ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগত শি জিনপিং

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৪ অক্টোবর ২০১৬

স্বাগত শি জিনপিং

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরটি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্ববহ। আজ তিনি ২৪ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সে দেশের উচ্চপর্যায়ের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলও এসেছে ঢাকায়। চীনের প্রেসিডেন্টের সফরকালীন ২৫টির মতো চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি চূড়ান্ত হয়েছে ২৯টি প্রকল্প। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতার পাশাপাশি যোগাযোগ, সন্ত্রাসবাদ দমন, সামুদ্রিক অর্থনীতি ও তথ্যপ্রযুক্তির মতো বিষয়গুলো স্বভাবতই গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বাইরেও বিদ্যুত, জ্বালানি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাতকেও সংযুক্ত করা হতে পারে। এসব প্রকল্প চূড়ান্ত হলে তা দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে উল্লিখিত হবে যৌথ ঘোষণায়। দীর্ঘ তিন দশক পর চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরটি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য, বলা যায় মাইলফলক। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির দিক থেকে চীনের অবস্থান সর্ব শীর্ষে। সর্বোপরি উত্তরোত্তর তা বাড়ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশের অবস্থানও বলা যায় ঈর্ষণীয়। সুতরাং দু’দেশের পারস্পরিক আস্থা অর্জনসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগান্তকারী মেলবন্ধনের সূচনা হলে তা যে আরও গতিশীল ও ত্বরান্বিত হবে, সে কথা বলা যায় নির্দ্বিধায়। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বায়নের যুগে সবার চোখ এখন এশিয়ার দিকে। আর এক্ষেত্রে চীনের উত্থান ও অবস্থান একদিকে বিস্ময়কর, অন্যদিকে অনুসরণযোগ্য। কেউ কেউ মনে করতে পারেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চীন এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। তবে এর পাশাপাশি এও সত্য যে, রাজনীতিতে চিরস্থায়ী শত্রু কিংবা মিত্র বলে কিছু নেই। প্রতিবেশী দেশ ভারত নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও মিত্র। তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, চীন, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশের চমৎকার অর্থনৈতিক সম্পর্ক, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যোগসূত্র গড়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, চীনের প্রেসিডেন্টের সর্বশেষ ঢাকা সফরটি এক্ষেত্রে যোগ করবে নতুন মাত্রা ও দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের নিজ উদ্যোগে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতুসহ নানা প্রকল্পে চীন ইতোমধ্যে কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। সোনাদিয়া ও পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণেও চীনা সহযোগিতার বিষয়টি বিবেচনাধীন। এর বাইরেও বাংলাদেশ চীনের প্রেসিডেন্টের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ বা ওবোর নামে পরিচিত উন্নয়ন কৌশল ও রূপরেখায় সংযুক্ত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হতে পারে। এই উদ্যোগে শামিল হলে চীনের সরকারী তহবিল থেকে স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়। সড়ক ও সমুদ্রপথে ঐতিহাসিক ‘সিল্ক রুটের’ পুনরুজ্জীবনে বাংলাদেশ শামিল হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি যে নতুন যুগে প্রবেশ করবে তাতে সন্দেহ নেই। আমরা বাংলাদেশে চীনের প্রেসিডেন্টের এ সফরকে স্বাগত জানাই।
×