ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ আসমান

অভিমত ॥ রামপালে এত বিরোধিতা কেন?

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ২৯ জানুয়ারি ২০১৭

অভিমত ॥ রামপালে এত বিরোধিতা কেন?

শেখ হাসিনার ভিশন-২০২১ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বৃহত্তম বদ্বীপ সুন্দরবন। যার আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কি.মি। বাংলাদেশ এবং ভারত দু’দেশজুড়েই জালের মতো ছড়িয়ে আছে সুন্দরবন। যার বেশিরভাগ অংশই আবার বাংলাদেশের। প্রায় ৬,০১৬ কি.মি। যা পুরো সুন্দরবনের মোট আয়তনের প্রায় ৬২ শতাংশ। সুন্দরবন ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, অন্যদিকে এটি রামসার সাইটেরও অন্তর্ভুক্ত। সুন্দরবন ১৯৯৭ সালে টঘঊঝঈঙ কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের মর্যাদা পায়। সে সময়ও ক্ষমতায় ছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যিনি সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলা করে পরিবেশ রক্ষার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সর্বোচ্চ পদক ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হন। যখন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে, তখন খুব সূক্ষ্মভাবে একটি মহল রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রকে ইস্যু করে সুন্দরবন ধ্বংসের বায়বীয় অভিযোগ তুলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে তারা অর্ধদিবস হরতালও পালন করেছে। বিরুদ্ধবাদীদের বায়বীয় অভিযোগ জানার পূর্বে আমাদের ধারণা থাকতে হবে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র কেন প্রয়োজন? বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পূর্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নের কথা উল্লেখ করেছিল নির্বাচনী ইশতেহারে। ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এই মুহূর্তে এগিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। যার মেয়াদ ২০১৬-২০২০। এ সময়ে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৩ হাজার মেগাওয়াট। সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অন্যতম একটি লক্ষ্য হচ্ছে ১ কোটি ২৯ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। যার মধ্যে ১০ লাখ কর্মসংস্থান হবে দেশের বাইরে, আর বাকি ১ কোটি ১৯ লাখ আমাদের অভ্যন্তরীণ। তার জন্য প্রয়োজন বিশাল বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো। সে লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রায় ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। যার মধ্যে ১০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল খুব শীঘ্রই আলোর মুখ দেখবে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করবে বড় বড় বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। আর তার জন্য প্রয়োজন হবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত। জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ পাবে না, অন্যদিকে সরকারের যে ১ কোটি ২৯ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য সেটাও পূরণ হবে না। তাতে বেকারত্বের হার বাড়বে, প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী হবে। বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ থেকে আবার নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্ন অনেকের। তাই বিশেষ মহলের ইন্ধনে চলছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। সুন্দরবন ধ্বংসের ইঙ্গিত সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। একেই বলে মা’র চেয়ে মাসির দরদ বেশি। কার দরদ বেশি তা বুঝতে হলে কিছু পদক্ষেপের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। ২০১১ সালে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা ১৮(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন করেন। যাতে লিপিবদ্ধ আছে- ‘রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন।’ অর্থাৎ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বাংলাদেশের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এ সাংবিধানিক অঙ্গীকার রক্ষার্থে জাতীয় সংসদে ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন পাস করা হয়। অপরদিকে, ২৩ নবেম্বর ২০১৫ মন্ত্রিসভায় সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে জীববৈচিত্র্য আইন ২০১৫-এর অনুমোদন দেয়া হয়। এ সবই করা হয় শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিজস্ব তহবিলে জলবায়ু ফান্ড গঠন করে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপপ্রভাব মোকাবেলার জন্য ৪ হাজার কোটি টাকার ফান্ড গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক দশক আগেও বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ পরিচিত ছিল ঝড়-বন্যা-ঘূর্ণিঝড়ের দেশ হিসেবে। আজ সবাই জানে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ। যার মূল কারিগর শেখ হাসিনা। যিনি সাংবিধানিক সুরক্ষার মাধ্যমে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পরিবেশের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছেন। জানা যায়, সারাবিশ্বে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রে ৩ ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়- ১. সাব ক্রিটিক্যাল ২. সুপার ক্রিটিক্যাল ৩. আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল। রামপালে ব্যবহার হবে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি, যা সর্বাধুনিক। যাতে ব্যবহার করা হবে সর্বনিম্ন পরিমাণের সালফারযুক্ত উন্নতমানের কয়লা। ঋএউ (ঋষঁব এধং উবংঁষঢ়যঁৎরুধঃরড়হ) ব্যবহার করা হবে এবং এতে প্রায় ৯৫ শতাংশ ক্ষতিকর উপাদান শোষণ করা হবে। এই প্রযুক্তি সর্বাধুনিক সকল তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয় এবং এতে পরিবেশের বড় ধরনের কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে না। তাই সুন্দরবন থেকে ১৬ কিলোমিটার নিরাপদ দূরত্বে রামপালে সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। মনে রাখা দরকার রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বাংলাদেশে প্রথম কোন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নয়। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়াতে দেশের প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র গড়ে উঠে। যাতে সাব-ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা এমন কোন প্রমাণ পাইনি যাতে দৃশ্যমান হয়েছে পরিবেশের ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাহলে রামপালের ক্ষেত্রে এত ব্যাখ্যা কেন? অথচ বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে রামপাল আরও বেশি আধুনিক। মাত্র এক দশক আগেও বিদ্যুতের দাবিতে কানসাট, শনিরআখড়ায় মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। কিন্তু আজ দেশের ৭৪% মানুষ বিদ্যুত সুবিধার আওতায়। শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই কেবল তা সম্ভব হয়েছে। আজ যারা রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতা করছে তাদের আসল সমস্যা রামপাল না, আসল সমস্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তাদের বিরোধিতা ডিঙ্গিয়ে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছে। তেমনি সামনের দিনেও রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, পদ্মা সেতুসহ বড় সকল প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে দেশকে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবেন এই বিশ্বাস আমাদের রয়েছে। লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা
×