ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাণিজ্য চুক্তি মেনে চলার সংকল্প

এপেকের পক্ষে এশীয় নেতারা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২২ নভেম্বর ২০১৬

এপেকের পক্ষে এশীয় নেতারা

এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতারা বলেছেন, মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় সত্ত্বেও তারা অবাধ বাণিজ্য চুক্তি মেনে চলবেন। খবর বিবিসি অনলাইন ও ইয়াহু নিউজের। ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচার অভিযানকালে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থানের স্বার্থে আরও সংরক্ষণবাদী নীতি গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিনি ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবেন। এটি কয়েক বছরের মধ্যে স্বাক্ষরিত সবচেয়ে বড় চুক্তি। কিন্তু পেরুতে দুই দিনের শীর্ষ বৈঠকের পর নেতৃবৃন্দ অবাধ বাজারের সুবিধাগুলো সমর্থন করেন। এপেক শীর্ষ সম্মেলন শেষে প্রকাশিত এক ইশতেহারে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা বাজার উন্মুক্ত রাখা এবং সব ধরনের সংরক্ষণবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। ইশতেহারে বাণিজ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান সন্দেহবাদের বিষয়টিতে উল্লেখ করা হয়। কারণ অর্থ সঙ্কটের পর অসম পুনরুদ্ধার বিশ্বায়ন যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের পক্ষে কাজ করছে কিনা এ প্রশ্ন তুলতে অনেককে বাধ্য করেছে। কিন্তু নেতৃবৃন্দ বলেন, বাণিজ্য ও অবাধ বাজারের সুবিধা ব্যাপকতর সংখ্যক লোককে আরও কার্যকরভাবে অবহিত করা প্রয়োজন। বাণিজ্য কিভাবে উদ্যোগ, কর্মসংস্থান ও জীবনমাত্রার মান বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়, তারা তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেন। টিপিপি চুক্তিতে ১২টি দেশ জড়িত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, মেক্সিকোর চিলি ও পেরু। চুক্তির লক্ষ্য হলো প্রবৃদ্ধির উন্নতি ঘটানোর জন্য শুল্ক হ্রাস ও বাণিজ্য বৃদ্ধি করে এসব দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করা। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, প্রস্তাবটি এক ভয়াবহ চুক্তি যা আমেরিকার কর্মসংস্থানের সুযোগ সস্তা শ্রমের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেবে। চুক্তিটি অবশ্যই মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত হতে হবে। কংগ্রেস ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির হাতে থাকায় চুক্তিটি সেখানে অনুমোদিত হতে ব্যর্থ হবে বলে মনে করা হয়। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনও চুক্তিটির বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এপেক বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা চুক্তির প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, এটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া না হলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মর্যাদা ক্ষুণœ হবে। টিপিপি যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াই এগিয়ে যেতে পারবে বলে কেউ কেউ মনে করলেও চুক্তিটি নিয়ে নতুন করে পূর্ণাঙ্গ আলোচনা ছাড়া তা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে অন্যরা মনে করেন। গত সপ্তাহান্তে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি মত ব্যক্ত করেন যে, চুক্তিতে ছোটখাটো পরিবর্তন আনা হাতে পারে। এতে ট্রাম্প তার মুখ রক্ষা করে এটি সমর্থন করার মতো যথেষ্ট সুযোগ পাবেন। পেরুর প্রেসিডেন্ট পেডরো পাবলো বলেন, ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও টিপিপি বাতিল করা উচিত নয়। তিন আঞ্চলিক বাণিজ্যের এক বিকল্প পরিকল্পনা পেশ করেছে। চীন টিপিপির সদস্য নয়। চীনা প্রস্তাবে দুই আমেরিকা মহাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এটি আঞ্চলিক ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারি (আরসিইপি) নামে পরিচিত। এপেক বৈঠকের পর বেজিং জানায়, পেরু ও চিলিসহ কয়েকটি দেশ আরসিইপিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। ওবামা বলেন, টিপিপি ছেড়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক বড় ভুলই হবে। জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউস ত্যাগের আগে এপেক সম্মেলনে যোগদানই তার সর্বশেষ বিদেশ সফর। তিনি টিপিপি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন, কিন্তু এর প্রতি কংগ্রেসের সমর্থন চাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তিনি বলেন, এর অনুমোদন করানোর দায়িত্ব আগামী ট্রাম্প প্রশাসনের। চূড়ান্ত ইশতেহারে এপেকা নেতারা বলেন, টিপিপি ও আরসিইপি উভয়েই এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃহত্তর মুক্ত বাণিজ্য এলাকা গড়ে তোলার বৈধ পথ। এটি দীর্ঘদিন ধরেই এপেক ব্লকের লক্ষ্য হয়ে রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতির শতকরা ৫৭ ভাগ এপেক ব্লকের নিয়ন্ত্রণাধীন। তারা বলেন, আমরা টিপিপি ও আরসিইপিসহ সব আঞ্চলিক উদ্যোগকে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ থাকার এবং একে অপরকে কাছে টানার আহ্বান জানাই। চীনা প্রতিনিধি দল বাণিজ্য চুক্তিগুলোর রাজনৈতিকায়নের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ধনী কেবল এমন দেশগুলোর স্বার্থে এসব চুক্তি করা উচিত নয়। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, তার দেশ ভবিষ্যত বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে এর পথগুলো খোলা রাখছে।
×