ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আয়তি নাহার

ধোনির সফল বায়োপিক

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৭ অক্টোবর ২০১৬

ধোনির সফল বায়োপিক

এমএস ধোনি দ্য আনটোন্ড স্টোরি শিরোনামের মধ্যে এমন একটা আকর্ষণ আছে যার টানে দর্শকরা সিনেমা হলের দিকে ছুটতে দ্বিধা করবে না। হবেও না কেন নামটা যে ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির। যিনি কিনা আপামর ক্রিকেট প্রেমীদের স্বপ্নের জাদুকর। ভারতের তো বটেই, সারা বিশ্বের কাছে মহেন্দ্র সিং ধোনি এক ক্রিকেট বিস্ময়। ধোনির হাত ধরেই ভারতীয়রা দীর্ঘ আটাশ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের মতো দুর্লভ স্মরণীয় মুহূর্তটি উপভোগ করেছেন। যাঁর প্রবাদ-প্রতিম অধিনায়কত্ব ভারতকে চূড়ান্ত খেলার পরাজয়ের গ্লানিটি মুছিয়ে দিতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। এমন সফল ক্রিকেট নায়কের ওপর যখন কোন পরিচালক সিনেমা করার আগ্রহ দেখান তাঁকে তো সেভাবেই আট-ঘাট বেঁধে নামতেই হয়। পরিচালক নীরজ পান্ডকেও তাই করতে হয়েছে। শুধুমাত্র একজন কৃতী ক্রিকেটারের খেলোয়াড় জীবনই নয়, আনতে হয়েছে অনেক ব্যক্তিগত না অজানা কাহিনী যা নিয়ে ধোনির পুরো জীবন গাথা। উন্মুখ, উৎসুকগণ মানুষ ধোনির ব্যক্তিগত জীবনকে জানার আকাক্সক্ষা বরাবরই দেখিয়েছে। ক্রিকেট পর্দার ধোনি যা- ব্যক্তি ধোনি কি তার চেয়ে আলাদা? না একে অপরের সহায়ক ও পরিপূরক। জনগণের এই অদম্য বাসনাকে পূরণ করলেন কাহিনীকার এবং পরিচালক নীরজ পান্ডে। তাঁকে আন্তরিক অভিবাদন। সিনেমায় ধোনির ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে তাঁর ক্রিকেট জীবনের আশা-আকাক্সক্ষা-বিরোধ ও মেল বন্ধনের এক অপূর্ব সমন্বয় অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন এবং সাবলীলভাবে পরিচালক দেখিয়েছেন । খুব সহজ সরল পথে ক্রিকেটার ধোনি আজকের অবস্থানে পৌঁছতে পারেননি। ভারতীয় ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগে দেখা যায় কিভাবে ধোনি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর লোকাল ট্রেনে ছুটেছেন সিলেকশন ম্যাচ খেলার জন্য। অনেক কিছুর সঙ্গে তার নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে। ৩ বছর টিকেট চেকারের চাকরি নেয়া থেকে শুরু করে যুবরাজ সিংয়ের সঙ্গে জাতীয় দলে সুযোগ না পাওয়ার বেদনাঘন ঘটনা তাঁকে বার বার আহত করেছে। মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হয়েছেন কিন্তু কখনো মুষড়ে পড়েননি সে চিত্রও অত্যন্ত গতিময়তার সঙ্গে উঠে এসেছে। জীবনে হৃদয়ঘটিত কষ্টকেও সামলাতে হয়েছে । ভালবাসার মানুষকে হারানোর বেদনায় প্রান ভেতরে ভেতরে গুমড়ে মরেছে। সে যন্ত্রণা নিজের মধ্যে লালন করেছেন সন্তর্পণে। আর এসব ঘটনার স্বচ্ছন্দ গতি দর্শকদের এমনই অভিভূত করে মনে হচ্ছিল যেন একবারে স্বয়ং ধোনিই সবার সামনে উপস্থিত। যাঁর সফল ভূমিকায় ধোনি সবার সামনে জীবন্ত হয়ে উঠলেন এবার তাঁর কথায় আসা যাক। ধোনির নাম ভূমিকায় যিনি অভিনয় করলেন সেই নায়ক সুশান্ত সিং নাকি একেবারেই ধোনিরই পছন্দ করা মানুষ। ধোনির এই বাছাইকে নির্ভুল প্রমাণ করে নায়ক সুশান্ত দর্শকদের বুঝিয়ে দেন মানুষ চিনতেও ধোনির কোন জুড়ি নেই। নয় মাসের কঠোর এবং নিবেদিত পরিশ্রমে সুশান্ত নিজের ছোট্ট ক্যারিয়ারকে যেভাবে সফলতায় ভরে দিলেন তা সত্যিই অতুলনীয়। বলিউডের ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বায়োপিকের নাম-ভূমিকায় অভিনয় করে নিজেও ইতিহাসের অংশীদার হয়ে থাকলেন। কারণ এর আগে আজহার উদ্দীনের ওপর চলচ্চিত্র নির্মিত হয় কিন্তু সেটা তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। সিনেমার চিত্রনাট্য, সংলাপ, সম্পাদনা, সঙ্গীত সাধারণের মধ্যেও অসাধারণ। কয়েকটি গান তো নিজের অজান্তেই গুন গুন করে গাওয়ার মতো। অনেকদিন পর রুচিশীল দর্শকরা পুরো পরিবার নিয়ে একটি সিনেমা দেখার গল্প-কাহিনী খুঁজে পেল। সবশেষে বাংলাদেশের ক্রিকেট তারকাদেরও একবার স্মরণ করতে চাই। মাশরাফির মতো দেশপ্রেমিক, ক্রিকেট-নিমগ্ন খেলোয়াড় আজ আমাদের বিশ্বের দরবারে এনে দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর অধিনায়কত্বেও আমরা বহু বিজয়ের গৌরব অর্জন করেছি। মাশরাফিকে নিয়েও এ ধরনের একটি ছবি আশা করতেই পারি। শাকিবও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। তাঁকেও বাদ রাখি কোন যুক্তিতে? দেখা যাক, সময় কি বলে।
×