ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

ছোটদের সরবতায় শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭

ছোটদের সরবতায় শিশু চলচ্চিত্র উৎসবের সমাপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব মিলিয়ে আয়োজনটির মূল স্বার্থকতা হচ্ছে শিশুদের সরব অংশগ্রহণ। প্রদর্শিত হলো শিশু কিংবা কিশোরদের নির্মিত অসংখ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র। ছোটরাই আবার সপ্তাহজুড়ে দেখল সেসব ছবি। প্রতিদিন রাজধানীর কয়েকটি ভেন্যুতে চলেছে এই প্রদর্শনী। এমনকি পুরো উৎসবের তত্ত্বাবধানেও ছিল বিপুলসংখ্যক এই ছোটদের দলটি। আর এভাবেই ছোটদের বিপুলা কর্মযজ্ঞে যেন শিশুরাজ্যে পরিণত হয় দশম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব। শিশুদের প্রাণচাঞ্চল্য আর সুন্দরের প্রকাশে সোমবার শেষ হলো এ উৎসব। সমাপনী অনুষ্ঠানে ক্ষুদে নির্মাতাদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। শিশুদের কল্পনা ও চিন্তাশক্তি বিকাশের লক্ষ্যে ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ সেøাগানে এ উৎসবের আয়োজন করে চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ। সমাপনী আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয় উৎসবের মূল ভেন্যু সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। এছাড়া সমাপনী আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিলেন উৎসবের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফা মনোয়ার, চিলড্রেনস ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশ-এর সভাপতি ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল ও সাধারণ সম্পাদক মুনিরা মোরশেদ মুন্নী, উৎসব উপদেষ্টা মোরশেদুল ইসলাম এবং উৎসব পরিচালক আবীর ফেরদৌস। সমাপনী অনুষ্ঠানে বিজয়ী ক্ষুদে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের পুরস্কৃত করা হয়। শিশু নির্মাতাদের প্রতিযোগিতায় সেরা ছবির পুরস্কার পেয়েছে রিয়াদ সান এবং নাহিদ পারভেজ নির্মিত ছবি ‘দ্য পাপেট শো’। দ্বিতীয় সেরা ছবি নির্বাচিত হয়েছে নাবিদ হাসনাত ও শিফাতুল অপূর্ব নির্মিত ছবি ‘বাক্সবন্দী’। তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে সাইয়েদুল আবরারের ‘এ্যালান কুর্দি ফ্রম হেভেন’ নামের এ্যানিমেটেড ছবি। বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে সুমাইতা শামা নির্মিত ‘এনমেস্ড বোরডোম’ এবং তারিকুল হাসানের ‘ইনার প্যারালেলিজম’। আন্তর্জাতিক শিশু নির্মাতাদের প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছে এ্যাস্টোন ব্রাউন ও জর্জ পোপল নির্মিত অস্ট্রেলিয়ার ছবি ‘ইন মেমোরি’। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগে বড়দের তৈরি ছবির মধ্যে ছিল তিনটি পুরস্কার। যেখানে সেরা ফিচার ফিল্ম পুরস্কার পেয়েছে জার্মানির ছবি ‘এ্যাট আই লেভেল’। সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের ছবি ‘হাইডি এ্যাট দ্য ফলি আর্টিস্ট’। সেরা পরিচালকের পদকটি পেয়েছেন বুলগেরিয়ার পরিচালক রিসতো সিমেওনভ। এছাড়া উৎসবে ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের বিভাগে পুরস্কার পায় হেমন্ত সাদিকের পরিচালনায় ছবি ‘আ লেটার টু গড’। ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ’ বিষয়ে সামাজিক চলচ্চিত্র বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে ‘খেলাঘর’ নামের একটি স্টপমোশন এ্যানিমেশন। সমাপনী দিনে সকাল ১১টায় শওকত ওসমান হলে প্রদর্শিত ভারতের ছবিগুলো হলো ‘এলাইক’, ‘রেইনবো ফিল্ডস’, ‘ড্যাডো’, ‘দাদ্দু’, ‘আইজ অন ইউ’ ও ‘মানু রানজান ডেইলি’। একই সময়সূচীতে দেখানো হয় ইরানের ছবি ‘দ্য উইন্ড সাডেনলি’, সাইবেরিয়ার ‘আ টেস্ট অব রেজিন’, রাশিয়ার চলচ্চিত্র ‘হোয়াই ব্যানানা স্নার্ল’, আয়ারল্যান্ডের ছবি ‘দ্য লাস্ট র‌্যাংলার’, অস্টেলিয়ার ‘মারুলান এ্যান্ড দ্য ম্যাজিক সোপ’ ও ইতালির ‘ম্যাটিয়া ক্যান ফ্লাই’। দুপুর দুইটার সময়সূচীতেও দেখানো হয় অনেকগুলো ছবি। ২৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ উৎসবে ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুরের মোট ১১টি ভেন্যুতে ৫৪টি দেশের দুই শতাধিক শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। সীমান্ত গ্রন্থাগারের ‘নব আনন্দে জাগো’ ॥ সময়ের স্রোতধারায় রাজধানীর গেন্ডারিয়ার সীমান্ত গ্রন্থাগার ও সীমান্ত খেলাঘর আসর পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর। ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার গ্রন্থাগারের সাহারা সীমান্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো ‘নব আনন্দে জাগো’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. হায়াৎ মামুদ এবং দৈনিক সমকালের সম্পাদক ও সীমান্ত খেলাঘরের সাবেক সভাপতি গোলাম সারওয়ার। স্বাগত বক্তব্য দেন অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মানজার চৌধুরী সুইট। গ্রন্থাগারের সভাপতি মোরশেদ আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন গ্রন্থাগারের সংস্কারকৃত স্থাপনার পৃষ্ঠপোষক গোলাম মাওলা কায়েস, গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক কাজী সুলতান আহমেদ টোকন, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের চেয়ারপার্সন অধ্যাপক মাহফুজা খানম ও সাধারণ সম্পাদক মোকলেছুর রহমান সাগর । আয়োজনের শুরুতেই সংস্কৃতিমন্ত্রী গ্রন্থাগারের সংস্কারকৃত স্থাপনাসমূহের ফলক উন্মোচন করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, আমরা একদিকে যেমন এদেশকে একটি মানবিক অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, অন্যদিকে আবার আশাহত হচ্ছি। কারণ এখন আমাদের মধ্যে সংস্কৃতি চর্চা কমে যাচ্ছে, পাঠাভ্যাস আশানুরূপভাবে গড়ে উঠছে না। আমাদের সম্মিলিতভাবে এর কারণ ও প্রতিকার খুঁজে বের করতে হবে। এক্ষেত্রে সীমান্ত গ্রন্থাগার ও খেলাঘর আসরের কার্যক্রম আমাদের আশান্বিত করে। শিশুদের সংস্কৃতিচর্চায় যুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, শিল্প সংস্কৃতির চর্চা ও পাঠাভ্যাস বৃদ্ধি ছাড়া মানবিক সমাজ গড়ে উঠবে না। অথচ আমাদের শিশুরা শুধু বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকে। তাদের জীবনে ফুল পাখি নদী আকাশ শিল্প সংস্কৃতি নেই। তাই পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতিচর্চায় উদ্বুদ্ধ করতে অভিভাবক ও শিক্ষকম-লীসহ সবাইকে বিশেষ ভূমিকা রাখতে হবে। পাঠ্যপুস্তকে ভুল এবং সংযোজন বিয়োজনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আমাদের সমাজে ঘাপটি মেরে আছে এবং অত্যন্ত সুকৌশলে এসব অপকর্ম করছে। এরা অর্থনীতি সমাজনীতি রাজনীতিসহ নীতিনির্ধারণী বিষয়গুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে রয়েছে। এদের বিষয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
×