ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তাপস মজুমদার

রাহুগ্রস্ত ফুটবল

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৮ জুন ২০১৬

রাহুগ্রস্ত ফুটবল

ফুটবল না কি ক্রিকেট- মধুর একটি বিতর্কের বিষয় হতে পারে। কোন্্ খেলাটি ভাল এবং দর্শকপ্রিয় সমধিক? স্বভাবতই যারা ভালবাসেন ফুটবল, তারা এক বাক্যে রায় দেবেন এর পক্ষে। অন্যদিকে ক্রিকেটপ্রেমীরা সরে দাঁড়াবেন ক্রিকেট মাঠে। তবে এর বাইরেও দেশে ও বিশ্বব্যাপী যে বিপুলসংখ্যক আমজনতা এবং যাদের সংখ্যাই সমধিক, তারা প্রথমে আমতা আমতা তথা দোনোমোনো করবেন। মনে মনে টস তথা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখা আর কি! এরপর বিভক্ত হয়ে যাবেন ক্রিকেট অথবা ফুটবলের দ্বিধাবিভক্ত শিবিরে। কিছু দর্শক, তাদের সংখ্যাও কম নয়, অবশ্য বলবেন, তারা দুটো খেলাই ভালবাসেন। এত কিছুর পরও চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণে হয়ত দেখা যাবে যে, ফুটবলের দর্শক বিশ্বব্যাপী কিছু বেশি। তবে বাংলাদেশে? এ প্রশ্নের উত্তর না সূচক হতে বাধ্য। অন্তত বর্তমানে। কেন যেন মনে হয়, বাংলাদেশের ফুটবল প্রায় শেষ হয়ে গেছে। অন্তত যে মুমূর্ষু ও মৃতপ্রায়, এ কথা বলা চলে নির্দ্বিধায়। অন্যদিকে ক্রিকেট জেগে উঠেছে গত ক’বছরে- দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। কেন হয়েছে ও হচ্ছে এটা- এ প্রশ্নের উত্তর জানাও জরুরী বৈকি। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ফুটবলের প্রায় অন্তিম দশা। নেপাল কিংবা শ্রীলঙ্কায়, পাকিস্তান, আফগানিস্তানে? ফুটবল যেন রাহুগ্রস্ত। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। কেননা, ফুটবল অত্যন্ত সাশ্রয়ী খেলা। ক্রিকেটের তুলনায় খুবই কম ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী। অথচ অত্যন্ত আকর্ষণীয়। টান টান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ, পরিশ্রমসাধ্য, তীক্ষèধীসম্পন্ন, চাতুর্যপূর্ণ, বুদ্ধিদীপ্ত, শৌর্যবীর্যসম্পন্ন, পৌরুষদীপ্ত খেলা। পৌরুষদীপ্ত বলায় নারী ফুটবল দলকে অবশ্য খাটো করা হচ্ছে না কোন মতেই। কেননা শব্দটি তাদের ক্ষেত্রেও গুণবাচক অর্থে প্রযোজ্য হতে পারে। উৎসাহী, আগ্রহী ও কৌতূহলী পাঠক অবশ্য প্রশ্ন করতে পারেন, ক্রিকেট খেলায় কি উপরোক্ত গুণাবলী প্রত্যক্ষ করা যায় না? অবশ্যই যায়। আর যায় বলেই লেখার শুরুতেই প্রশ্ন রেখেছি, কোন্ খেলাটি জনপ্রিয়? এক সময় ক্রিকেট খেলতেন রাজা-বাদশা-নওয়াব-লর্ড বাহাদুর এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক ও চেলা-চামু-ারা। নিতান্তই সময় কাটানো ও হাত-পায়ের জড়তা ছাড়ানোর অভিপ্রায়ে। কালক্রমে ক্রিকেট তার সেই আভিজাত্য ও কৌলীণ্য হারিয়েছে। আজকাল ক্রিকেটারদের দেখেও তাক লেগে যায়- একেকজন যেন বিশ্বসেরা এ্যাথলেট। চৌকস শরীরচর্চক। পেশীবহুল মেদহীন ছিপছিপে শরীর। ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন ফুটবলারদের চেয়ে কোন অংশে কম দৌড়ায় না তারাও। শোয়েব আখতার, ব্রেট লির গতির কথাই ভাবুন না কেন? অন্যদিকে কী অসাধারণ ক্ষীপ্রগতিসম্পন্ন বুদ্ধিদীপ্ত চৌকস ফিল্ডিং। চার-ছক্কার এক একটি ক্যাচ বাউন্ডারি লাইন এপার-ওপার করে মুহূর্তের মধ্যে যেভাবে লুফে নেয়, তাতে বুঝি পৃথিবীর সেরা গোলকিপারেরও হার মানার উপক্রম ঘটে। পাঠকের বিস্ময় নিরসনের জন্য বলি ঢাকার মাঠেই নবীন ক্রিকেটার সৌম্য সরকার এ রকম একটি অসাধারণ ক্যাচ লুফে নিয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এক খেলায়। চলমান ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ টি-টুয়েন্টিতে এ রকম দেখা যাচ্ছে হামেশাই। এ ধরনের ফিল্ডিং দেখে প্রতীয়মান হয় যে, বিশ্বখ্যাত ফুটলার পেলের বাইসাইকেল কিক অথবা হেডের সৌন্দর্য এবং ম্যারাডোনার অসাধারণ দৌড় ও ড্রিবলিংয়ের সৌকর্য বুঝি সঞ্চারিত হয়েছে ক্রিকেটেও। ফুটবল এবং ক্রিকেট দুটোই দলগত খেলা হলেও ব্যক্তিনৈপুণ্য প্রাধান্য পেয়ে থাকে দুটোতেই এবং শেষাবধি সৌন্দর্য ও সৌকর্যে কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। আর এ কারণেই ক্রিকেট এবং ফুটবলের মধ্যে তুলনা দিয়ে শুরু করেছি লেখাটি। টেস্ট ক্রিকেটকে ক্ল্যাসিক তথা দ্রুপদী শিল্পের মর্যাদা দিয়েও বলব, দর্শকরুচি ও বাণিজ্যের অভিপ্রায়ে কালক্রমে ক্রিকেটে সময় ও গতি সঞ্চারিত হওয়ায় এর পৌরুষ ও সৌন্দর্য এবং একই সঙ্গে দক্ষতা ও নৈপুণ্য বেড়েছে অনেকটাই। প্রথমে ওয়ানডে এবং পরে টি-টুয়েন্টি এখন ক্রিকেটে এনে দিয়েছে ফুটবলীয় উত্তেজনা ও নৈপুণ্য প্রদর্শনের সুবর্ণ সুযোগ। সেই সঙ্গে বিপুল অর্থবিত্ত ও পেশাদারিত্ব তো আছেই। আরও আছে গণমাধ্যমও। মিডিয়ার কল্যাণে আজকাল ক্রিকেটাররাও মেসি-রোনাল্ডোর মতো স্টার, সুপারস্টার। এর পাশাপাশি ধোনি কিংবা কোহলির বিপুল বিত্তের কথাটা একবার ভাবুন তো! ফুটবলারদের তুলনায় কম কী! বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কিছু বেশিই মনে হয় যেন। কেননা, ক্রিকেটাররা ভাল ইংরেজী জানেন এবং আকর্ষণীয় তরুণী ও মডেলরা এমনকি চিত্রতারকারা কেন যেন ফুটবলারদের চেয়ে ক্রিকেটারদেরই বেশি পছন্দ করে থাকেন। এতে করে কিন্তু মেসি-রোনাল্ডোদের খাটো করা হচ্ছে না; অথবা বড় করা হচ্ছে না ধোনি-কোহলিদের! যে যার পেশা ও নেশায় অবশ্যই শ্রেয়তর ও মহীয়ান। বরং দর্শকপ্রিয়তা ও নারী রুচির কথাই বলার চেষ্টা হচ্ছে। যাতে করে এ খেলা দুটোর সাম্প্রতিক ট্রেন্ড সম্পর্কে সম্যক ধারণা করা যায়। তাহলে কি আপাত বিচারে আমরা বলতে পারি যে, ক্রিকেট অন্তত এই উপমহাদেশে বর্তমানের একটি ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে? আবার যদি কখনও ফুটবলের পুনরুজ্জীবন এবং মাঠে দর্শক সমাগম ঘটে, তাহলে ফুটবলও ক্রমশ পরিণত হবে ফ্যাশন ট্রেন্ডে! বিশ্বব্যাপী খেলাধুলার, বিশেষ করে ফুটবল-ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় খেলাগুলোর এতটাই বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে এবং গণমাধ্যমের ভূমিকাও এতটাই প্রভাববিস্তারী ও পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে যে, যখন যেটা চলে অথবা স্পন্সর করা হয়, তখন তার ওপরই একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে আমজনতা। আর তখন মনে হয়, সেই খেলাটাই বুঝি সর্বাধিক জনপ্রিয়। আসলে বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ দর্শকশ্রোতা যখন যেটা চলমান তারই অংশবিশেষ হয়ে ওঠে। মিডিয়া দর্শককে সেই খেলাটার একটি অপরিহার্য অংশ বানিয়ে নেয় অথবা বানিয়ে দেয়। সদ্যসমাপ্ত আইপিএলের ধূমধারাক্কা বিজ্ঞাপনের থিমটিই ধরুন না কেনÑ ফ্যান ফান ফ্যানটাস্টিক সর্বোপরি ফাস্ট তো বটেই। সব কিছুই আছে এতেÑ সুপার স্টার প্লেয়াররা তো আছেই, আরও আছে সাবেক সুপারস্টার, সাবেক প্লেয়ার, চিত্রতারকা, চিত্রনায়িকা, প্রযোজক, সুন্দরী তন্বী মডেল, অগণিত সুবেশী তরুণ-তরুণী দর্শক, সর্বোপরি আকর্ষণীয় দেহবল্লরি ও সাজসজ্জাসম্পন্ন ফ্যাশনেবল স্বল্পবসনা চিয়ার্স গার্লসদের দল। হিপ হিপ হুররে! ‘একেবারে হৈ-হৈ রৈ রৈ বল গড়াইয়া গেল কই ...’। ক্রিকেটের বলটা ক্রমশ ফুলেফেঁপে ফুটবলের আকার নিয়ে গড়িয়ে যাওয়ার কথা ছিল ঢাকার মাঠেও, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। কেন যে সেটি হলো না, সেটা এক দুর্জ্ঞেয় রহস্য বটে। অথচ ঢাকার ফুটবলের এমন দৈন্যদশা ছিল না আগে। সত্যি বলতে কি সমগ্র উপমহাদেশে এক সময় ফুটবল মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন বাংলার ফুটবলাররা। তখন অন্য কোথাও ফুটবলের তেমন প্রচলন অথবা জনপ্রিয়তা ছিল না। এর অল্পবিস্তর নিদর্শন পাওয়া যায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার বর্তমান পুলিশ কমিশনার সৌমেন মিত্রের এমফিল গবেষণাপত্রে, যেটি পরিচালিত হয়েছিল দিল্লীর জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। ‘ইন সার্চ অব এ্যান আইডেনটিটি : দি হিস্ট্রি অব ফুটবল ইন কলোনিয়াল ক্যালকাটা (১৮৮০-১৯৫০)। এখানে আরও একটি বিষয় অবশ্যই উল্লেখের দাবি রাখে যে, ব্রিটিশ শাসন-শোষণ-বঞ্চনা তথা ঘৃণ্য ঔপনিবেশিক আমলের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলন-সংগ্রাম তথা স্বাদেশিকতা ও জাতীয়তাবাদের উজ্জীবনে অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছিল কিন্তু ফুটবলই। অতীতের পুরনো কাসুন্দি কিংবা বিশুদ্ধ গব্যঘৃত যাই বলি না কেন, স্মৃতি রোমন্থন করে সেসব ঘাঁটাঘাঁটি করে কোন লাভ নেই। ফিরে আসি বরং বর্তমানে। এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে আগেও ঢাকার মাঠের ফুটবল ছিল রমরমা ও তুখোর জনপ্রিয় খেলা। আগা খান গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট ছিল বেশ প্রতিযোগিতামূলক। বাঙালী খেলোয়াড়দের পাশাপাশি মাকরানি খেলোয়াড়রা দাপটের সঙ্গে দাপিয়ে বেড়াত ঢাকার মাঠ। কলকাতায় যেমন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মোহামেডান অনুরূপ ঢাকায় ছিল মোহামেডান-ভিক্টোরিয়া-ওয়ান্ডার্স। খেলার মানও ছিল বেশ ভাল। হয়ত ইউরোপ কিংবা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো নয়, তবে নিঃসন্দেহে প্রতিযোগিতামূলক। অন্তত টেকনিক ও স্কিলটা ছিল বেশ ভালই। গতি কিছুটা কম, এই যা। তবে যথাযথ ও সঠিক পরিচর্যা করলে এই ফুটবলই এগোত। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলেরও একটা স্ট্যান্ডার্ড ছিল এবং সে সময়ে তাদের ভূমিকাও সুবিদিত। স্বাধীনতার পরে আবাহনী-মোহামেডান-ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদকে ঘিরে যে ফুটবল গড়াল মাঠে তার মানও অন্তত খারাপ বলা যাবে না। তবে সেটাই কেন যেন গত ক’বছরে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ল। মাঝখানে খেলা প্রায় বন্ধই ছিল বলা যায়। ফুটবল খেলায় আগ্রহী লোকজন এবং দর্শক সংখ্যা যে কমে গেল, ঠিক তা নয় ব্যাপারটা। বস্তুতপক্ষে মাঠে যদি খেলাই না হবে, তাহলে খেলোয়াড়-দর্শকরা যাবে কোথায়! অতঃপর তারা ঘরে বসে টিভি পর্দায় ইউরো কাপ দেখে, বিশ্বকাপ দেখে, কোপা কাপও বাদ যায় না। বরং একটি বিষয়ে সাদৃশ্য লক্ষণীয়। ঢাকার মতো কলকাতার ফুটবলও মৃতপ্রায়, মুমূর্ষু। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র বেঁচে থাকলে দীর্ঘশ্বাস মোচন করে লিখতেন, ‘হায় ফুটবল তোমার দিন গিয়াছে’। উদাহরণ দশটা দিয়ে লাভ নেই। বোধকরি একটিই যথেষ্ট। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ৮টি খেলার মধ্যে বাংলাদেশ জাতীয় দল সাতটিতে পরাজয় এবং একটিতে ড্র করতে সক্ষম হয়েছে। এর চেয়ে অধঃপতন আর কী হতে পারে! অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না আদৌ। কী সরকারী/বেসরকারী- সব পর্যায়ের ধারাবাহিক উপেক্ষা, অনাদর, অবহেলা সর্বোপরি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে ফুটবলের মান গিয়ে ঠেকেছে একেবারে তলানিতে। অথচ এমনটি কেন হলো, কী কারণ, এর জন্য কে বা কারা দায়ী, সেসব নিয়ে কোন গবেষণা দূরে থাক, তেমন সিরিয়াস আলোচনা-সমালোচনা, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামও হলো না কোথাও, কোন পর্যায়ে। বর্তমান বাংলাদেশে কত শত বড়লোক, কতগুলো গ্রুপ অব কোম্পানি, ব্যবসায়ীদের কত বড় বড় শক্তশালী সংগঠন- কেউ এগিয়ে এলো না ফুটবলের পৃষ্ঠপোষকতায়! এমন বড় কোম্পানিও আছে, যারা একটি-দুটি নয়, বরং দু’-চারটি বিভিন্ন পর্যায়ের ফুটবল দল পুষতে পারে। খেলোয়াড়দের চাকরি বাকরি দিয়ে সহায়তা করতে পারে। বড়সড়, একেবারে আন্তর্জাতিক না হোক, এশীয় অথবা দক্ষিণ এশীয় পর্যায়ে নামী-দামী একটি গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট স্পন্সর করতে পারে অনায়াসে। হায়, কেউ এগিয়ে আসে না! অথচ তারাই আবার উচ্চমূল্যে টিকেট কিনে সপরিবারে ফুটবল উপভোগ করতে যান ব্রাজিল অথবা ইউরোপে। তাহলে কী বলতে হবে, দেশপ্রেম শুধু দুর্ভাগাদের জন্য, বড়লোকদের জন্য শুধুই বিদেশ! এর পাশাপাশি অবশ্য সরকারের অবহেলাও কম দায়ী নয় কোন অংশে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বোধকরি ক্রিকেট ভালবাসেন। তিনি মাঠে গিয়ে খেলাও দেখেন। তবে ভাল ফুটবল খেলা হলে তিনি মাঠে যেতেন না, এ কথা বিশ্বাস হয় না। তিনি সব রকম খেলাধুলায় সবিশেষ অনুগ্রাহী ও পৃষ্ঠপোষক। খেলোয়াড়দের তিনি উৎসাহ দিতে জানেন বৈকি। প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের জাতীয় বাজেট হয়। সেখানে তিনি ফুটবলের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ বরাদ্দ দিতে পারেন বৈকি। বাঙালীর রক্তে ক্রিকেট, ফুটবল দুটোই আছে। প্রয়োজন শুধু পৃষ্ঠপোষকতা ও স্পন্সর। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন একটা আছে বটে। তবে বিসিবির মতো তাদের কর্মতৎপরতা প্রত্যক্ষ করা যায় না। বাফুফের এবারের নির্বাচন নিয়ে যত হৈ হট্টগোল হলো, তেমনটা মাঠে হয় না। পর পর তিন টার্মে সালাউদ্দিন সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আমরা আশান্বিত হয়েছি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, সে আশা আদৌ পূরণ হয়নি। ফুটবলের উন্নতি নয়, অবনতি হয়েছে। সালাউদ্দিন নিজে হয়ত দুর্নীতি-অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন; তবে এবারের কাউন্সিল অডিট নিয়ে একাধিক অভিযোগ উঠেছে। ফুটবলের জন্য তাকে যোগ্য প্রমাণ করার এবারই শেষ সুযোগ। বাফুফে সভাপতি ফুটবলের উন্নয়নে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতার কথা বলেছেন। বলেছেন, প্রতি উপজেলায় ফুটবল একাডেমি হবে। অত দরকার নেই। আপাতত বিভাগীয় পর্যায়ে করা হোক ফুটবল একাডেমি। উপজেলা পর্যায়ে এক বা একাধিক মাঠ করা হোক, বর্তমানে যা নেই। নিয়মিত উপজেলা লীগ এবং আন্তঃস্কুল টুর্নামেন্টটা আয়োজন করা হোক। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসবে প্রতিভাবান খেলোয়াড়। উদাহরণ, কলসিন্ধুর গ্রামের মেয়েরা, যেখানে বিদ্যুত পর্যন্ত ছিল না। বাংলাদেশের অনুর্ধ-১৪ বছরের মেয়েরা পর পর দু’বার এশিয়ার দক্ষিণ ও মধ্য অঞ্চলে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, ন্যূনতম প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সুযোগ পেলে তারাও পারে বৈকি। মোটামুটি এই বয়সটাকে টার্গেট করে পরিকল্পনামাফিক এগোতে হবে ফুটবলকে। বিদেশী খেলোয়াড় আনার চেয়ে বিদেশী ভালো কোচ আনতে হবে। লাতিন আমেরিকা কিংবা ইউরোপের ঘরানা থেকে নয়; বরং টোটাল ফুটবল খেলার কনসেপ্ট ধরে এগোতে হবে, যেখানে খেলবে সবাই একযোগে, একসঙ্গে। কেননা মনে রাখতে হবে, ফুটবল একটি দলগত খেলা, যার পেছনে লুকিয়ে আছে দেশকে ভালবাসার অনুপ্রেরণা।
×