ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলম্বো টেস্ট ॥ বাংলাদেশ ২১৪/৫

শেষবেলায় পতনের মিছিলে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ১৭ মার্চ ২০১৭

শেষবেলায় পতনের মিছিলে বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শততম টেস্টের প্রথম ইনিংসে কি সুন্দর ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাচ্ছিলেন ব্যাটসম্যানরা। যেই দ্বিতীয়দিনের চার ওভার বাকি। শেষ বেলায় এসে সব ম্লান হয়ে গেল। ২ উইকেট হারিয়ে যেখানে ১৯২ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১৯৮ রানেই নেই ৫ উইকেট। শেষ পর্যন্ত একাধিকবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়া সাকিব (১৮*) ও মুশফিক (২*) মিলে প্রথম ইনিংসে দলকে ২১৪ রানে নিয়ে গেছেন। দিনেশ চান্দিমালের ১৩৮ রানে প্রথম ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৩৩৮ রান করায় এখনও ১২৪ রানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। আজ সাকিব ও মুশফিকের ব্যাটিংয়ের ভরসাতেই থাকছেন সবাই। তামিম ও সৌম্য দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন। বড় জুটিও গড়ে ফেলেন। কিন্তু ৯৫ রানে গিয়ে যেই রঙ্গনা হেরাথের ঘূর্ণির সামনে পড়ে এলবিডাব্লিউ হয়ে গেলেন তামিম (৪৯), জুটি ভেঙ্গে গেল। এক শ’ রান হতে ৫ রান বাকি ছিল। এর আগেই সুন্দরভাবে এগিয়ে চলা জুটিটি ভেঙ্গে যায়। এরপর সৌম্য ও ইমরুল মিলেও ভাল ব্যাটিং করছিলেন। দুইজন মিলে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ১৩০ রানে গিয়ে ৩৫ রানের জুটি হতেই সৌম্য আউট হয়ে যান। সান্দাকানের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে যান। আউট হওয়ার আগে অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি করেন। ১২১ বলে ৬ চারে ৬১ রানে আউট হন সৌম্য। তামিম এক রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেও ব্যর্থ হননি সৌম্য সরকার। ক্যারিয়ারের চতুথ টেস্ট হাফসেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন এ ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তবে টানা তৃতীয় ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করলেন। গলে দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করার পর কলম্বোতেও প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি উপহার দিলেন। তামিমের বিদায়ের পর তার ব্যাটে ভর করেই জবাব দিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেই জবাব বেশিক্ষণ দিতে পারেননি সৌম্য। তামিম যখন আউট হন, তখন সৌম্যের স্কোরবোর্ডে ৪০ রান ছিল। এরপর আর ২১ রান যোগ করতেই আউট হয়ে যান তিনি। শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৩৮ রানে। এরপর দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নেমে বেশ ভাল শুরু করে বাংলাদেশ। দেখে শুনেই খেলছিলেন তামিম ও সৌম্য। দুইজন যখন আউট হন, তখন ইমরুল ও সাব্বিরের ওপর দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বভার পড়ে। দুইজনই একের পর এক ‘নতুন জীবন’ পান। সেই জীবনগুলো পেয়ে ইমরুল ও সাব্বিরও দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। হঠাৎ করেই সব ওলট-পালট হয়ে গেল। তৃতীয় উইকেটে দুইজন মিলে যেই ৬২ রানের জুটি হলো, ইমরুল (৩৪) আউট হয়ে গেলেন। দেখতে দেখতে ৬ রানের মধ্যে আরও দুটি উইকেট গেল। ‘নাইটওয়াচম্যান’ হয়ে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা খোলার আগেই তাইজুল সাজঘরে ফিরলেন। আর সাব্বির (৪২) ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করতে থেকে একটা সময় গিয়ে বাজেভাবে শট খেলে আউট হয়ে গেলেন। ১৯২ রান পর্যন্ত যেখানে বাংলাদেশের ২ উইকেটের পতন ঘটেছিল, সেখানে আর ৬ রান হতেই নেই তিন উইকেট। দিনের আর মাত্র ওভার বাকি থাকতেই দিনটি ম্লান হয়ে গেল বাংলাদেশের। দলের বারোটা বেজে যেত। যদি ১৫ রানে থাকা সাকিব ‘নতুন জীবন’ না পেতেন। ক্যাচ আউট হওয়া থেকে না বাঁচতেন। তাহলে ৬ উইকেটের পতন নিয়ে দ্বিতীয়দিন শেষ করতে হত বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেট হাতে নিয়েই দ্বিতীয়দিন শেষ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এমন দুই ব্যাটসম্যান এখন উইকেটে আছেন, যাদের ওপর ভরসা করা যায়। যে দুইজন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ টেস্ট জুটিটিও করেছেন। সাকিব ও মুশফিকই এখন তাই ভরসা। টেস্টে ভাল কিছু করতে হলে এ দুইজনকেই এখন হাল ধরতে হবে। পারবেন তারা দলকে এগিয়ে নিয়ে যেতে? শ্রীলঙ্কার ইনিংসের পাল্টা জবাবটি ভাল দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু শেষবেলার ধাক্কাতেই সব ম্লান হয়ে গেল। প্রথমদিন শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান করেছিল। মনে হচ্ছিল, ২৫০ রানও করতে পারবেন লঙ্কানরা। সকালের সেশনে যে ব্যাটসম্যানদের দ্রুতই আউট হওয়ার প্রবণতা থাকে। কিন্তু দিনেশ চান্দিমাল প্রথমদিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। প্রথমদিন ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন চান্দিমাল। দ্বিতীয় দিন সেই রানকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করে আরও এগিয়ে যান। ১৩৮ রান করে চান্দিমাল আউট হন ঠিক, কিন্তু ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা তিন শ’ রানও করে ফেলে। চান্দিমালকে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যান হেরাথ। আগেরদিন ১৮ রানে অপরাজিত থাকা টেস্ট অধিনায়ক হেরাথ দ্বিতীয় দিনে ২৫ রান করে আউট হন। তবে খেলেন ৯১ বল। এর পাশাপাশি চান্দিমালের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে ৫৫ রানের জুটিও গড়েন। নবম উইকেটেও চান্দিমাল-লাকমাল মিলে যখন ৫৫ রানের জুটি গড়েন, তখনই লঙ্কানরা তিন শ’ রানের খোঁজ পেয়ে যায়। শেষপর্যন্ত ৩০৫ রানে গিয়ে চান্দিমাল ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ১৩৮ রান করে আউট হন। শেষপর্যন্ত ৩৩৮ রানে নিয়ে যখন লাকমালও (৩৫) সাজঘরে ফেরেন, শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়ে যায়। সাব্বির রহমান রুম্মন প্রথমদিনের খেলা শেষে বলেছিলেন, ‘দ্বিতীয় দিনে দ্রুত তিন উইকেট (শ্রীলঙ্কার) তুলে নেয়ার চেষ্টা করব। প্রথম ঘণ্টায় আউট করতে পারলে আশা করি ৩০০ রানের মধ্যে আটকে রাখতে পারব।’ তিন শ’ রানের মধ্যে অলআউট করা গেল না। আবার দ্রুত তিন উইকেট তুলেও নেয়া গেল না। অষ্টম ও নবম উইকেটই ডুবল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে চান্দিমালের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। সাব্বির বলেছিলেন, ‘দেশের জন্য শততম টেস্ট জিততে চাই। আমরা দলের এক শ’তম টেস্টের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। আমরা এখন ভাল অবস্থানে আছি। সবাই যেভাবেই হোক, এই ম্যাচটা জিততে চাই।’ সেই স্বাদ কি মিটবে?
×