ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুদীপ্ত ধ্রুব

বিশ্বজয়ী দেবযানীর গল্প

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

বিশ্বজয়ী দেবযানীর গল্প

দেবযানী ঘোষ জন্ম ১৯৮৮ সালে ৩০ অক্টোবর বাবা দীপক কুমার ঘোষ এবং মা ইন্দিরা ঘোষ পেশায় দু’জনই শিক্ষক। দুই বোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোট বোন দেবশ্রী ঘোষ চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী নিয়েছেন। ছোট বেলা থেকেই দেবযানী খুব মেধাবী ছিলেন। বই পড়ার পোকা ছিল মাথার ভেতর নতুন কোন বই পেলেই সবার আগে পড়তেন তিনি। আর সময় পেলেই বসে পড়তেন ড্রয়িং করতে। চট্টগ্রাম পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে বেরিয়ে ভর্তি হন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশলে স্নাতক হওয়ার পর দেবযানী কিছুদিন শিক্ষকতা করেন চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটিতে। এরপর চলে যান জার্মানি। এখন পিএইচডি করছেন ইউনিভার্সিটি অব উলমে। বর্তমান শতকে বিমান নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আবিষ্কার নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। বিশেষ করে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মান, ব্রিটেন এবং চীনের বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরস্পরকে টেক্কা দেওয়ার মনোভাব বিরাজ করছে। সবারই একই লক্ষ্য যুদ্ধকৌশলে পারদর্শী, প্রতিপক্ষের রাডার ফাঁকি দেওয়া, ভারি অস্ত্র বহনে সক্ষমতার দিকে। কদিন পরপরই শোনা যায়, অমুক দেশ নতুন বিমান এনেছে, আবার তাকে টেক্কা দিতে দু’দিন পরেই অন্যদেশ নতুন প্রযুক্তির বিমান উড়ায়। এসব কিছুর মাঝে ও যাত্রী বিমানের ব্যবহারও বাড়ছে দিনে দিনে। বিশ্বে প্রতি দিন অন্তত কয়েক হাজার বিমান চলাচল করছে এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে। ফলে বিপুল সংখ্যক বিমান প্রতিনিয়ত জ্বালানি পুড়িয়ে নিঃসরণ করছে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন। যা বিপর্যয় ডেকে আনছে বিশ্বজলবায়ুর জন্য। আর সে ভাবনা থেকেই পরিবেশবান্ধব বিমান নির্মাণের উপায় খুঁজছে নির্মাতারা। সে প্রচেষ্টার সাফল্য হিসেবে গত ২৯ জার্মানির স্টুটগার্ট বিমানবন্দরে এইচওয়াই-৪ নামের একটি চার আসনের যাত্রীবাহী বিমানের সফল উড়াল সম্পন্ন হয় সেদিন। নতুন একটি উড়োজাহাজের উড্ডয়ন অবতরণ নতুন কোন ঘটনা নয়। কিন্তু এই ঘটনা ইতিহাস এ কারণে যে, এইচওয়াই-৪ হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম কার্বন নিঃসরণমুক্ত বিমান। যেটি চলে জ্বালানি কোষ ও ব্যাটারির সাহায্যে। এই বিমানের শব্দও কম। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ দেবযানীর জন্য স্মরণীয় একটি দিন। ঐ দিন দেবযানী ফেইস বুক স্ট্যাটাস এ বলেন “আজ জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন, এত দিন টিভিতে, মুভিতে নাসার কন্ট্রোল রুম টাইপ যে সিচুয়েশন দেখতাম, আজ নিজেই সে রকম একটা ‘ফিউচারিস্টিক’ ক্ষণে অংশ নিলাম। সম্ভবত আমিই একমাত্র নন-ইউরোপিয়ান হিসেবে আমন্ত্রিত ছিলাম, তবে এটা গর্বের বিষয় না, আসল গর্ব যখন বার বার বলছিলাম, আই অ্যাম ফ্রম বাংলাদেশ...।” এইচওয়াই-৪-এর উড়াল দেখতে এসেছিলেন অনেক গবেষক আর সেখানে আমাদের মেয়ে দর্শক হিসেবে ছিলেন না ছিলেন এই বিমান তৈরির একজন ‘কারিগর’ হিসেবে। এই বিমান প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক নেতৃত্বে আছে জার্মান এ্যারোস্পেস সেন্টার (ডিএলআর)। প্রধান গবেষণা অংশীদার ইউনিভার্সিটি অব উলম। ইউনিভার্সিটি অব উলমের গবেষণা দলে পিএইচডি গবেষক হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রামের মেয়ে দেবযানী ঘোষ। দলনেতা ড. জোসেফ কাল্লোসহ এ দলে সদস্য সংখ্যা তিন। বিমান নির্মাণের অংশীদার হিসেবে আছে পিপিস্ট্রেল, এইচটুফ্লাই, হাইড্রোজেনিক্স। দেবযানী এত সব কিছুর মাঝে ও প্রতিনিয়ত ভাবেন দেশের কথা ভাবেন প্রবাসী বাঙালীদের কথা। তারই বহিঃপ্রকাশ প্রবাসে ‘জার্মান প্রবাসে’ নামের ম্যাগাজিনটি। এই ম্যাগাজিনের সম্পাদক তিনি। শুরু“ থেকেই তাদের উদ্দেশ্য ছিল জার্মান প্রবাসীদের সুখ দুঃখের গল্প গাঁথা একটি কমন প্লাটফর্ম এ তুলে ধরা। সবাই যেন তার অভিজ্ঞতা অন্য সবার কাছে তুলে ধরতে পারে এই চিন্তা থেকে ২০১৪ সাল এর জানুয়ারি মাস থেকে প্রথম ম্যাগাজিন টা চালু করেন দেবযানী। প্রথম বছরেই প্রচুর সাড়া পান দেবযানী। ‘জার্মান প্রবাসে’ নাম হলেও এটি পৌঁছে গেছে বিশ্বের বুকে সব বাঙালীদের কাছে। তার সঙ্গে কাজ করছেন একদল উদ্যমী তরুণ। যারা জার্মানিতে গিয়ে পড়াশোনা করতে চান তাদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন তারা। তাছাড়া প্রবাসে জীবনধারা কেমন হয় তার সম্পর্কে ধারণা দেন তারা। ২০১৬ সালে দ্য বব্স প্রতিযোগিতায় ‘ইউজার’ এ্যাওয়াড জয় করে ‘জার্মান প্রবাসে’। তাদের গ্রুপে ৫৬ হাজারেরও বেশি সদস্য আছে যারা প্রতিনিয়ত যুক্ত আছেন একে অন্যের সঙ্গে। দেবযানী স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের মেয়েরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির দুনিয়ায় আরও বেশি এগিয়ে যাচ্ছে। একদিন বাংলাদেশের মেয়েরা বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দেশের নাম উজ্জ্বল করবে।
×