ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিবারের সদস্য, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী প্রবেশ করতে পারবেন

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১ জুলাই ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর

ছয়টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ভ্রমণকারী ও সকল শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত নিষেধাজ্ঞা আদালতের সিদ্ধান্তে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কার্যকর করা শুরু করেছে। এরপর থেকে দেশটিতে শরণার্থী প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধসহ পারিবারিক বন্ধন, ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও শিক্ষাক্ষেত্র ছাড়া এসব দেশের নাগরিকদের ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হবে। খবর বিবিসি অনলাইনের। গত সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালত ট্রাম্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি ভ্রমণনিষেধাজ্ঞার পক্ষে রায় দিলে তা বাস্তবায়নে আর বাধা থাকলো না। তবে বিচারকরা কিছু অংশ বাদ দিয়ে আংশিকভাবে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। ছয় মুসলিম দেশের কোন নাগরিকের পারিবারিক সম্পর্কের কেউ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলে তিনি বিনা বাধায় প্রবেশ করতে পারবেন, বিশেষভাবে স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, শিশু ও আপন ও সৎ ভাইবোনকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে অনুমতি দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাস্তবায়নের আগের দিন সর্বশেষ সিদ্বান্ত অনুসারে বাগদত্তাকেও পারিবারিক সম্পর্কের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আবার নব্বই দিনের এ নিষেধাজ্ঞায় দাদা-দাদি, চাচা-চাচি, ভাইপো-ভাইঝিকে পারিবারিক সম্পর্কের আওতায় রাখা হয়নি। পারিবারিক সম্পর্ক অবশ্যই আনুষ্ঠানিক ও তথ্যপ্রমাণসহ উপস্থাপন করতে হবে বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। আর এটা হতে হবে স্বাভাবিক নিয়ম ও গতি বজায় রেখে। নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিতে ভিন্ন কোন চেষ্টা করে পার পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে নিবন্ধিত শিক্ষার্থী ও দেশটিতে চাকরির প্রস্তাব পেয়েছেন, এমন ব্যক্তিদের প্রবেশ বাধাগ্রস্ত হবে না। এমনকি এসব দেশ থেকে কাউকে আমেরিকার কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনিও আসতে পারবেন। কিন্তু দেশটির কোন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে নিষিদ্ধ করা হবে। বিশেষভাবে অভিবাসন নিয়ে কর্মরত কোন দাতব্য গোষ্ঠী এ ছয় দেশের কোন নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরাপদ প্রবেশের সুযোগ করে দিতে চাইলে তা বন্ধ করা হবে। কিন্তু কর্মকর্তারা সরকারের দেয়া এসব সংজ্ঞা কিভাবে ব্যাখ্যা দেবেন ও বাস্তবায়ন করবেন তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ রয়ে গেছে। এ নিয়ে আরও মামলা-মোকদ্দমা হওয়ার সংশয়ও রয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পেশাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, সুসংগঠিতভাবে ও যথাসময়ে সীমিত নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা হবে। এ সময়ে বিমানবন্দরে কোন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ঘটবে না বলেই আশা করছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। ভ্রমণভিসায় যারা আসবেন, তাদের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। শিক্ষার্থী, চাকরি ও পারিবারিক ভিসায় আগমনকারীরা যথাযথ তথ্যপ্রমাণ দেখিয়েই কেবল ঢুকতে পারবেন। ইরান, লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়ামেনের নাগরিকসহ সকল শরণার্থীদের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরা করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের কয়েক মুহূর্ত আগে হাওয়াই অঙ্গরাজ্য উচ্চ আদালতের বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেছে। সেখানকার এ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দেখান, পারিবারিক বন্ধনের সংজ্ঞা খুবই ছোট করা হয়েছে। আর যতই অসমীচীন হোক, এসব দেশের লোকজনকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেয়া যাবে না। আমেরিকার নাগরিক অধিকার ইউনিয়ন (এসিএলইউ) জানিয়েছে, নির্দেশনা ও বাস্তবায়ন নির্দেশ নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করা হবে। অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশপথগুলো কড়া পর্যবেক্ষণের ভেতরে থাকবে। আমাদের কর্মীরা এ জন্য ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে।’ অভিবাসন অধিকার রক্ষায় কাজ করা এ্যাকটিভিস্ট ও আইনজীবীরা বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান বিমানবন্দরগুলোতে আগমনকারীদের সাহায্যে এগিয়ে আসবেন। যাদের কাছে বৈধ ভিসা থাকবে, তাদের প্রবেশের ব্যাপারে কোন বাধা থাকবে না বলে তারা নিশ্চয়তা দেন। তবে যারা ইতোমধ্যে বৈধ ভিসা পেয়েছেন, তারা স্বাচ্ছন্দ্যেই দেশটিতে ঢুকতে পারছেন। আদালত এদিকে শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা অনুমোদন করেছেন। এর মধ্যে কোন শরণার্থী দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। উচ্চ আদালতের রায়ের পর আমেরিকার এ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশনস বলেন, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি সত্যিকার অর্থে হুমকি রয়েছে। যেটা দিনে দিনে আরও বাড়ছে। তিনি বলেন, আদালতের এ রায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন পুর্নরুদ্ধারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমেরিকার নাগরিক অধিকার ইউনিয়নের পরিচালক ওমর জাদওয়াত বলেন, বাস্তবিক অর্থে নিষেধাজ্ঞায় আক্রান্ত হয়ে যারা এখনও বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়েছেন, তাদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির প্রধান ডেভিড মিলিব্যান্ড বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের আসার অপেক্ষারত ব্যক্তিদের ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে। জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজনে আসা ব্যক্তিরা বিপদে পড়ে যাবেন। নিরাপরাধ ব্যক্তিদের সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। প্যারিস, লন্ডন, ব্রাসেলস ও বার্লিনের সন্ত্রাসী হামলার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ নিষেধাজ্ঞা অপরিহার্য ছিল। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, ট্রাম্পের এ নীতি আমেরিকা সুলভ না। ইসলামভীতির কারণেই এটা করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেয়া সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা এ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ করা যাবে না। গত ২৭ জানুয়ারি যখন প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল, তখন বিশ্বব্যাপী বিমানবন্দরগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল। তখন ইরাকের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ ও সিরীয় শরণার্থীদের ওপর সব ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত হয়েছিল। এরপর ৬ মার্চ বেশকিছু আইনী জটিলতা এড়াতে প্রেসিডেন্ট একটি সংশোধিত নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তখন হাওয়াই ও মেরিল্যান্ডের বিচারকরা ট্রাম্পের ভ্রমণনিষেধাজ্ঞার নীতিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালত জানিয়েছে, পরবর্তী সময়ে সংশোধিত নিষেধাজ্ঞার বৈধতা নিয়ে শুনানি শুরু হবে। চলবে দোসরা অক্টোবর থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে চারজন উদারপন্থী ও পাঁচ রক্ষণশীল বিচারক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ আদালত গঠিত। এর মধ্যে রয়েছেন ট্রাম্পের নিয়োগ দেয়া অতি রক্ষণশীল বিচারক নিল গুরসুচ। তবে এসবের অর্থ এমনটা নয় যে নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি বহাল তবিয়তে থাকবে।
×