ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবর্তনের হাওয়া প্রকৃতিতে

বৃষ্টির পর হিমেল হাওয়ায় শীতের অনুভূতি, স্বরূপে হেমন্ত

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৭ নভেম্বর ২০১৬

বৃষ্টির পর হিমেল হাওয়ায় শীতের অনুভূতি, স্বরূপে হেমন্ত

মোরসালিন মিজান ॥ ষড়ঋতুর দেশ। নিত্য রূপ বদলায় প্রকৃতি। সেই ধারাবাহিকতায় এসেছে হেমন্ত। ১ কার্তিক শুরু হয়েছিল। তার পর অনেকগুলো দিন। কিন্তু পরিবর্তন স্পষ্ট হচ্ছিল না। বিশেষ করে যন্ত্রনগরী ঢাকায় অল্পস্বল্প অনুভূত হচ্ছিল প্রিয় ঋতু। বলা হয়ে থাকে, শীতের বাহন হেমন্ত। শীতের আগে একটা শীত শীত অনুভূতি দেয়। অথচ গত কিছুদিন উষ্ণ ছিল প্রকৃতি। গরমাগরম অবস্থা চলছিল। এ অবস্থায় শনি এবং রবিবারের টানা বর্ষণ। তাতেই বদলে গেছে অনেককিছু। প্রথম দিন পুরোটা সময় টিপ টিপ বৃষ্টি হয়েছে। রবিবারও সূর্যের দেখা মেলেনি। মুখ ভারি করে রেখেছিল আকাশ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। আর তাতেই পরিবর্তনের হাওয়া। শীত শীত অনুভব। সব দেখে মনে হচ্ছে স্বরূপে ফিরেছে হেমন্ত। হেমন্তের প্রকৃতির একটি বর্ণনা পাওয়া যায় সুফিয়া কামালের কবিতায়। বর্ণনাটি এ রকমÑ সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে/কোন্ পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে?/ আনল ডেকে মটরশুঁটি,/খেসারি আর কলাই ফুলে/আনল ডেকে কুয়াশাকে/সাঁঝ সকালে নদীর কূলে।/সকাল বেলায় শিশির ভেজা/ঘাসের ওপর চলতে গিয়ে/হাল্কা মধুর শীতের ছোঁয়ায়/শরীর ওঠে শিরশিরিয়ে...। কবিতার পঙ্ক্তি বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে উত্তরবঙ্গে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এবারও আগেভাগেই শিশিরসিক্ত ওই এলাকার প্রকৃতি। রাতে শিশির। ভোরে কুয়াশা। শীতটা টের পাওয়া যাচ্ছে একটু একটু করে। ঢাকায় মাঝরাতে শিশির পড়লেও খুব একটা দৃশ্যমান হয় না। তবে শেষ রাতে স্ট্রিট লাইটের উজ্জ্বল আলোগুলোকে কিছুটা হলেও ম্লান করে দেয়। সচেতনভাবে তাকালে চোখে পড়ে দৃশ্যটি। রবীন্দ্রনাথ থেকে বললেÑ হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে/হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে...। প্রকৃতিপ্রেমী কবি অন্যত্র লিখেছেন, হায় হেমন্তলক্ষ্মী, তোমার নয়ন কেন ঢাকা-/হিমের ঘন ঘোমটাখানি ধুমল রঙে আঁকা।/সন্ধ্যাপ্রদীপ তোমার হাতে মলিন হেরি কুয়াশাতে,/কণ্ঠে তোমার বাণী যেন করুণ বাষ্পে মাখা...। ঢাকার সবুজ ঘাসে এতদিন যে শিশিরবিন্দু জমেছিল এখন সেখানে বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা। শহর ঢাকা রীতিমতো বর্ষার চেহারা পেয়েছে। ছাতা হাতে বের হচ্ছেন রাজধানীবাসী। এর পরও দু’এক ফোঁটা বৃষ্টি গায়ে মাখতে হয়েছে। বৃষ্টির ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় কাঁপতে হয়েছে। শুধু কি তাই? ঢাকার অলিগলি ফুটপাতে চুলা বসিয়ে শুরু হয়ে গেছে ভাপাপিঠা তৈরির কাজ। গরম গরম পিঠা। একদিকে হচ্ছে অন্যদিকে ফুঁ দিয়ে মুখে পুরছেন পথচারীরা। গ্রামীণ ঐতিহ্যের পিঠাপুলি উৎসব মনে করিয়ে দেয় শীত আসন্ন। বৃষ্টিধোয়া প্রকৃতি রাজধানীবাসীর পোশাকেও পরিবর্তন এনেছে। রবিবার অপেক্ষাকৃত মোটা কাপড় পরিধান করে বাসা থেকে বের হতে দেখা গেছে অনেককে। রাতে ঘুমানোর সময় বাতির সঙ্গে ফ্যানটি বন্ধ না করলে আর চলছে না। শেষরাতে গায়ে জড়িয়ে নিতে হচ্ছে হালকা কাঁথাও। শহরের ছিন্নমূল মানুষের ভোগান্তিটা পুরনো। সন্ধ্যা হতে না হতেই তারা শীতের পোশাক পরে নিচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় দেখা যাচ্ছে, পাশেই ফুটপাথে গুটিসুটি হয়ে বসে আছে ছেলে-বুড়ো সকলেই। জীবনানন্দ দাশের ভাষায়- পা-ুলিপি কাছে রেখে ধূসর দ্বীপের কাছে আমি/নিস্তব্ধ ছিলাম ব’সে;/শিশির পড়িতেছিল ধীরে-ধীরে খ’সে;/নিমের শাখার থেকে একাকীতম কে পাখি নামি/উড়ে গেলো কুয়াশায়,-কুয়াশার থেকে দূর-কুয়াশায় আরো...। এভাবে নানা ভাব ও ভাষায় হেমন্ত জানান দিচ্ছে নিজের অস্তিত্ব। আবহাওয়া অফিসও বলছে, গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা যথেষ্ট কমেছে। এ কারণেই শীত শীত অনুভূতি। তবে এটা শীতের আভাস নয়। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে যে বৃষ্টি, অচিরেই তা কমে যাবে। তবে শীতের অনুভূতিটা থাকবে। এটাই হেমন্ত। আবহাওয়াবিদদের মতে, এখন যত দিন যাবে ততই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমতে থাকবে। পার্থক্য যত কমবে তত শীত বাড়তে থাকবে। নবেম্বরের পুরোটা এভাবে যাবে। ডিসেম্বর থেকে বইতে শুরু করবে শীতের হাওয়া। বাংলা পৌষ ও মাঘÑ এ দুই মাস প্রকৃত শীতের সময়। এ সময় তীব্র থেকে তীব্রতর হবে শীত। আর তার ঠিক আগের সময়টি এখন চলছে। চলছে হেমন্ত।
×