ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বদলে যাচ্ছে গুলশান

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ আগস্ট ২০১৬

বদলে যাচ্ছে গুলশান

গুলশান এলাকার জন্য চালু হলো নতুন বাস ও রিক্সার ব্যবস্থা। গুলশান তথা সেখানকার সংশ্লিষ্ট পুরো কূটনীতিক এলাকার জন্য এই ব্যবস্থা। সার্কুলার সার্ভিসের যানবাহন চলবে নির্ধারিত এলাকায়, নির্ধারিত সময়ে, পর পর। রিক্সা চলবে নির্ধারিত এলাকার ভেতরে। বাসের চালক, তাঁর সহকর্মী এবং রিক্সাচালকদের জন্য থাকবে নির্ধারিত পোশাক। দুটো যানের আলাদা ভাড়াও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বাস এবং রিক্সার সংখ্যাও। অবস্থা বুঝে এই সংখ্যা কমানো বা বাড়ানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, সাধারণ যাত্রী যাঁরা ওই এলাকায় যাবেন বা আসবেন, তাঁদের জন্যই মূলত এই ব্যবস্থা। ঢাকায় অবশ্য আরও এলাকা রয়েছে যেখানে বাইরের বাস ঢুকতে দেয়া হয় না। সে সব এলাকার জন্য রয়েছে নির্ধারিত রিক্সা। গুলশানেও যুক্ত হলো ঐ ধরনের ব্যবস্থা। গুলশান রাজধানীর তো বটেই, দেশের একটি নামকরা এলাকা। তবে দেশের বাইরে গুলশানের নাম বিশেষভাবে ছড়িয়ে পড়ে কূটনীতিকপাড়া হিসেবে। সেখানে একটি রেস্টুরেন্টে ভয়াবহ জঙ্গী সন্ত্রাসী হামলার কিছুদিন পর এই সার্কুলার বাস ও পৃথক রিক্সার ব্যবস্থা করা হলো। এর পেছনে রয়েছে সন্ত্রাসী হামলা রোধ করা নিরাপত্তা বিধান এবং সেখানে চলাচলের ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন। সেখানকার যানজট কমানোও যে এর একটা লক্ষ্য, সেটাও ধারণা করা যায়। উদ্দেশ্যটি যে মহৎ তা স্বীকার করতেই হবে। তবে পরিকল্পনাটি সুদূরপ্রসারী কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। গুলশানবাসী এবং সেখানে যাঁরা নিত্য যাওয়া-আসা করেন বা করবেন, তাঁদের নিরাপত্তা এবং স্বাচ্ছন্দ্য বাড়লে তাতে দেশের অন্য এলাকার মানুষও নিঃসন্দেহে খুশি হবেন। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করতে হয়। সেটি হচ্ছে, গুলশান মূলত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নির্ধারিত আবাসিক এলাকা হিসেবে। পরে এটি পরিণত হয় সাধারণ মানুষের আবাসিক এলাকার পাশাপাশি কূটনীতিক এলাকাতেও। তবে এখন এলাকাটি যে আসলে কী, তা বলা মুশকিল। ঢাকার প্রথম আবাসিক এলাকা হচ্ছে ধানম-ি। সেটা এখন স্কুল এলাকা, না কলেজ এলাকা, না হাসপাতাল, না হোটেল-রেস্তরাঁ এলাকা বোঝা মুশকিল। গুলশানেরও সেই দশা! সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, মার্কেটসহ কত কিছুই যে রয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল, কলেজ, হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্য সেখানকার আবহাওয়াকে, পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। সেখানে রয়েছে একটি দীর্ঘ লেক। ভরাটসহ সেটির ওপরও অত্যাচার কম হয়নি। এককালে গুলশান ছিল ঢাকা থেকে দূরে। এখন রাজধানীর একটি অত্যন্ত ব্যস্ত এলাকা এটি। গুলশানের নিরাপত্তা এবং লোকজনের স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য নতুন যে ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটা সফল হোক, সেটা আমরা প্রত্যাশা করব। পাশাপাশি এও প্রত্যাশা করব সেখানকার সত্যিকার আবাসিক চেহারা ফিরে আসুক, পরিবেশ সুন্দর হোক। একই সঙ্গে এটাও বিবেচনা করা দরকার যে, রাজধানীর কোন অংশে যানজট হলে তার ধাক্কা লাগে গুলশানেও। আর গুলশান এলাকায় যানটজ তীব্র হলে সেটাও অনেকখানি অচল করে দেয় আশপাশের অনেক এলাকা। গুলশানের বাইরের যেসব বাস/রিক্সা সে এলাকার নির্ধারিত সীমায় গিয়ে থামবে, সেখানে কি যানজটের নতুন সমস্যা সৃষ্টি হবে না? কোন এলাকাকে যানজটমুক্ত করতে গিয়ে অন্য এলাকায় যাতে নতুন করে যানজট সৃষ্টি না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। গুলশানের জন্য গৃহীত উদ্যোগ সফল হবে এবং গুলশান সত্যিকার অর্থে নতুন রূপে সেজে উঠুকÑ এটা সবাই চাইবে।
×