নিয়ে এসেছে। বহু দিন ধরে ভুটান তার অস্তিত্ব রক্ষার এ খেলা খেলে এসেছে। এটা তাদের চেয়ে ভালো করে আর কেউ জানে না।’ তবে সাম্প্রতিক এ সংঘাতের কারণে ভুটানের অনেকেই ভারতের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি তুলেছে। অনেকেই বলেছেন, দক্ষিণের প্রতিবেশীর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক শ্বাসরুদ্ধকর। ভুটানের সাংবাদিক সমিতির নির্বাহী পরিচালক নিদ্রুপ জাংপো বলেন, ভারত যদি কাল সীমান্ত বন্ধ করে দেয় তবে কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের চাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ শেষ হয়ে যাবে। আমরা এমনটাই ঝুঁকিতে। অনেক ভুটানিরই এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে। অপরূপা পর্বতময় পথ, বৌদ্ধদের প্রার্থনার পতাকা ও প্রাচীন মন্দিরের দেশটি কিছুদিন আগ পর্যন্ত ছিল রাজতান্ত্রিক। গত শতাব্দীর বেশিরভাগ সময়ই ভুটানের গ্রামগুলো বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। টেলিভিশন চালু হয়েছে সবে ১৯৯৯ সালে। প্রতি বছর এই অঞ্চলের বাইরের মাত্র ৬০ হাজার পর্যটক দেশটিতে আসেন। বিদেশি পর্যটক নিরুৎসাহিত করতে পর্যটক মৌসুমে প্রতিদিন একজন পর্যটকের ওপর ২৫০ ডলারের মতো ভিসা ফি নির্ধারণ করা হয়। দেশটির জনপ্রিয় ও প্রগতিশীল চতুর্থ রাজা জিগমে সিংগে ওয়াংচুক দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। ভারতের সঙ্গে ভুটানের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। ভারত দেশটির বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। ১৯৪৯ সালের এক চুক্তির মাধ্যমে ভারত ভুটানের বিদেশনীতির পথপ্রদর্শকের স্থান দখল করে। তবে ১৯৫৮ সালে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সফরের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক মজবুত হয়। ২০০৭ সালে পুরনো চুক্তির ধারা শিথিল করা হয়। চীনের সঙ্গে ভুটানের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। তবে ডোকলাম নিয়ে চীন ও ভারতের বিরোধে সেও জড়িয়ে পড়ে। ভুটান চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে সন্দেহ করে ২০১৩ সালে ভারত ভুটানের গৃহস্থালি গ্যাসের ওপর ভর্তুকি বাতিল করেছিল। চীনের সম্প্রসারণ নীতির বিরুদ্ধে ভুটানকে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবে দেখে থাকে ভারত। গত ১০ বছরে ভুটানে ব্যাপক আধুনিকায়ন হয়েছে। অনেক তরুণ ও শিক্ষিত অধিবাসীরা মোবাইল ফোনে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় চীন ও ভারতের বিরোধের খবর দেখেছে। বিশ্বে ভুটানের অবস্থান নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলেছেন। চীনের অতি কাছে থেকে কীভাবে ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা যায় তা নিয়ে তারা সন্দিহান। ভুটান এখন চীনুমুখী হতে চাইছে। ভুটানি উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য চীনে রফাতনি করতে চান। তরুণ উদ্যোক্তা জিগমে তেনজিন বলেন, এখন আমরা একটি বিশ্ব সম্প্রদায়। তাই ভারতের পাশাপাশি আমাদের চীনের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক রাখা প্রয়োজন। ওয়াশিংটন পোস্ট।
×