ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২শ’ কোটি ডলারে প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর

শেভরন বাংলাদেশ ॥ কিনে নিচ্ছে চীনের ঝেনহুয়া

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শেভরন বাংলাদেশ ॥ কিনে নিচ্ছে চীনের ঝেনহুয়া

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে শেভরনের মালিকানাধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত সেটি আর হলো না। বাংলাদেশে থাকা শেভরনের সম্পদ ২০০ কোটি ডলারে কেনার বিষয়ে একটি প্রাথমিক চুক্তিতে সই করেছে শেভরন ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঝেনহুয়া অয়েল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ঝেনহুয়া অয়েলের দুই নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শেভরনের গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার বিষয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলাই অগ্রাধিকার পাবে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি অর্থায়নের বিষয়ে আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শেভরনের সম্পদের দাম ১০০ কোটি ডলারের বেশি বলা হয়নি। এ লক্ষে আন্তর্জাতিক জ্বালানি উপদেষ্টা উড ম্যাকেঞ্জিকে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তারা শেভরনের সম্পদ মূল্য নিরূপণ ও ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে। শেভরনের সঙ্গে এই চুক্তি হলে দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে এটিই হবে ঝেনহুয়া অয়েল প্রথম বড় কোন বিনিয়োগ। ঝেনহুয়া অয়েলের মুখপাত্র ঝ্যাং শিয়াওদি রয়টার্সকে বলেছেন, যেহেতু প্রকল্পটি এখনও প্রক্রিয়াধীন এবং বাণিজ্যিক আলোচনার মধ্যে আছে। কোম্পানির কৌশলহেতু এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাচ্ছে না। পেট্রোবাংলার তথ্য মতে, ১৯৯৪ সালে সরকারের সঙ্গে উৎপাদন অংশীদারিত্ব চুক্তির (পিএসসি) পর ২০১৫ সাল পর্যন্ত গ্যাস উত্তোলনে প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে প্রায় ২৫০ কোটি ডলার। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট তিনটি ব্লকে গ্যাস উত্তোলনের দায়িত্বে আছে শেভরন। সম্মিলিতভাবে এ তিনটি ব্লকে এক বছরের ব্যবধানে শেভরনের বিনিয়োগ (মূলধনী ও পরিচালন) কমেছে ১৯ শতাংশ। এ তিন ব্লকে ২০১৪ সালে শেভরনের মোট মূলধনী ও পরিচালন ব্যয় ছিল ৪১ কোটি ২৯ লাখ ডলার। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ ডলারে। আর ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসেবে দুই বছরে বাংলাদেশে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ২২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। পেট্রোবাংলা ও বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশে শেভরনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ রয়েছে ১২নং ব্লক বা বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে। ২০১৩ সালে এ ব্লকে মূলধনী ও পরিচালন ব্যয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগ ছিল ৪১ কোটি ৮৭ লাখ ডলার। ২০১৪ সালে সেখানে বিনিয়োগের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৯২ লাখ ডলারে। ২০১৫ সালে এ বিনিয়োগ আরও কমে ২৩ কোটি ৩২ লাখ ডলারে নেমে আসে। এ হিসেবে শুধু বিবিয়ানাতেই দুই বছরে শেভরনের বিনিয়োগ কমেছে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এদিকে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে বিনিয়োগ কমলেও মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে মূলধনী ও পরিচালন ব্যয় বেড়েছে শেভরনের। যদিও বাংলাদেশে শেভরনের মোট বিনিয়োগের তুলনায় এ দুই গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগের পরিমাণ খুবই কম। ২০১৫ সাল শেষে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির মূলধনী ও পরিচালন ব্যয় ছিল ১ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। একই সময়ে জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে ৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয় করে শেভরন। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত শেভরনের সব ব্লকের প্লান্ট ও প্রধান কার্যালয়সহ কর্মী সংখ্যা ছিল প্রায় ১ হাজার। এরা সবাই অস্থায়ী ও চুক্তিভিত্তিক পন্থায় বাংলাদেশ কার্যালয়ের মাধ্যমে শেভরনের হয়ে গ্যাস উত্তোলন কাজে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু শেভরন চুক্তিভিত্তিক কর্মীর সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করায় এখন এ ধরনের কর্মী ২০ শতাংশ কমে ৮০০ জনের নিচে দাঁড়িয়েছে। জানা গেছে, সম্প্রতি কাজাখস্তানে প্রকল্প সম্প্রসারণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে শেভরন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফায়। ২০১৬ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির লোকসান দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ফলে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করতে তারল্য সঙ্কটে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশসহ কিছু দেশের ব্যবসা বিক্রির এই পরিকল্পনা করছে শেভরন।
×