ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের রুলিং প্রত্যাখ্যান

বিরোধ সংঘাতের রূপ নিতে পারে ॥ চীনের হুঁশিয়ারি

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৪ জুলাই ২০১৬

বিরোধ সংঘাতের রূপ নিতে পারে ॥ চীনের হুঁশিয়ারি

দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের মালিকানা অগ্রাহ্য করে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালত যে রুলিং দিয়েছে তা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে বেজিং। রুলিংয়ে ফিলিপিন্সের সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। রুলিংয়ের প্রতি সম্মান জানাতে ভারত সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা, এই রুলিং সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলবে। খবর এএফপি ও পিটিআইর। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আদালতের রুলিং প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, সাগরের এই অংশ ও দ্বীপগুলোর সঙ্গে চীনের লোকজনের দুই হাজার বছরের সম্পর্ক রয়েছে। চীন আরও দাবি করেছে, নাইন ড্যাশ লাইনের ভিত্তিতে ১৯৪৮ সালে প্রস্তুত মানচিত্রেও দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো চীনের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন বলেছেন নিজেকে হুমকির মধ্যে আছে মনে করলে বেজিং সাগরের ওই এলাকাজুড়ে বিমান প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ চীনকে সতর্ক করে দিয়ে এক তরফাভাবে কোন সিদ্ধান্ত না নিতে বলেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে রুলিংয়ের প্রতি ‘সর্বোচ্চ সম্মান’ সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত আদালতের রুলিংয়ের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে নয়াদিল্লী বিরোধপূর্ণ ইস্যুগুলো শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত কুই টিনকাই মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের (সিএসআইএস) ফোরামে বলেন, এই রুলিং বিরোধ আরও তীব্র করবে যা শেষ পর্যন্ত সংঘর্ষের রূপ নিতে পারে। তবে তিনি বলেন, বিরোধপূর্ণ এলাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নির্বিঘœ রাখতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি থেকে বেজিং সরে আসবে না। তিনি আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে কলকাঠি নাড়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা জানান। অন্যাদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এই রুলিং মেনে চলা বাধ্যতামূলক এবং বেজিংয়ের উচিত একে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে মেনে নেয়া। দক্ষিণ চীন সাগর এলাকায় উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য ওয়শিংটন বেজিংকে দায়ী করে থাকে। দক্ষিণ চীন সাগরের ওপর চীনের মালিকানা দাবি মঙ্গলবার খারিজ করে দেয় হেগের স্থায়ী আদালত (পিএসি)। আদালতের রুলিং ফিলিপিন্সের দাবিকে সঠিক প্রতিপন্ন করে। আদালত চীনের এই দাবি খারিজ করে ফিলিপিন্সের পক্ষে রায় দেয়। আদালত বলে, চীনের দাবির কোন ঐতিহাসিক সত্যতা নেই। এই সাগরের মালিকানা দাবি করে চীন মূলত ফিলিপিন্সের সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘন করেছে। পাশাপাশি এই সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সাগরটির প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট এবং অবাধ আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। ফিলিপিন্স রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, বেজিংয়ের এই রায় মানতে হবে। আর রায়ের পর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে আমরা অন্য কারও সিদ্ধান্ত মানব না। এই রায়কে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। রুলিংয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ফিলিপিন্সের নতুন প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতারেত বলেন, তিনি আশাবাদী ছিলেন যে রায় ইতিবাচক হবে। জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণে চীন সমুদ্র আইন কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। চীন নিজস্ব সীমানা চিহ্নিতকরণ পদ্ধতি ‘নাইন ড্যাশ লাইন’ অনুসারে সাগরের ওই অংশের ওপর মালিকানা দাবি করে। এই প্রেক্ষাপটে ফিলিপিন্স ২০১৩ সালে চীনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতে একটি মামলা করে। কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরের প্রায় পুরো অংশের ওপরই মালিকানা দাবি করে আসছে চীন। এ নিয়ে কেবল ফিলিপিন্স নয় জাপান, ভিয়েতনাম, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় সবগুলো প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে চীনের। দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ানের যুদ্ধ জাহাজ ॥ তাইওয়ান তার জলসীমা রক্ষায় বুধবার দক্ষিণ চীন সাগরে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। এ জলসীমায় চীনের ঐতিহাসিক কোন অধিকার নেই আন্তর্জাতিক আদালত এমন রায় দেয়ার পর তারা সেখানে এ জাহাজ পাঠালো। দীর্ঘদিন ধরে তাইওয়ানও এ দ্বীপপুঞ্জে তাদের মালিকানা রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। প্রেসিডেন্ট সাই ই ওয়েন ওই যুদ্ধজাহাজের সৈন্যদের উদ্দেশে বলেন, তাইওয়ানের জনগণ তাদের দেশের অধিকার রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
×