ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংঘর্ষ ॥ টিয়ারশেল ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় মতিঝিলের এসি আহত ॥ আটক দুই শ’

হকার উচ্ছেদ নিয়ে গুলিস্তান রণক্ষেত্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১১ জুন ২০১৬

হকার উচ্ছেদ নিয়ে গুলিস্তান রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার রাজধানীর গুলিস্তানে বিপণিবিতান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হকারদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ দশজন আহত হয়েছেন। উভয় গ্রুপের মধ্যে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠি হাতে নিয়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২শ’ জনকে আটক করা হয়। সংঘর্ষের কারণে বায়তুল মোকাররম থেকে গুলিস্তান, নবাবপুর ও ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন সড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। দুপুরে ঘটনাস্থলে যান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়েছে, যারা এ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যারা জননিরাপত্তায় বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের ছাড় দেয়া হবে না। পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, গুলিস্তানের ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের ফুটপাথ থেকে হকার উচ্ছেদ করে ওই সড়ক যান চলাচলের উপযোগী করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি ফিরে যাওয়ার পরপরই হকার ও বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সে সময় ওই এলাকায় যান চলাচল আড়াই ঘণ্টা বন্ধ ছিল। ওই ঘটনার পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে গুলিস্তান মার্কেটগুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার সকাল থেকে ওই অবস্থার মধ্যে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান নিতে থাকে হকাররা। এদিকে স্থানীয় বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরাও তাদের দোকানে যেতে শুরু করেন। সূত্রমতে, বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে দুইপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও লাঠিসোটা নিয়ে ধাওয়ায় মধ্যে ওই এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষে বিলাল হোসেন নামে এক জুতার হকার ও নজরুল ইসলাম নামে এক জুতার দোকানের কর্মচারী আহত হন। খবর পেয়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ উভয় গ্রুপের সংঘর্ষ ঠেকাতে মাঠে নামে। এ সংঘর্ষের মধ্যে উড়ে আসা একটি ইট মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেনের মাথায় এসে আঘাত হানে। তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েন। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ শুরু করে। একপর্যায়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেলা দুইটার পর পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ডিএমপি কমিশনার বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, এই রাস্তাগুলোতে হকাররা বসেছিল। আমরা ও সিটি কর্পোরেশন মিলে এটা উচ্ছেদ করেছি জনগণের চলাচলের সুবিধার্থে। এখন তারা (হকার) যদি গোলমাল করে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেব। মামলা হবে। গ্রেফতার হবে। যে আইন ভাঙবে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। পুলিশ কমিশনার বলেন, মতিঝিল বিভাগে উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন গুরুতর আহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মোঃ বাচ্চু মিয়া জানান, আনোয়ার স্যারের বাঁ চোখের ওপর ইটের আঘাত লেগেছে। স্যারকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে মোঃ বিল্লাল, মোঃ বাবুল, মিজানুর রহমান, তারেক নামে চার হকার এবং নজরুল ইসলাম নামে এক দোকানের কর্মচারী ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছেন। পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম জানান, সংঘর্ষের পর ওই এলাকা থেকে প্রায় দুশ’ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হকার ও দোকান কর্মচারী দুইপক্ষের লোকই আছে। পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এডিসি তারেক বিন রশিদ জানান, আটকদের যাচাই-বাছাই করে যারা দোষী তাদের বৃহস্পতিবার হওয়া দুই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে। বাকিদের ছেড়ে দেয়া হবে। এছাড়া শুক্রবারের ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। সংঘর্ষ থামলেও ঢাকা ট্রেড সেন্টারের সামনের অংশে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত যান চালাচল বন্ধ ছিল। দোকানপাটও খোলেনি। বিকেল সাড়ে তিনটার সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশকে সেখানে অবস্থান নিয়ে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা ট্রেড সেন্টার (দক্ষিণ) দোকান মালিক সমিতির সহসভাপতি আসলাম হোসেন জানান, হকাররা দীর্ঘদিন ধরে জোর করে মার্কেটের বারান্দা ও সামনের ফুটপাথ দখল করে রেখেছিল। মার্কেট কমিটির লোকজন বৃহস্পতিবার ফুটপাথের দোকানদারদের চলে যেতে বললে তারা না গিয়ে উল্টো কমিটির লোকদের মারধর শুরু করে। এরপরই সংঘর্ষ বাধে। এর জের ধরেই দুইপক্ষ শুক্রবার আবারও সংঘর্ষে জড়ায় বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান। গুলিস্তান একাধিক মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, কোন নতুন মার্কেট করলে মুহূর্তের মধ্যে হকাররা মানুষের পথ চলাচলের পুরো ফুটপাথ বন্ধ করে চৌকিতে জিনিসপত্রের পসরা বসিয়ে বেচাকেনা শুরু করে। তাদের উৎপাতে মার্কেটে ক্রেতা ও সাধারণ মানুষ চলাচল করতে পারে না। এতে মার্কেটের দোকানিদের ব্যবসা লাটে উঠেছে। তারা অভিযোগ করেন, রাজধানীতে প্রতিটি মার্কেটের সামনে সাধারণ মানুষের চলাচলের পথ ফুটপাথ পুরো দখল করে চৌকি বসিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। ফুটপাথ পাড়ি দিয়ে ওই সব মার্কেটে ক্রেতাদের যেতে বেগ পেতে ও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এতে মার্কেটের কেনাবেচা লাটে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, আর ফুটপাথের হকারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না। এর কারণ হকাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ‘মাসোহারা’ পান স্থানীয় সরকার ও বিরোধী দলের রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এর ফলে মার্কেট ব্যবসায়ী কমিটি ও ব্যবসায়ীরা হকারদের উচ্ছেদের চেষ্টা করতে গেলে প্রাণনাশের হুমকির মুখে পড়তে হয়। হকারদের দাবি- দোকান মালিকরা তাদের মালামাল লুট করেছে।
×