ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নিহত ৩৫ ॥ তালেবানের দায় স্বীকার

কাবুলে ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলা

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৫ জুলাই ২০১৭

কাবুলে ভয়াবহ গাড়িবোমা হামলা

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে সোমবার ভয়াবহ আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৪২ জন। তবে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাজধানীর শিয়া অধ্যুষিত কর্মব্যস্ত এলাকায় সরকারের খনিজ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বহনকারী একটি ছোট বাসে হামলার ঘটনাটি ঘটে। ইতোমধ্যে তালেবান হামলার দায় স্বীকার করেছে। চলতি বছর তালেবান ও আইএস দেশটিতে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। খবর বিবিসি ও আল জাজিরা অনলাইনের। পুলিশ পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে। তবে হামলার লক্ষ্যস্থল পরিষ্কার নয় বলে জানিয়েছে তারা। স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় হামলা চালানো হয়েছে। ছবিতে দেখা গেছে, কয়েকটি গাড়ি ও দোকানসহ বাসটি পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে। কাবুল পুলিশের মুখপাত্র বাসির মুজাহিদ বলেন, আহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। কাবুলের একটি মসজিদে আইএসের হামলার দুই সপ্তাহ মাথায় এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল। শহরে দিনের সবচেয়ে কর্মব্যস্ত সময়ে হামলাটি চালানো হয়েছে। লোকজন তখন যার যার মতো কর্মস্থলে, শিক্ষার্থীরা স্কুলে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এতে রাস্তায় যানবাহনের দীর্ঘ জট ছিল। দোকানপাটও প্রায় খোলা হয়ে গিয়েছিল। সরকারের উপপ্রধান নির্বাহীর মুখপাত্র মোহাম্মদ মোহাক্কিক বলেন, হামলাকারীরা তার বাসভবন লক্ষ্যবস্তু বানাতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রহরীরা তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে। সংখ্যালঘু শিয়া হাজারা সম্প্রদায়ের নেতা হলেন মোহাক্কিক। এর আগেও আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জাতিগত সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের বসতিতে বেশ কয়েকটি প্রাণঘাতী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত মাসে এরকম একটি হামলায় জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা রমজান হোসাইন জাদা নিহত হন। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি সরকারী কর্মকর্তা ও বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটিকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। জাতিসংঘের হিসেবে, বছরের প্রথম ছয় মাসে এ ধরনের হামলায় অত্যন্ত ১৬৬২ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে। যার ২০ শতাংশ হামলা হয়েছে রাজধানী কাবুলে। এর আগে ৩১ মে মধ্য কাবুলে ব্যাপক বিস্ফোরণে ১৫০ লোক নিহত হয়। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বাহিনী তালেবানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে এটাই ছিল সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা। গত মাসে দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হেলমান্দে একটি ব্যাংকের বাইরে গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ৩৪ জন নিহত ও ৫৮ জন আহত হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগান সেনাবাহিনী ও পুলিশকে সহায়তা বাড়াতে নতুন করে সৈন্য পাঠানোর কথা বিবেচনায় রেখেছেন। বছর তিনেক আগে দেশটিতে ন্যাটো সামরিক জোটের কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হয়েছিল। কাজেই দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীকেই এখন সব ধরনের হামলা সামাল দিতে হচ্ছে। কিন্তু তালেবান ও আইএসের হামলায় তারাও ব্যাপক হতাহতের শিকার হচ্ছেন। বাকি মোহাম্মদ নামে এক দোকানি বলেন, আমি প্রচ- বিস্ফোরণ শোনার পরপরই দেখি আমার দোকান ধ্বংস হয়ে গেছে। তালেবান নিরপরাধ লোকজনকে হত্যা করছে। নিরীহ মানুষ হত্যা করে এখন পর্যন্ত তারা কী হাসিল করতে পেরেছে? গত বছরের ২৩ জুলাই একই জায়গায় ইসলামিক স্টেটের আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৮৪ জন নিহত হয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন তিন শতাধিক। সেই ঘটনায় নিহতদের স্মরণে হাজারী সম্প্রদায় সোমবার প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল। নিরাপত্তার শঙ্কায় সেই প্রতিবাদ সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে। আল জাজিরার কাবুল প্রতিনিধি বলেন, কাবুল খুবই কঠোর নিরাপত্তার ভেতরে রয়েছে। শহরের ফটকের উচ্চতা বাড়ানো হয়েছে। কাজেই শহরে এখন সীমিত উচ্চতার বাইরে ট্রাক ঢুকতে পারবে না। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে গোষ্ঠীগত সংঘাতের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে হাজারা গোষ্ঠী। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে রাজধানী কাবুলের ২০ শতাংশ বেসামরিক লোক সন্ত্রাসী হামলায় হতাহত হয়েছেন।
×