ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লিডেকির ভাণ্ডারে আরেকটি স্বর্ণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ৩০ জুন ২০১৭

লিডেকির ভাণ্ডারে আরেকটি স্বর্ণ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গত কয়েক বছর ধরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সাঁতার-বিশ্বের সুইমিং পুলগুলো। সাফল্যও নেহায়েত কম নয়। আর এবার তো ঘরের পুলেই খেলা। তাও আবার সেটি জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। কাজেই জলকন্যা ক্যাটি লিডেকিকে হারানো তো দূরে থাক, চ্যালেঞ্জ জানানোরই বা সাধ্যি কার আছে? আর তা নেই বলেই তো অনায়াসেই ২০ বছর বয়সী সুদর্শনা এই মার্কিন জলকন্যার সাফল্যের ভা-ারে যোগ হলো আরও একটি স্বর্ণপদক। শিকাগোতে অনুষ্ঠিত ‘ইউএস সুইম চ্যাম্পিয়নশিপে’ মেয়েদের ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে লিডেকি এই সাফল্য অর্জন করেন। জিততে তিনি সময় নেন ১ মিনিট ৫৪.৮৪ সেকেন্ড সময়। তার পেছনে থাকা লিয়াহ্ স্মিথের চেয়ে যা ১.৮৪ সেকেন্ড কম। এর আগেই ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ক্যাটি সোনা জিতেছেন। আজ তিনি লড়বেন ৪০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। শনিবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৫০০ মিটার ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে। ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলের জয় মানসিকভাবে অনেক এগিয়ে দেবে ৫ ফুট ১১ ইঞ্চির অধিকারী ক্যাটিকে। কেননা সামনের মাসেই তিনি অংশ নেবেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে যা অনুষ্ঠিত হবে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে। এ পর্যন্ত বিশ্ব সাঁতার প্রতিযোগিতায় ১৯টি স্বর্ণপদক জিতেছেন ক্যাটি (রৌপ্য ১টি)। এর ৫টিই অলিম্পিকে। এই পাঁচটির আবার চারটিই ২০১৬ রিও অলিম্পিকে। এগুলো হলো ২০০, ৪০০, ৮০০ এবং ৪ গুণিতক ২০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। অপর স্বর্ণটি জেতেন চার বছর আগের ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে, ৮০০ মিটার ফ্রিস্টাইলে। এছাড়া ক্যাটি ৯টি সোনা জেতেন বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ লং কোর্সের আসরে। ২০১৩ বার্সেলোনায় ৪টি এবং ২০১৫ কাজানে বাকি ৫টি। এছাড়া আরও ৫টি সোনার পদক করায়ত্ত করেন প্যান প্যাসিফিক চ্যাম্পিয়নশিপে ২০১৪’র গোল্ড কোস্ট আসরে। মানুষের আয়ু ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু তার সুকীর্তি দীর্ঘস্থায়ী। লিডেকি এই অল্প বয়সেই যেসব কীর্তি গড়েছেন তা দীর্ঘস্থায়ীই হওয়ার কথা। ২০১৬ রিও অলিম্পিকে তিনি নিজের বিশ্বরেকর্ড নিজেই ভাঙ্গেন, তাও একবার নয়, দু’বার। এই ইভেন্টে তার আগের বিশ্বরেকর্ড টাইমিং ছিল ৩ মিনিট ৫৮.৩৭ সেকেন্ড। অস্ট্রেলিয়ায় ২৩ আগস্ট, ২০১৪ সালে প্যান প্যাসিফিক সুইমিং চ্যাম্পিয়নশিপে এই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। তারও আগে ২০১৪ সালের ৯ আগস্ট ক্যালফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে ৩ মিনিট ৫৮.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। রিও অলিম্পিকে এই ইভেন্টে হিটে অংশ নিয়েই নতুন অলিম্পিক রেকর্ডও গড়েন লিডেকি। টাইমিং ছিল ৩ মিনিট ৫৮.৭১ সেকেন্ড। এরপর চূড়ান্ত পর্বে গিয়ে আরও টাইমিং কমিয়ে ফেলেন। হয়ে যায় নতুন বিশ্বরেকর্ড। ছাপিয়ে যান নিজেকেই। শুধু তাই নয় এ পর্যন্ত ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার ফ্রি স্টাইলে এ পর্যন্ত মোট ১৩টি বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন তিনি (২০১৩ সাল থেকে)। শুধু তাই নয়, ওইা আসরেই তিনি স্বর্ণ জেতেন ২০০ মিটার ফ্রি স্টাইল এবং ৮০০ মিটার ফ্রি স্টাইলেও। এই ইভেন্টগুলোতে অংশ নিয়ে গড়েন অন্যরকম আরেকটি রেকর্ড। সেটি হচ্ছে ১৯৬৮ মেক্সিকো অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের মহিলা সাঁতারু ডেবি মেয়াররের পর এই প্রথম ওই তিনটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনটি ইভেন্টেই পদক জেতা যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় মহিলা সাঁতারুতে পরিণত হওয়া। তার আগে এমন কীর্তি গড়েছিলেন এমি ভ্যান ডিকেন, ১৯৯৬ আটলান্টা অলিম্পিকে এবং মিসি ফ্রাঙ্কলিন, ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে টানা চারবার ‘সুইমিং ওয়ার্ল্ডে’র ‘ওয়ার্ল্ড সুইমার অব দ্য ইয়ারে’র পুরস্কার পেয়েছেন কেটি। বিশ্বখ্যাত ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের সেরা ১০০ ব্যক্তিত্বের মধ্যে কেটির বয়সই সবচেয়ে কম। ওয়াশিংটনে জন্ম নেয়া কেটির পূর্বপুরুষদের নিবাস ছিল চেক প্রজাতন্ত্রে। কেটির দাদা সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান ১৯৪৭ সালে। আর কেটির মায়ের দিকের বংশধররা ছিলেন আইরিশ। বয়স যখন ছয় তখন থেকেই সাঁতারে হাতেখড়ি কেটির। অচিরেই স্কুলের সাঁতারে অংশ নিয়ে দক্ষতা প্রদর্শন করেন। তারপর ধীরে ধীরে জাতীয় ও পরে আলো ছড়াতে থাকেন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। ঠিক এখন যেমন ছড়াচ্ছেন।
×