ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আফগান মেয়েরা নাম-হীন জীবন থেকে মুক্তি চান

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৫ আগস্ট ২০১৭

আফগান মেয়েরা নাম-হীন জীবন থেকে মুক্তি চান

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিদেশি ব্যাঙ্ক। আদবকায়দাও আলাদা। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় জানতে চাওয়া হয়েছিল মায়ের নাম। অনেক ভেবেও কিছুতেই মনে করতে পারেননি বাতুল মহম্মদি। মনে পড়বে কী করে! কেউ তো কোনও দিন মাকে নাম ধরে ডাকত না। স্কুলের খাতায় মায়ের নাম ছিল না। এমনকী কবরেও শুধু লেখা, অমুকের বৌ, তমুকের মা...। মেয়েদের আবার নাম কীসের? আফগান সমাজে মেয়েদের নাম জানতে চাওয়া শুধু আপত্তিকর নয়, অপমানজনকও বটে। জন্ম থেকে মৃত্যু, কোথাওই নাম থাকে না তাঁদের। জন্মের শংসাপত্রে মায়ের নাম থাকে না। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে পাত্রীর নাম থাকে না। এক নাম-হীন জীবনই বরাদ্দ মেয়েদের জন্য। এ হেন রীতির প্রতিবাদে নেমেছেন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী-মেয়েরা। ফেসবুক-টুইটারে প্রচারের ঢল, হোয়্যারইজমাইনেম। তাঁদের দাবি, মানুষের মুখেই শুধু নয়, অফিস সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্রে মেয়েদের নাম থাকা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রচারের অন্যতম হোতা বাহার সোহালির কথায়, আমাদের দেশে তো মেয়েদের সব কিছু নিয়েই ছুতমার্গ রয়েছে। ইতিমধ্যেই লেখক থেকে সাংবাদিক, গায়ক, দেশের বহু প্রভাবশালী মানুষকে পাশে পেয়েছেন বাহাররা। আফগানিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক ফারহাদ দারিয়াই যেমন স্ত্রী-র সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ফারহাদ ও সুলতানা দারিয়া। বাহারের মতো আর এক আন্দোলনকারীর আক্ষেপ, আসলে মেয়েদের নাম যে মুখে আনা যায় না, এ রেওয়াজটা আফগান সমাজের রক্তে মিশে গিয়েছে। মেয়েরা যে সমাজের দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ, সেটা বোঝানোর জন্য এর থেকে ভাল উপায় আর কী হতে পারে! তালিবান জমানা শেষ হওয়ার পরে মেয়েরা এখন স্কুলে যায়, তাঁদের ভোটাধিকার এসেছে, কর্মস্থলেও এক জন-দুই জন মেয়ে চোখে পড়ে। কিন্তু যে সন্ত্রাস ঘরের চার দেওয়ালের চৌহদ্দির মধ্যে চলে এসেছে এত দিন, তা কিন্তু বহাল রয়েছে আজও। এখনও পরিবারের যে কোনও সিদ্ধান্ত নেন পুরুষরাই। এ প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন আফগান মহিলা চিত্রসাংবাদিক ফরজানা ওয়াহিদি। বললেন, কাজের স্বার্থে বিভিন্ন মহিলার মুখোমুখি হয়েছি। কিন্তু ইন্টারভিউ নিতে গেলে কিংবা ছবি তোলার প্রয়োজন পড়লেই সবাইকে বলতে দেখি, এক বার স্বামীর অনুমতি নিয়ে নিই। এ ছবিটাই বদলাতে চান বাহাররা। বললেন, সরকারের উপর চাপ বাড়াতে হবে। যখনই মেয়েদের অধিকারের প্রশ্ন ওঠে, তখনই আইনের ধ্বজাধারীরা ধর্মের কথা টেনে আনেন। এ বারেও তার অন্যথা হচ্ছে না। কাবুল হাইকোর্টের মুখপাত্র আবদুল্লা আতহি বললেন, জন্মের শংসাপত্র বা অন্য কোনও সরকারি কাগজে মেয়েদের নাম দিতে আমাদের কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু এ দেশের মানুষ কি এতটা আধুনিক হয়েছে? মাঝখান থেকে শুধু-শুধু ঝামেলা হবে।
×