ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি হচ্ছে ৫০টি দেশে ॥ সবজি চাষে বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৫ জানুয়ারি ২০১৭

রফতানি হচ্ছে ৫০টি দেশে ॥ সবজি চাষে বিপ্লব

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট থেকে ॥ সবজি চাষে রংপুরের চরাঞ্চলে বিপ্লব ঘটে গেছে। চরের সবজি এখন ৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এই রফতানি হতে বছরে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। অর্থকরী সফল হিসেবে সবজি চাষ করে কৃষক লাভের মুখ দেখছে। তাই শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত তরুণরাও সবজি চাষে ঝঁকে পড়েছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশ সবজি চাষে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার(এফএও) তথ্য মতে, গত চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে সবজি চাষের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ। বেড়েছে জমির পরিমাণও। গত এক দশকে সবজি চাষের পরিমাণ বেড়েছে ৫ শতাংশ হারে। ২০১৬- ২০১৭ অর্থবছরে রবি মৌসুমে ৫দশমিক ২৮ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর এই জমির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ১০ লাখ হেক্টর । কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে ২০১৩- ২০১৪ সালে দেশে এক কোটি ৩৯ লাখ টন সবজি উৎপাদন হয়। তিন বছরে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হার প্রায় ৬শতাংশ। রংপুর অঞ্চলে তামাকের পরিবর্তে অর্থকরী কৃষি ফসল হিসেবে সবজি চাষের দিকে কৃষক ঝুঁকছে। বিশেষ করে তরুণ কৃষকরা বেশি হারে সবজি চাষে মনোযোগ দিয়েছে। সবজি চাষে জমির পরিমাণও ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে উত্তরের বড় বড় নদী ধরলা, তিস্তা, সানিয়াজান, করতোয়ায় এখন বছরের নয় মাস পানি থাকে না। জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। এই সব চরে সেচের সুবিধা সৃষ্টি করে লাগসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৯ মাস নানা জাতের সবজিসহ ফসল ফলাচ্ছে কৃষক। তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান ও রতœাই নদীর চরে কৃষক আলু, টমেট, মুলা, ফুলকপি, বাঁধা কপি, পেঁপে, লাউ, মাটিয়া কুমড়া ( মিষ্টি জাতের কুমড়া), ধান, পাট, ধনিয়া, পেঁয়াজ, মরিচ,সরিষা, ভুট্টাসহ নানা ফসল ফলাচ্ছে। সবজি চাষে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। চীন, ভারতের পরে বাংলাদেশের স্থান। বাংলাদেশের সবজি প্রায় ৫০টি দেশে রফতানি হচ্ছে। এই রফতানি আয়ের পরিমাণ প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তরুণ কৃষক কীটনাশক ব্যবহার না করে অর্গ্যানিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছে। ব্যাপক হারে ফলন হচ্ছে। কৃষক দামও পাচ্ছে। তাই তামাক চাষের আধিক্য রংপুর অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে। অর্থকরী ফসল হিসেবে সবজি চাষ লাভজনক হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বিশ্বে সবজি চাষে তৃতীয় স্থানে হলেও এখন পর্যন্ত জনসংখ্যার তুলনায় সবজি চাষে পিছিয়ে আছে। প্রতিদিন একজন মানুষের ১২০ গ্রাম সবজি খাওয়ার প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে তার বিপরীতে মাত্র ৮০ গ্রাম সবজি খেয়ে থাকে। এছাড়াও মোট উৎপাদিত সবজির প্রায় ৬০ শতাংশ সংরক্ষণের অভাবে প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যায়। ভোক্তার কাছে উৎপাদিত সবজির প্রায় ৪০ শতাংশ পৌঁছাচ্ছে। বাংলাদেশে শুধু নিজেদের দেশের সবজি নয় বিদেশী সবজিও চাষ হচ্ছে। খুচরা বাজারে গেলে চোখে পড়ে হরেক রকমের বিদেশী সবজি। বিদেশী এসব শাক-সবজির মধ্যে রয়েছে লেটুসপাতা, ব্রকলি,ক্যাপসিকাম, চেরি টমেট, চাইনিজ ক্যাবেজ প্রভৃতি। ৫০টি দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে । এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে ৬০ শতাংশ সবজি রফতানি হয়ে আসছে। এছাড়াও যেসব দেশে সবজি রফতানি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইডেন, ডেনমার্ক, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপান, সিঙ্গাপুর, ওমান। রফতানি করা সবজিÑআলু, বরবটি, শসা, চিচিঙ্গা, করলা, ক৭াকরোল, টমেটো, পেঁপে, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, কচুরলতা, মিষ্টি কুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, পালংশাক, বাঁধাকপি, কাঁচামরিচ, পটোল, শিমের বিচি, কাঁচকলা, কলার ফুল, কচুশাক , কাঁঠালের বিচি ও ডাঁটা শাক। চরাঞ্চলে সবজি চাষ লালমনিরহাট জেলায় ব্যান্ডিংয়ের মাত্রা পেয়েছে। এমন কোন চর নেই যেখানে সবজি চাষ হচ্ছে না। চরাঞ্চলগুলো একেকটি ছোট ছোট খাদ্যভা-ারে পরিণত হয়েছে। তবে সবজি চাষের অগ্রগতির সাথে সাথে সবজি বাজারজাতকরণ, বিপণন ও সংরক্ষণের তেমন কোন অগ্রগতি হয়নি। এখন পর্যন্ত কৃষকের চেয়ে ফড়িয়া ব্যবসায়িরা সবজিতে বেশি লাভবান হচ্ছে।
×