ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ॥ ১৫ কিমি জুড়ে ভাঙ্গন, টি বাঁধে ফাটল

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৯ আগস্ট ২০১৬

রাজশাহীর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত ॥ ১৫ কিমি জুড়ে ভাঙ্গন, টি বাঁধে ফাটল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শহর রক্ষা ‘টি বাঁধে’ ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও লক্ষাধিক মানুষ পাবিবন্দী হয়ে পড়েছে। প্রায় পাঁচ শ’ হেক্টর জমির রবিশস্য পানির নিচে চলে গেছে। ফরিদপুরে পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৪০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রাজশাহী পয়েন্টে বিপদসীমা প্রায় ছুঁতে চলেছে পদ্মা। এরই মধ্যে মহানগরীর বুলনপুর এলাকায় অবস্থিত শহর রক্ষা ‘টি-বাঁধে’ ফাটল দেখা দিয়েছে। পানির স্রোতে বাঁধের নিচ থেকে ব্লক সরে গিয়ে এ ফাটল দেখা দেয়। সেখানে জিও ব্যাগ ফেলে ধস নামা থেকে রক্ষার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। রবিবার সকালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমানসহ কর্মকর্তারা বাঁধ পরিদর্শন করেন। এদিকে রাজশাহীর চরাঞ্চলসহ জেলার গোদাগাড়ী, পবা, বাঘা ও চারঘাট এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজারও মানুষ। নগরীর অনেক নিচু এলাকায় পদ্মার পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। রাজশাহী পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মুখলেছুর রহমান বলেন, পদ্মার প্রবল স্রোতে নগরীর টি-বাঁধের উজান সাইডে নিচ থেকে কিছু ব্লক সরে গেছে। এতে সামান্য ফাটল দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে সেটি রক্ষা করার চেষ্টা চলছে। তবে এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু এখনও হয়নি বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মায় পানি বৃদ্ধির গতি অনেকটাই কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিজ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এদিকে পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে রাজশাহী নগরীর পার্শ্ববর্তী এলাকা পবার হরিপুর ইউনিয়নের বশরী, হাড়পুর, নবগঙ্গা, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া ও খোলাবোনা এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। নবগঙ্গা এলাকার বাঁধে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকায় ইতোমধ্যে প্রায় ১২টি বাড়ি ভেঙ্গে গেছে। পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ২৬০টি পরিবার। ডুবে গেছে এক থেকে দেড় শ’ বিঘা সবজির আবাদ। গোদাগাড়ী চরে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। গত দুই দিনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে প্রায় ৪০টি বাড়ি। হুমকির মুখে পড়েছে ৮ শতাধিক ঘরবাড়ি। স্থানীয়রা জানান, উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে হুমান্তনগর থেকে চর বয়ারমারী ঢ্যাঙ্গাপাড়া পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মা নদী ভাঙ্গছে। চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের হুমন্তনগর, চর নওশেরা, ডাকরিপাড়া, খাসমহল আমতলা এলাকায় নদী ভাঙ্গন দেখা দিলেও চর বয়ারমারী নিচুপাড়া, হঠাৎপাড়া, আমিনপাড়া ও ঢ্যাঙ্গাপাড়ায় নদী বেশি ভাঙ্গছে। প্রতিদিন অন্তত ৩ ফুট করে নদীরপাড় ভাঙ্গতে থাকায় নদীর তীরবর্তী গ্রামের মানুষগুলো আতঙ্কিত হয়ে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। রাজশাহীর বাঘায় গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধির ফলে ডুবে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং জমির ফসলসহ প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি। বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নদীতে পানি বৃদ্ধির পর থেকে চরাঞ্চলের চকরাজাপুর, চৌমাদিয়া, আতারপাড়া, দিয়ার কাদিরপুর, লক্ষ্মীনগর, মানিকের চর এবং টিকটিকিপাড়াসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে ওই অঞ্চলের ১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পানি বৃদ্ধির ফলে অসংখ্য জমির আখ, পাট ও চলতি আমন ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ পদ্মায় বিপদসীমা অতিক্রম করলেও পানি বাড়ার গতি একেবারে কমে এসেছে। তবে মহানন্দা, পাগলা ও পুনর্ভবা বিপদসীমা অতিক্রম না করায় স্বস্তি ফিরে এসেছে ভোলাহাট, গোমস্তাপুর ও চাঁপাইয়ের আংশিক এলাকায়। শিবগঞ্জের ৯ ইউনিয়নের ৫৫ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। একই সঙ্গে চাঁপাই সদরের পদ্মাপাড়ের প্রায় ছয়টি ইউনিয়নের পুরো এলাকায় পানি প্রবেশ করায় সহস্রাধিক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এদিকে শিবগঞ্জ ও চাঁপাই সদরের প্রায় ৭শ’ হেক্টরের আউশ ধানসহ পাঁচ শ’ হেক্টরের রবিশস্য পানির নিচে চলে গেছে। ইতোমধ্যেই জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ শুরু হয়েছে। ফরিদপুর ॥ ফরিদপুরে পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের ৪০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শনিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে ডিক্রিরচর ইউনিয়নের মুন্সিডাঙ্গির এলাকায় বাঁধ বিলীন হয়ে যায়। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীর পানি কিছুটা কমে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার দুপুরে ভেড়ামারায় হার্ডিঞ্জব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি প্রবাহের মাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার। পদ্মার প্রধান শাখা গড়াই নদীতে পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।
×