ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় বিল্ডিং কোড মানা হয়নি

বহুতল ভবন নির্মাণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৯ এপ্রিল ২০১৭

বহুতল ভবন নির্মাণে অনিয়ম

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ নগরীর বহুতল ইমারত নির্মিত হচ্ছে কোন নিয়মনীতি ছাড়াই। বিল্ডিং কোড তো মানা হয়ই না, নিজেদের ইমরাত কতটা ঝুঁকিতে থাকছে তাও দেখা হয় না। মৃত্তিকা পরীক্ষা করার পর রিপোর্টে নির্মাণের যে শর্ত দেয়া হয় তা শুধু কাগজ-কলমেই থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান পৌরসভা ও প্রশাসন কার্যত এ বিষয়ে একেবারেই নীরব। দিন দিন উত্তরাঞ্চলের বগুড়া নগরী ব্যবসার নগরীতে পরিণত হয়েছে। একর পর এক গড়ে উঠছে আধুনিক মার্কেট, ডিপার্টমেন্টাল শপ, দেশীয় ও বহুজাতিক কোম্পানির শোরুম। ভবন বহুতল ভবনে পরিণত হচ্ছে। দেখে মনে হবে হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের আধুনিক নগরী। এদিকে বড় ভূমিকম্পের জোনের মধ্যে পড়েছে বগুড়া। নতুন বহুতল ভবনগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া হলেও তা নামমাত্র। সাভাবে রানা প্লাজা ধসে যাওয়ার পর সাধারণের টনক নড়েছিল। দ্রুতই তা মিলিয়েও গেছে। বগুড়ায় কত ইমারত ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে আছে আর কত ইমারত ভাল অবস্থানে আছে এ তালিকা কোন বিভাগই দিতে পারেনি। গণপূর্ত অধিদফতর, পৌরসভা, জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। নাম প্রকাশ করতে না চেয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে যখন কোন ঘটনা ঘটে তখনই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। তারপর অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে যায়।’ প্রতিটি বিভাগ কৌশলে দায়িত্ব এড়িয়ে একে অপরের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। খোঁজ করে জানা যায়, বগুড়ায় অনেক অর্পিত সম্পত্তির যে ইমারত আছে সেগুলো এক শ’ থেকে দেড় শ’ বছরের পুরনো। এসব ইমারতের অবস্থা এতই নড়বড়ে যে, মধ্যমমাত্রার ভূকম্পনে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। এছাড়া একই মাত্রার ভূকম্পনে নিয়ম না মেনে নির্মিত বহুতল ভবন ধসে পড়বে। কিছুদিন আগে পৌর কর্তৃপক্ষ নক্সাবহির্ভূতভাবে নির্মিত ২১টি ভবনের তালিকা করে বাড়ির মালিকদের নোটিস দিয়েছিল। এ পর্যন্তই হয়ে আছে। আর কোন অগ্রগতি কয়েক বছরেও হয়নি। উল্টো বগুড়া নগরীতে প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় একের পর এক বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। পৌরসভার ফিডার রোড, সরু সড়কগুলোর দুই ধারে বহুতল ভবন নির্মিত হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটলে এসব এলাকায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের যানবাহন প্রবেশ করতে পারবে না। ভূমিকম্প হলে এসব এলাকায় রেসকিউ করার জন্য যানবাহন দূরে থাক, উদ্ধার করার জন্য লোকজনও যেতে পারবে না। জেলা প্রশাসনের এক সূত্র জানায়, পৌর এলাকার মধ্যে ব্যক্তি উদ্যোগে যত ইমারত ও অবকাঠামো নির্মিত হবে তা দেখার দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। নক্সা অনুমোদন থেকে নির্মাণকাজ তদারকি সবই দেখবে পৌর প্রকৌশল বিভাগ। সরকারী ভবনসহ নির্দিষ্ট কিছু ভবন দেখবে গণপূর্ত অধিদফতর। জেলা প্রশাসন তাদের নিয়ন্ত্রণের ইমারত দেখবে। এক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতের কোন তালিকা তাদের কাছে নেই। একই কথা বলেন বগুড়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, পৌর এলাকার মধ্যে অবস্থিত ঝুঁকিপূর্ণ ইমারতের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন দেখভাল করার জন্য সমন্বয় কমিটি থাকা দরকার। অনেকে পৌরসভার নির্ধারিত তলার অনুমতির বাইরে বাড়তি তলা নির্মাণ করে ভবন উর্ধমুখী করছে। অনুমতি আছে ছয়তলার, সেখানে দশতলা ভবন ও কখনও তারও উপরে। এমন বেশ কয়েকটি অবকাঠামো স্থাপনা খুঁজে পেয়েছে তারা। শহরের জলেশ্বরীতলা, সূত্রাপুর, সেউজগাড়ি, খান্দার, রহমাননগর, ঠনঠনিয়া, উপশহর, মালতিনগর, বকশিবাজার, ফুলবাড়ি, কাটনারপাড়া, শিববাটি, সুলতানগঞ্জপাড়া, ফুলবাড়িসহ প্রতিটি এলাকায় হাইরাইজ ভবন নির্মিত হচ্ছে। বহুতল ভবনে পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি না মিললে বাড়ির মালিক ঢাকায় গিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অধিদফতর থেকে বিশেষ অনুমতি নিয়ে আসে। পৌর কর্তৃপক্ষ জানায়, অবৈধভাবে উর্ধমুখী করার জন্য পৌরসভা স্থাপনার মালিকদের নোটিস দিয়েছে। এরপরও কেউ অবৈধভাবে স্থাপনার কাজ চালালে তা প্রতিরোধ করতে এবং অনুমোদিত নক্সার বাইরে স্থাপনা ভেঙ্গে দিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা লাগবে। তাছাড়া পৌরসভার জনবল এতটাই কম যে, নির্মাণাধীন বহু ইমারত পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
×