ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় নেতার দেহভস্ম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে

কিংবদন্তি বিপ্লবীকে বিদায় জানাতে হাভানায় মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ নভেম্বর ২০১৬

কিংবদন্তি বিপ্লবীকে বিদায় জানাতে হাভানায় মানুষের ঢল

হাজার হাজার শোকার্ত কিউবান সোমবার তাদের প্রিয় নেতাকে শেষ বিদায় জানিয়েছে। অনেকেই এ সময় লাল, সাদা ও নীল রঙের কিউবার পতাকা গায়ে জড়িয়ে হাভানার রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বেই দেশটিতে কমিউনিস্ট বিপ্লব হয়েছিল। তিনি পাঁচ দশক দেশটি শাসন করেন। শুক্রবার ৯০ বছর বয়সে হাভানায় মারা যান। খবর এবিসি নিউজের। গত এক দশক তিনি অবশ্য ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। ভাই রাউলের হাতে এখন দেশটির শাসনভার। যদিও ফিদেল আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতায় ছিলেন না। পুরো দেশের ওপর তার পরোক্ষ প্রভাব রয়েই গেছে। দরিদ্র দেশগুলোর বামঘেঁষা লোকজনের কাছে ফিদেল ক্যাস্ট্রো ছিলেন এমন বিপ্লবী নেতা যিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনে পরিবর্তন এনেছেন। আবার অনেকের কাছে তিনি ছিলেন একনায়ক, যার লৌহ কঠিন শাসনামলে কিউবার জনগণ নিষ্পেষিত হয়েছে, কিউবার অর্থনীতিও যেভাবে বিকশিত হওয়া প্রয়োজন ছিল সেভাবে হয়নি। ১০ বছর আগে যখন তিনি স্বাস্থ্যগত কারণে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান তখনও প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক ছিল চরম বৈরী। গত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিউবার সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার অনেক উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু আমেরিকার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তা ধরে রাখবেন কি না তা নিশ্চিত নয়। ওবামা যেভাবে কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে নজর দেন ভাই রাউলের তাতে ইতিবাচক সাড়া দেন। কিন্তু ফিদেল রাউলের সমঝোতা উদ্যোগকে খুব একটা ভাল দৃষ্টিতে দেখেননি। কমিউনিস্ট পার্টির সংবাদপত্র নিবন্ধ লিখে তিনি এ বিষয়ে নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। ওবামার সময় কিউবায় পাঁচ দশকের বেশি সময় পরে দূতাবাস খোলে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিমান পরিবহনও শুরু হয়। ‘ফিদেল বেঁচে থাকুন আমাদের হৃদয়ে, তাকে আমরা সব সময়ই অনুভব করব, তিনি সব সময়ই আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন’ বলছিলেন হাভানার রেভলুশন স্কয়ারে ক্যাস্ট্রোকে শেষ বিদায় জানাতে আসা জনৈক কিউবান। ৫৭ বছর বয়সী চিকিৎসক মারিয়া কারমেন বলছিলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। লেখাপড়া শুরুর প্রথম থেকে আমার চিকিৎসক হওয়া পর্যন্ত সবকিছুতে ফিদেলের অবদান রয়েছে বলে আমি মনে করি।’ সমাবেশে অংশ নেয়া লোকজন ‘আমরাই ফিদেল’ লেখা ব্যানার বহন করে। ফিদেলকে বিদায় জানাতে দুই দিনের আনুষ্ঠানিকতা সোমবার শুরু হয়। এতে যোগ দেয়ার জন্য সরকারীভাবে জনতার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। রেভলুশন স্কয়ারে সামরিক পোশাক পরা রাইফেল হাতে ক্যাস্ট্রোর অল্প বয়সের একটি ছবি রাখা হয়। ছবিটির সামনে দিয়ে হাজার হাজার লোক সারি বেঁধে যায়। শনিবার ফিদেলকে দাহ করা হয়। তার দেহভষ্ম আনুষ্ঠানিক শোভাযাত্রা সহকারে নিয়ে যাওয়া হবে কিউবার পূর্বাঞ্চলীয় সান্তিয়াগো দ্য কিউবায়। সেখান থেকেই একসময় বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন ফিদেল। হাভানা স্কায়ারে যোগ দিতে লোকজন ভোর চারটা থেকে সেখানে এসে লাইন দিতে শুরু করে। ‘কমান্দান্তে’ ফিদেলকে নিয়ে রেভলুশন স্কয়ারে দীর্ঘ উদ্দীপনাময়ী অনেক বক্তৃতা দিয়েছেন। স্প্যানিশ বচনে তাদের কণ্ঠে ছিল সেই বিদায়ের গান- ‘হাসতা সিয়েম্প্রে, কমান্দান্তো’ চিরকাল, হে কমান্ডার। ২১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে রেভলুশন স্কয়ারে মেমোরিয়াল সার্ভিসের সূচনা হয়। ফিদেলের মৃত্যুতে নয়দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে কিউবা। তার শেষ ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে শনিবার তার মৃতদেহ দাহ করা হয়। ফিদেলের রাজনৈতিক বিরোধীরা অবশ্য বিদায় অনুষ্ঠান নিয়ে কোন ক্ষোভ প্রাকাশ করেনি বা কোন রকম প্রতিবন্ধকতা আরোপের চেষ্টা করেনি।
×