ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নয়াদিল্লী সফরকালে হাসিনা-মমতা বৈঠক হতে পারে

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২০ মার্চ ২০১৭

নয়াদিল্লী সফরকালে হাসিনা-মমতা বৈঠক হতে পারে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ নয়াদিল্লী সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে মমতাকে নয়াদিল্লীতে আমন্ত্রণ জানাতে চলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসলে এই সফর বাড়তি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। আগামী ৭-১০ এপ্রিল চার দিনের ভারত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নয়াদিল্লীতে আমন্ত্রণ জানাবে মোদি সরকার। এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও রয়েছে মেঘালয়, অসম, ত্রিপুরা ও মিজোরাম। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে হাসিনা-মমতার সম্ভাব্য বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। রবিবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশে বিপুল জয়ের পরে নরেন্দ্র মোদি এখন অনেক বলীয়ান। তিস্তার পানি বণ্টন প্রশ্নে মমতাকে নরম করার সুযোগও তৈরি হয়েছে। এই কারণে ঢাকার প্রত্যাশাও বেড়েছে বহুগুণ। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত দিল্লী যাবেন কিনা, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তৃণমূল সূত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সফরের এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ এখনও আসেনি। ফলে এখনই এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসেনি। যদিও অনেকে মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লী এসে হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার সুযোগকে কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে বলা হয়, এখনই তিস্তা চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত পদক্ষেপের পরিস্থিতি তৈরি হয়নি ঠিক, কিন্তু দুই রাষ্ট্রপ্রধানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে বিষয়টি বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হবে। পাশাপাশি এই চুক্তিতে মমতা-হাসিনা মুখোমুখি বসলে অনেকটাই ইতিবাচক বার্তা দেয়া যাবে। সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ১১-১২ আগস্ট দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে এক বৈঠক হয়। মোদির সঙ্গে মমতার ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে তিস্তা চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। সে সময় মমতা জানিয়েছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি করতে আগ্রহী নন তিনি। নির্বাচনের পরে এ বিষয়ে অগ্রসর হওয়ার আশ্বাস দেন মমতা। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলায় বিষয়টি আটকে যায়। এর প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় এসে শীঘ্রই তিস্তার জট খোলার আশা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একই বছর ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় মমতার সঙ্গে আলোচনা শুরু হলে পুরনো কাঠামোতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আবারও বেঁকে বসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি না করার আশ্বাস দিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সফরে আসতে রাজি করান। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সফরে এসে তিস্তার বিষয়ে তার প্রতি আস্থা রাখতে বলেছিলেন মমতা। তবে তিনি আস্থা রাখতে বললেও তার বিরোধিতায়ই ’১১ সালে তিস্তা চুক্তি হতে হতেও আটকে যায়। ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সফরে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন মমতা। তিনি তখন বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে এই চুক্তিকে তিনি সমর্থন করতে পারেন না। তবে মমতা প্রকাশ্যে এ কথা বললেও একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে নির্বাচনের পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হবেন বলে জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময়েও মমতা দিল্লীতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। শাড়ি উপহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এবারও তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। হতে পারে একটি বৈঠকও।
×