ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুশফিকের ব্যাট আবার হাসল

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

মুশফিকের ব্যাট আবার হাসল

মোঃ মামুন রশীদ ॥ বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরিয়ান তিনি। সেটাও আবার বিদেশের মাটিতে হাঁকিয়েছিলেন। কিন্তু এরপরও দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বাধিক টেস্ট খেলা মুশফিকুর রহীম রান করার দিক থেকে পিছিয়ে আছেন অনেকখানি। এর কারণ কিছু কিছু সময় বাজে যাওয়ার কারণে। যেমন গত ১৯টা ইনিংস এমনই খারাপ কেটেছে তার। সে কারণে তুমুল সমালোচনার মুখেও পড়েছিলেন। তিন ফরমেটেই তার ব্যাট কথা বলছিল না দীর্ঘদিন। তবে এবার নিউজিল্যান্ড সফরটাই পয়মন্ত হয়ে উঠেছে তার জন্য। ওয়ানডে সিরিজের এক ম্যাচ খেলে সেখানেই ভাল করেছেন। আবার টেস্ট সিরিজে মাঠে নেমেই হাঁকালেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। ওয়েলিংটনে চলমান প্রথম টেস্টের দ্বিতীয়দিনে বাংলাদেশ অধিনায়কের ব্যাট থেকে বেরিয়ে আসল ১৫৯ রানের দারুণ এক ইনিংস। ভেন্যুটির বেসিন রিজার্ভ মাঠের অনার্স বোর্ডেও নাম লিখিয়েছেন এর মাধ্যমে। আর পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের যে রেকর্ড জুটি হয়েছে সেখানে বিরাট অবদান রেখেছে তার এ ইনিংসটা। দেশের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলক থেকে আর ৯১ রান দূরে তিনি। এবার বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফর শুরু হয়েছে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে। প্রথম ওয়ানডে ম্যাচেই দারুণ ব্যাটিং করছিলেন। ৪২ রানে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে হ্যামস্ট্রিংয়ের তীব্র ইনজুরির কারণে। এরপর আর ফিরতে পারেননি, খেলা হয়নি বাকি দুই ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি২০। শঙ্কা ছিল টেস্ট সিরিজে খেলবেন কিনা সেটা নিয়েও। কিছুদিন আগেই ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট জয় করেছে বাংলাদেশ। আর বিজয়ী অধিনায়ক হিসেবে সবধরনের সমালোচনাই ঢেকে গিয়েছিল। তবে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের দিকটা বিবেচনা করলে চাপটা ছিলই মুশফিকের ওপর। একেতো দলের অধিনায়ক, তারপর আবার দলের মিডলঅর্ডার পুরোপুরিই নির্ভরশীল তার ওপর। মুশফিকের ধারাবাহিকতা, উইকেটে স্থিতি ইত্যাদি বিবেচনা করে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ নামটাও কামিয়েছিলেন। কিন্তু সর্বশেষ ১৯ টেস্ট ইনিংসে ব্যাট করে আহামরি কিছুই করতে পারেননি। এই কয়েকটি ইনিংস তিনি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত বছর অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত টানা দুই বছর ব্যাট হাতে সেই আস্থার প্রতিদান যেমন দিতে পারেননি, উল্টো ভয়াবহ রকমের ব্যর্থ ছিলেন। মাত্র দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছেন এর মধ্যে। ২০১৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কিংস্টনে শতক হাঁকিয়েছিলেন মুশফিক। এরপর দারুণ খরা গেছে তার ব্যাটে। ব্যাপক সমালোচিতও হয়েছেন। সেটা ধামাচাপা পড়ে গত অক্টোবরে শক্তিশালী ইংল্যান্ডকে টেস্টে বাংলাদেশ দল হারিয়ে দেয়ার কারণে। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে ভারমুক্ত হলেও ব্যাটসম্যান হিসেবে ঠিকই স্নায়ুচাপে ছিলেন। আর সদ্যই ইনজুরি কাটিয়ে ওয়েলিংটন টেস্টে খেলতে নেমেছেন। তীব্র বাতাসের সঙ্গে যেখানে ব্যাটসম্যানদের আরেকটি বাড়তি যুদ্ধ আছে। বেসিন রিজার্ভে দ্বিতীয়দিনের শুরুতেই দুর্দান্ত ব্যাট করা মুমিনুল হক ফিরে যান সাজঘরে। প্রতিবারই উইকেট হারানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ শিবিরে দানা বাঁধে বিপর্যয়ের শঙ্কা। মাত্র ১৬০ রানেই ৪ উইকেটের পতন খুব ভাল কিছু ইঙ্গিত দিচ্ছিল না। তবে মুশফিক নামার পর আর সেই শঙ্কা থাকল না সময় গড়াতেই। ততক্ষণে কিছুটা সেট হয়ে যাওয়া সাকিব আল হাসানের সঙ্গে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন পঞ্চম উইকেটে। আর কাটিয়ে দেন সব শঙ্কার কালো মেঘ। একবারই সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু কঠিন সেই সুযোগটা হাতে লুফতে পারেননি জিত র‌্যাভাল, তার আঙ্গুলে লেগেছিল উঠে যাওয়া ক্যাচটা। সেটাই একমাত্র ভুল ছিল মুশফিকের নিñিদ্র ইনিংসে। টেস্ট মেজাজে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে তিনি সেটার আরেকবার প্রমাণ দিয়ে সেঞ্চুরি আদায় করলেন। ২ বছর ৪ মাস পর ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন। আশ্চর্যজনকভাবে মুশফিকের চারটি টেস্ট সেঞ্চুরির ৩টিই দেশের বাইরে। দেশের বাইরে সমান তিনটি করে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে মোহাম্মদ আশরাফুল ও তামিম ইকবালের। মুশফিক ২০১০ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন ৩৩তম টেস্ট ইনিংসে। সেটা চট্টগ্রামের মাটিতে ভারতের বিরুদ্ধে ১০ জানুয়ারি শুরু হওয়া টেস্টের ঘটনা। এরপর যে তিনটি শতক হাঁকিয়েছেন সবগুলোই দেশের বাইরে। ২৬ ইনিংস পর দ্বিতীয় শতক ৮ মার্চ ২০১৩ গলে শুরু হওয়া টেস্টে। এবার ডাবল সেঞ্চুরি করে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওই কীর্তি গড়ার ইতিহাস রচনা করলেন। এর মাত্র ১২ ইনিংস পরেই ছিল কিংস্টনে ১১৬। এবার ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে ১৫৯ রানের ইনিংস উপহার দিলেন। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেরা ইনিংস। ২৬০ বলে ২৩ চার ও ১ ছক্কায় এ রান করেন তিনি। লর্ডসের মতোই এ মাঠে শতক হাঁকালে নাম লেখা হয়ে যায় অনার্স বোর্ডে। ৫১তম টেস্টের ৯৩ ইনিংস খেলে ২৯০৯ রান করা মুশফিক এখন হাবিবুল বাশার, তামিম ইকবাল ও সাকিবের পর চতুর্থ বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৩ হাজার রানের কাছাকাছি। মুশফিক এমন নৈপুন্য নিয়ে বলেন, ‘মাত্র দুইদিনের খেলা শেষ হলো। এখনও তিনদিন আর তিন ইনিংস বাকি। আমাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে। তবে হ্যাঁ, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, তাতে অনেক তৃপ্তি তো আছেই। উইকেট অনেক ভাল আচরণ করছে। তবে এই উইকেটে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে নিউজিল্যান্ডের জন্য কাজটা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।’
×