ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

কনকনে ঠা-ায় চরম জনদুর্ভোগ

মাঘের শুরুতেই বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, কাঁপছে দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

মাঘের শুরুতেই বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, কাঁপছে দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাঘের শুরুতেই শীতে কাঁপছে দেশ। বইছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। কনকনে ঠা-ায় দুর্ভোগ বেড়েছে দেশবাসীর। উত্তুরে ঠা-া বাতাস ও তাপমাত্রার অব্যাহত হ্রাস শীতের তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। পাশাপাশি রয়েছে কুয়াশা এবং দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস। এই পার্থক্য যতই হ্রাস পাবে ততই শীতের তীব্রতা বাড়বে। এদিকে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ক্লিনিকে, হাসপাতালে। উত্তরাঞ্চলে দিনের বেলাতেও থাকে ঘন কুয়াশা। ঘন কুয়াশায় যান চলাচল চরম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক এলাকায় গত কয়েকদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এতে সাময়িকভাবে বন্ধ থাকছে ধানের চাতালগুলো। দাম বেড়েছে শীতবস্ত্রের। উত্তরাঞ্চলে শীতবস্ত্রের অভাবে শত শত দরিদ্র পরিবার কষ্ট পাচ্ছে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। আজ রবিবারও দেশের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সারাদেশে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা টেকনাফে ২৫.৮ এবং সর্বনিম্ন কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। অর্থাৎ শুক্রবারের তুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় দশমিক ৪ ডিগ্রী সে. ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি হ্রাস পেয়েছে। এভাবে শনিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পায়। দেশের সব ক’টি সেন্টারের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সর্বোচ্চ ও সবনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাচ্ছে। ঠা-া বাতাস ও কুয়াশার পাশাপাশি তাপমাত্রা এভাবে চলতে থাকলে শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। শনিবারও সারাদেশে অনুভূত হয় তীব্র শীত। রাজধানীবাসীও কনকনে শীত থেকে রেহাই পায়নি। সূর্যের মুখ দেখা গেলেও ঠা-া বাতাসে রাজধানীতে দিনের অধিকাংশ সময় শীত অনুভূত হয়। বিকেল সাড়ে তিনটার পর রাজধানীর আকাশ মেঘলা হয়ে ওঠে। বাড়তে থাকে ঠা-া বাতাসের দাপট। অধিকাংশ লোকজনকে দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। গরম কাপড় দোকানগুলোতে মানুষের ঢল নামে। এ সুযোগে বেড়ে যায় গরম কাপড়ের দাম। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, দেশের শ্রীমঙ্গল, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও চুয়াডাঙ্গায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং দেশের বরিশাল বিভাগ ও ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সীতাকু-, রাঙামাটি, কুমিল্লা, ফেনী, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, সৈয়দপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়ায় মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা আজ রবিবারও অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, বাংলাদেশে জানুয়ারিতে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’টি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর দেশের অন্যত্র বয়ে যেতে পারে এক থেকে দু’টি মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। জানুয়ারি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি/ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হাল্কা/মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। তবে সারাদেশে একটানা তিন থেকে চারদিন ঘন/মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। আর ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদ-নদীর অববাহিকা ও অন্যত্র সকালের দিকে হাল্কা/ মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১/২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদাতাদের । কুড়িগ্রাম॥ কুড়িগ্রামে কনকনে ঠা-ার কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপ চরে বেশি ঠা-া অনুভূত হওয়ায় সেখানকার মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। এছাড়া গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগে পড়েছে ছিন্নমূল ও দিনমজুর শ্রেণীর মানুষ। সন্ধ্যার পর উত্তুরে হিমেল হাওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা বাড়ে । এদিকে ঠা-ার প্রভাবে ডায়রিয়া, সর্র্দি, কাশি ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগ বেড়েছে। শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত রোগে আক্রন্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এ ছাড়াও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে দেড় শ’ থেকে দু’শ’ রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। রাজশাহী ॥ তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হানা দিয়েছে রাজশাহী অঞ্চলে। একদিনের ব্যবধানে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমে রাজশাহীতে শনিবার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রিতে। দিনের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক হ্রাস পাওয়ায় রীতিমতো কাঁপছে রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। ছিন্নমূল ও শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। সকাল থেকে সূর্য কিরণ ছড়ালেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে তা কাজে আসছে না। এদিকে হঠাৎ হাড়কাঁপানো এ তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছে নানা বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষ। এদিকে তীব্র শীতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এ পরিস্থিতিতে শিশুদের বাড়তি যতœ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। নীলফামারী ॥ গত দুই দিন ধরে উত্তরের তিস্তা নদী বিধৌত নীলফামারী জেলা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে শৈত্যপ্রবাহ যেন সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। শনিবার নীলফামারীর ডিমলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানায় ডিমলা আবহাওয়া অফিস। সূত্র মতে, তাপমাত্রা আরও নিচে নামবে এবং শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। দিনাজপুর ॥ হিমালয়ের কোলঘেঁষে উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। শনিবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। দিনাজপুর আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী কর্মকর্তা আশিকুর রহমান জানান, শীতের তীব্রতা গত ৩ দিন থেকে বেড়ে গেছে। আগামী ৪/৫ দিন এই অবস্থা অব্যাহত থাকবে। এরপর তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং শীতের তীব্রতাও কমে যাবে। মৌলভীবাজার ॥ এ জেলায় হঠাৎ করেই যেন শীত জেঁকে বসেছে। শ্রীমঙ্গলে শনিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৫.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাতে কুয়াশা কম থাকায় শীতের তীব্রতা বেড়ে গেছে। পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়ার এ অবস্থা আরও কয়েকদিন এভাবে থাকতে পারে। হঠাৎ করে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় শীত ও শীতজনিত বিভিন্ন রোগে শিশু ও বৃদ্ধ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জয়পুরহাট ॥ শুক্রবার থেকে প্রচ- শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুরে রোদ বের হলেও বাতাস থাকায় শীতের তীব্রতা কমেনি। বিকেলে শীত আরও জেঁকে বসে। এ অবস্থায় দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরম বেড়েছে। কুলি, মজুর, রিক্সা চালকরা সন্ধ্যার আগেই ঘরমুখো হয়ে পড়েছে।
×