ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

তিন ইস্যু প্রাধান্য পাবে

আজ ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৯ জুন ২০১৭

আজ ব্রাসেলসে ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু

ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিহাসের সবচেয়ে জটিল সমীকরণ সমাধানের লক্ষ্যে ১৯ জুন (সোমবার) ব্রেক্সিট আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে দু’বছরের কম সময়ের মধ্যে ব্রিটেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। খবর এএফপির। ব্রিটেনের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ফল বিপর্যয় এবং লন্ডনের বহুতল ভবনের অগ্নিকা-ে ব্যাপক প্রাণহানি সত্ত্বেও পূর্বনির্ধারিত সময়ে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রিটেনের ব্রেক্সিটবিষয়কমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এবং ইইউর প্রধান আলোচক ফ্রান্সের মিশেল বার্নিয়ার ব্রাসেলসে এক বৈঠকে মিলিত হবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রেক্সিট আলোচনার স্তর বিন্যাস যেভাবে করেছে, ব্রিটেন তা নীরবে মেনে নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। বিষয়ের গুরুত্ব ও প্রেক্ষিত বিবেচনা করে আলোচনায় ব্রিটোনের ইইউ জোট ত্যাগ এবং জোটভুক্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যত সম্পর্ক নিয়ে প্রাথমিকভাবে কথা হবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা শুরু হতে পারে। এর মাধ্যমে গত ২৯ মার্চ টেরেসা মে, দুই ধরনের আলোচনা যুগপতভাবে চালিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে যে চিঠি দিয়েছিলেন তার সে দাবি উপেক্ষিত হলো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মোদ্দা কথা হচ্ছে, আমরা যেসব বিষয়বস্তু ঠিক করেছি তার ওপর আলোচনা করতে তারা (ব্রিটিশ) আসছে, এতে মনে হয় যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই আছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনার জন্য পরপর কয়েকটি বিষয় সাজিয়েছে। প্রথমত জোট ত্যাগের জন্য ব্রিটেনের বিল, দ্বিতীয়ত ব্রিটেনে অবস্থানরত ইইউ নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষণ ও উত্তর আয়ারল্যান্ড সংক্রান্ত আলোচনা। ইউরোপীয় জোট থেকে বের হওয়ার আগে ব্রিটেনকে এক বিশাল অঙ্কের অর্থ ইইউ তহবিলে জমা দিতে হবে। ব্রাসেলসের ইইউ সদর দফতর থেকে প্রাথমিকভাবে এ অর্থের পরিমাণ ৬০ বিলিয়ন ইউরোর কথা বলা হলেও এখন তারা বলছে এটি এক শ’ বিলিয়ন ইউরোর কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এ বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদানের বিষয় নিয়ে ব্রেক্সিট আলোচনা প্রাথমিকভাবে হোঁচট খেতে পারে। ইইউ পক্ষের যুক্তি হচ্ছে, ২০২০ সাল পর্যন্ত ইইউ জোটের অন্যতম স্বাক্ষর দাতা দেশ হিসেবে ব্রিটেন জোটভুক্ত অপেক্ষাকৃত গরিব দেশগুলোর উন্নয়ন কর্মকা- অব্যাহত রাখার জন্য জোটের তহবিলে অর্থ যোগান দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু জোট তহবিলে প্রদেয় ব্রিটেনের জন্য নির্ধারিত (১০০ বিলিয়ন) অর্থের পরিমাণ আরও কম হতে পারে, কেননা জোটের অভিন্ন তহবিলে ব্রিটেনেরও অর্থ সংরক্ষিত আছে। এ অর্থ এবং তার ওপর ধার্য রিবেট মিলিয়ে ব্রিটেনের প্রদেয় অর্থের পরিমাণ আরও কম হবে বলে অনেকের ধারণা। ব্রেক্সিট বিলসংক্রান্ত আলোচনার পরই আসে ব্রিটেনে বসবাসরত ইউরোপীয় এবং ইউরোপের ব্রিটিশ নাগরিকদের অধিকার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আলোচনা। ব্রিটেনে বর্তমানে প্রায় ত্রিশ লাখেরও বেশি ইউরোপীয় অভিবাসী এবং ইউরোপে দশ লক্ষাধিক ব্রিটিশ নাগরিক অবস্থান করছে। বর্তমানে যেসব ইউরোপীয় নাগরিক ব্রিটেনে আছে তারা জোটভুক্ত অন্য ২৭টি দেশে যেরূপ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিরাপত্তা কর্ম ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অধিকার ভোগ করে তেমন অধিকার ব্রিটেনেও পেয়ে আসছিল। ব্রাসেলস এখন ব্রিটেনের কাছে এ মর্মে নিশ্চয়তা দাবি করছে যে, ব্রেক্সিটের পরও এসব ইউরোপীয় অভিবাসী ব্রিটেনে অনুরূপ সুযোগ-সুবিধা পাবে। ব্রেক্সিট আলোচনায় তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে উত্তর আয়ারল্যান্ড প্রসঙ্গ স্থান পাবে। এ ক্ষেত্রে, এ ব্রিটিশ প্রদেশের শান্তি প্রক্রিয়া এবং দক্ষিণ আয়ারল্যান্ড যা রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড নামে পরিচিত এর সঙ্গে সীমান্ত ব্যবস্থা নিয়ে সুস্পষ্ট আলোচনা হবে। ইইউ জোটের বক্তব্য হচ্ছে যে, তারা চায়না যে দুই আয়ারল্যান্ডের (উত্তর ও দক্ষিণ) মধ্যবর্তী সীমান্তে কড়াকড়ি ব্যবস্থা যেমনÑ পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ, কাস্টমস ও চেক পোস্ট ইত্যাদি থাকুক।
×