ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রাজিব হোসেন

দেশের এক নম্বর সমস্যা

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১৫ জুন ২০১৭

দেশের এক নম্বর সমস্যা

জনসংখ্যাকে যদি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যেত, তবে জনসংখ্যা দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনত। অর্থাৎ জনসংখ্যাকে যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যেত, তাহলে দেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতো। কিন্তু বর্তমানে জনসংখ্যা সমস্যা আমাদের দেশের প্রধান ও এক নম্বর সমস্যা। এ সমস্যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা বা এড়িয়ে যাবার উপায় নেই। অনুন্নত বাংলাদেশে ভূমি বা আয়তনের তুলনায় এত জনসংখ্যা পৃথিবীর অন্য কোন দেশে দ্বিতীয়টি আর আছে বলে মনে হয় না। ভবিষ্যতে এটি আরও বড় ধরনের হুমকিতে পরিণত করবে। ইউএনএফপিএ-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশে বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি ৪৪ লাখ ২৫ হাজার। সে তুলনায় বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১,১২৬ জন। একটি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে এত জনসংখ্যা কখনও কারও নিকট কাম্য হতে পারে না। বিশেষ করে যে দেশে কর্মসংস্থানের অভাবে প্রতিনিয়ত আমাদের পিতা-মাতার ঘুম হারাম হয়। জনসংখ্যার পরিমাণ এত অধিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, অভিভাবকদের সর্বদা দুশ্চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। অভিভাবকরা ভাবেন, তার সন্তান এত জনসংখ্যার মধ্যে একটি ভাল চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে তো! এখনও সময় আছে, জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানে আমরা যদি এর সঠিক উপায় বের করতে না পারি, তবে অদূর ভবিষ্যতে এর ভয়াবহতা শুধু পরিবারের মধ্যে বিরাজমান থাকবে না, এটা সমাজ, দেশ ও পৃথিবীর জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জে রূপ নিবে। যেমনটি দেশ থেকে গাছ কর্তনের ফলে দিনে দিনে নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিচ্ছে আমাদের দেশে। তাই, প্রাকৃতিক ভারসাম্যের পাশাপাশি প্রত্যেকটি মানুষকে পরিবার, সমাজ তথা দেশের কথা ভেবে এ জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান করতে হবে। যেহেতু, আমাদের দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই, তাই আমাদের অধিক পরিমাণে জনসংখ্যা সমস্যা মোকাবেলায় সকলকে অধিক আন্তরিক ও সচেষ্ট হতে হবে। আমাদের সমাজে এমন অনেক পরিবার আছে যারা একটি সন্তানকে ঠিকমতো অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ মৌলিক খরচগুলোই চালাতে সক্ষম নয়, তারা দু’টি তিনটি বা তার বেশি সন্তান নিয়ে বছরের পর বছর দুশ্চিন্তায় ভোগে। সন্তান নেয়ার আগে কখনও চিন্তা করে না, তার সংসার সামান্য আয়ে কিভাবে এতগুলা মানুষের জীবন সুন্দরভাবে চলবে। ফলশ্রুতিতে তাদের সংসারে সারাবছর অভাব ও চিন্তা লেগেই থাকে। মনে রাখতে হবে, এটা সমাধান করা শুধু সমাজ বা সরকারের একার দায়িত্ব নয়। এ সমস্যা সমাধানে আমাদের প্রত্যেক নাগরিককে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। জনসংখ্যার বৃদ্ধির প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানের উপায় আমাদের বের করতে হবে। তা না হলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের এমন এক সময়ের মুখোমুখি হতে হবে যে, আমাদের তিন বেলা খাবারের জায়গায় দু’বেলা খাবারও কপালে জুটবে না। তাই, আসুন আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতাকে নিজের মনে করে স্কুল, কলেজ, বিশ^বিদ্যালয়, অফিস, শিল্প-কলকারখানাসহ সর্বত্র গণসচেতনতা তৈরি করি এবং জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানে এর সঠিক উপায় বের এবং এর ভয়াবহতা ব্যাখ্যা করে সমাজের সকলকে সচেতন করি। আলাদাতপুর, নড়াইল থেকে
×