ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে-

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ নভেম্বর ২০১৬

পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধিতে-

‘পুলিশ ছুঁলে আঠারো ঘা’- ঝুঁকিপূর্ণ একটি পেশার মানুষ সম্পর্কে এই আপ্তবাক্যটি যথেষ্ট জনপ্রিয়। তবে পুলিশও যে চাইলে অসাধ্য সাধন করতে পারে, হয়ে ওঠে জনবান্ধব- একথা স্বীকারে আমরা কৃপণতা করি। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূতের ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তস্কর পাকড়াও করে পুলিশ প্রমাণ করেছে তারা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারে। তাহলে কোন কোন ব্যাপারে তারা তেমন এ্যাকশনে যায় না কেন- এমন প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এই প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করতে গেলে বিবিধ বিষয় সামনে চলে আসে। বলাবাহুল্য পুলিশ বিভাগের কর্তব্যের প্রায়োরিটি নির্ধারণ এবং তার সঙ্গে আরও অনেক বিষয় জড়িত থাকায় কোন অপরাধ ধামাচাপা পড়ে যায়। আবার কোন অপরাধী ধরা পড়ে অপরাধের ‘গন্ধ’ টাটকা থাকতে থাকতেই। সর্বপ্রকার উন্নয়ন ও অগ্রগতির পূর্বশর্ত হলো শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে পুলিশের ওপর সমাজ নির্ভরশীল। বিশেষ করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশবাহিনীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুলিশের ওপর সাধারণ নাগরিকরা যেমন ভরসা করেন, তেমনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগেরও অন্ত নেই। পুলিশের দায়িত্বহীনতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্ন তোলা হয়। পুলিশের ভাল কাজ ছাপিয়ে তার দুর্নীতি ও কিছু গর্হিত অপরাধের কথা ফলাও করে প্রচারিত হওয়ার সংস্কৃতি থেকে সমাজ বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে সমাজে পুলিশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা মোটেই সম্মানজনক নয়। সাধারণ মানুষের মনে পুলিশ সম্বন্ধে এক মিশ্র অনুভূতি কাজ করে। পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি এখনও প্রশ্নবিদ্ধ। তবে একতরফাভাবে কেবল পুলিশের দোষ দেয়া সমীচীন নয়। পুলিশের সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতার বিষয়টিও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে। জনবল, সরঞ্জাম, দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ঘাটতি কাটানোর পাশাপাশি পুলিশের সদাচরণ ও সেবার মান বৃদ্ধি এবং মানসিক গঠন পরিবর্তনের মাধ্যমে সুনাম বাড়ুক; পুলিশ হয়ে উঠুক সমাজবান্ধবÑ এটাই প্রত্যাশিত। অথচ পরিতাপের বিষয়, অনিয়ম ও অবৈধ কারবারের সমান্তরালে চলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অনেক সদস্যের অনিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অর্থোপার্জনের অপতৎপরতা। ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ সংগ্রহ, চাঁদাবাজির সংস্কৃতি থেকে না বেরুতে পারলে দেশে সত্যিকারার্থে আইনের প্রয়োগ সুসম্পন্ন হবে না। পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের প্রতি সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ প্রদান করেছিলেন যা প্রত্যাশিত ছিল। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি নির্দেশ দিয়ে বলেন, দখলবাজ ক্ষমতা অপব্যবহারকারী আওয়ামী লীগার হলেও প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে কোন ছাড় নয়। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গুটিকতক নীতিভ্রষ্ট দুর্বৃত্ত দলীয় প্রভাবশালীর কারণেই দল ও সরকারের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের বিপক্ষে নেতিবাচক বার্তা পৌঁছে। আশার কথা হলো পুলিশ বাহিনীকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ ও চৌকস করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে মোট প্রায় তিন শ’ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রাজধানীর পুলিশের অপারেশন সক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটা অনস্বীকার্য যে পুলিশকে প্রয়োজনীয় জনবল, যানবাহন ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পটি ডিএমপির অপারেশনাল দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহনের চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
×