ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দল নিয়ে সন্তুষ্ট ক্রুইফ, তবে...

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ২৬ মে ২০১৬

জাতীয় দল নিয়ে সন্তুষ্ট ক্রুইফ, তবে...

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অসুখ হলে তা সারানোর নানা উপায় আছে। এলোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, ঝাঁড়ফুক, তাবিজ-কবজ ... আরও কত কি! বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলেরও একটা অসুখ আছে। সেই অসুখটি বহু বছরের পুরনো। জনাচারেক ‘ওঝা’ (পড়ুন কোচ) আদাজল খেয়ে, কষে কোমর বেঁধে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ‘যেই লাউ, সেই কদু!’ রোগটা এখনও সারলো না। আর এটা নিয়েই নাখোশ লোডভিক ডি ক্রুইফ। বুধবার ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোঃ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে জাতীয় দলের অনুশীলন হয়। অনুশীলন শুরুর আগে জাতীয় দলের এই ডাচ কোচ এ বিষয়ে তার অসন্তুষ্টির কথা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশ দলের সমস্যা হলো পুরো ম্যাচে অনেক ভাল খেলেও শেষ ১৫ মিনিটে খেই হারিয়ে ফেলে। এ প্রসঙ্গে ক্রুইফ বলেন, ‘শেষ ১৫ মিনিটে ম্যাচ ধরে রাখতে পারে না ছেলেরা। এটি নিয়ে আমি আগেও অখুশি ছিলাম। এখনও আছি। এটা মূলত মনোসংযোগের অভাবেই ঘটে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য চেষ্টা করছি। মাঠে অনুশীলনের পাশাপাশি এসব বিষয় ভিডিও ক্লাসের মাধ্যমে হাতে কলমে বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করছি খেলোয়াড়দের। আসন্ন এএফসি এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ-তাজিকিস্তান ম্যাচের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে অবশ্য সন্তুষ্টই ক্রুইফ। এ্যাওয়ে ম্যাচে আগামী ২ জুন তাজিকিস্তানকে মোকাবেলা করবেন মামুনুল-ওয়ালীরা। আর তাই রোজ দুই বেলা করে চলছে কঠোর অনুশীলন। ক্রুইফ জানান, ‘আমরা কঠোর অনুশীলন করছি দিনে দুইবার করে। এই ট্রেনিংয়ে বল নিয়ে অনুশীলন এবং জিমও রয়েছে।’ ডিফেন্ডার মোনায়েম খান রাজু ক্যাম্পে ডাক পাবার আগে থেকেই চোটগ্রস্ত ছিলেন। চোট থেকে এখনও পুরোপুরি সেরে ওঠেননি তিনি। এ প্রসঙ্গে ক্রুইফ বলেন, ‘রাজু আহত। তাই তাকে আপাতত বল দিয়ে অনুশীলন না করিয়ে জিম করানো হচ্ছে। দলকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নিজেদের মধ্যে অনুশীলন ম্যাচও খেলাচ্ছি। যেমন ৬ জনের বিপরীতে ৬ জন। ৭ জনের বিপরীতে ৭ জন। ১১ জনের বিপরীতে ১১ জন।’ ক্রুইফ আরও যোগ করেন, ‘আশা করছি এভাবে কঠোর ট্রেনিং করলে তাজিকিস্তানে গিয়ে ভাল ফল করা সম্ভব। প্রতিপক্ষরা ফ্রি কিক, কর্নার এগুলো থেকেই গোল বেশি করে। তাই এসব নিয়েই বেশি অনুশীলন করাচ্ছি। ফ্রি কিক কিভাবে আটকাতে হবে। কর্নার থেকে বল আসলে কিভাবে আটকাতে হবে এসব নিয়েই কাজ করছি।’ শেষ ১৫ মিনিটের মনোসংযোগের ঘাটতির সমস্যার কথা বাদ দিলে অনুশীলনে দলের সার্বিক পারফর্মেন্সে খুশি ক্রুইফ। বলেছেন, ‘দিনে দিনে উন্নতি করছে ছেলেরা। সবকিছুই ঠিকঠাক মতোই এগুচ্ছে।’ কিছুদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত ২৩ জনের দল ঘোষণা করবেন ক্রুইফ। কারা থাকবেন সেই দলে? ‘দলে ঠাঁই পাবে তারাই যাদের রয়েছে হাই এনার্জি এবং যারা ভাল গতিশীল।’ এদিকে তাজিকিস্তান যাওয়ার আগে আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচের আলোচনা চলছে বাফুফের। তবে সেটি না হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি। যদি না হয় তাতেও খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন কোচ। সেটি কোনভাবে ম্যানেজ করে নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। গত ১২ মে থেকে জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হয়। দলের চার খেলোয়াড় তাদের ইনজুরি সম্পর্কে লিখিতভাবে জানিয়েছেন এবং ইতোমধ্যেই ক্যাম্প ছেড়েছেন। এরা হলেন : ডিফেন্ডার মোহাম্মদ লিঙ্কন, কেষ্ট কুমার বোস, মিডফিল্ডার শাহেদুল আলম শাহেদ জুনিয়র এবং গোলরক্ষক মাজহারুল ইসলাম হিমেল। কদিন আগে ক্যাম্প ছিল ৩৬ জনের। পরে ক্রুইফ এসে ছয় জনকে বাদ দিলে তা ৩০-এ নেমে আসে। সোমবার চার জন চোট পাওয়ায় সংখ্যাটা আরও কমে দাঁড়ায় ২৬-এ। এখন এই ২৬ জন থেকে চূড়ান্ত দলে ঠাঁই পাবে ২৩ জন। জানা গেছে ২৭ মে’র মধ্যেই ঘোষিত হবে চূড়ান্ত দল। তাজিকিস্তানের বিপক্ষে এর আগে গত বছরের ১৬ জুন অনুষ্ঠিত হোম ম্যাচে (ফিফা বিশ^কাপ বাছাইপর্ব, স্কোর ১-১ গোলে ড্র) অনেক ভাল খেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এ্যাওয়ে ম্যাচের ফলটা তেমন ভাল ছিল না (গত বছরের ১২ নভেম্বর, স্কোর ০-৫ গোলে হার)। গত ২০ জুন চারদিন অনুশীলন করানোর পর দলের পরিধি কমাতে কাটছাঁট প্রক্রিয়া শুরু করেন ক্রুইফ। ৩৬ জন থেকে পাঁচ জনকে বাদ দেন। বাদ পড়াদের সবাই নতুন মুখ। এরা হলেন : রহমতগঞ্জের দুই ফরোয়ার্ড নুরুল আবসার, মান্নাফ রাব্বি; চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডের মিডফিল্ডার কৌশিক বড়ুয়া, উত্তর বারিধারার মিডফিল্ডার খালেকুজ্জামান সবুজ এবং বিজেএমসির উইঙ্গার সৈকত মাহমুদ। আগেরদিন চোটের কারণে ক্যাম্প ছেড়েছিলেন শেখ রাসেলের ডিফেন্ডার আতিকুর রহমান মিশু। এখন তাদের সঙ্গে যুক্ত হলেন কেষ্ট-লিংকন-শাহেদ-হিমেল।
×