ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালালে লাগেজ বিড়ম্বনা কাটছে না চার দশকেও

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ মে ২০১৬

শাহজালালে লাগেজ বিড়ম্বনা কাটছে না চার দশকেও

আজাদ সুলায়মান ॥ চার দশকেও বিমান যাত্রীদের লাগেজ বিড়ম্বনা কাটছে না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের লাগেজ সার্ভিস বিশ্বমানে উন্নীত করতে বিমানের নেয়া কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এজন্য বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিস দেশে-বিদেশে সমালোচিত। শেষ পর্যন্ত এ সঙ্কট উত্তরণে বিমান জয়েন্ট ভেঞ্চারে গ্রাউন্ড সার্ভিস বিদেশী কোম্পানির কাছে ছেড়ে দেয়ার উদ্যোগ নেয়। বার বার দরপত্রও আহ্বান করে। সর্বশেষ ডাকা দরপত্রেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। বার বার দরপত্র আহ্বান করা হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বিমান। সর্বশেষ আহ্বান করা দরপত্রেও কার্যাদেশ দেয়ার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও বিমান জয়েন্ট ভেঞ্চারে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দেয়ার কোন অগ্রগতি দেখাতে পারছে না। এ নিয়ে খোদ সংসদীয় কমিটিও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিমান কর্তৃপক্ষ বলছে খুব শীঘ্রই কার্যাদেশ দেয়া যাবে। চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী বলেছেন, প্রয়োজনে দরপত্র মূল্যায়নের জন্য আইএটিএ থেকে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। জানা যায়, গত মঙ্গলবারের বিমান পর্ষদের বৈঠকেও প্রয়োজনে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। তবে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও বিমানের ভেতরের সূত্র বলছে ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্যমতেÑ এবারের আরএফপি দিয়েও কাজ হবে না। এতে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। যেসব শর্তাবলী দেয়া হয়েছে তা বিদেশীদের মানার সুযোগ নেই। এবারের দরপত্রও মূল্যায়ন করার মতো বিশেষজ্ঞ বিমানে নেই। এক্সপার্ট ছাড়া চূড়ান্ত মূল্যায়নের দায়ও নিতে চাচ্ছেন না বিমানের কোন কর্মকর্তা। কারণ বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। বিমানের সমস্ত জনবলের বেতন-ভাতাদি আসে এ খাত থেকে। বিমানের মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাকিরা কেউ চায়না এটা বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়া হোক। জানা যায়, সর্বশেষ ডাকা দরপত্রে অংশ নেয় দুবাইয়ের ডানাটাসহ ছয়টি নামী-দামী প্রতিষ্ঠান। গত ১৮ মে রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল (আরএফপি) দরপত্র খোলা হয়। এখন মূল্যায়নের অপেক্ষায়। দরপত্রে এসব কোম্পানি কী ধরনের অফার দিয়েছে, কোনটা বিমানের জন্য লাভজনক, কোনটা লোকসান, কোনটা কত বছর কাজ করতে ইচ্ছুকÑ এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে। বিমান বলছেÑ বাংলাদেশে এর আগে কখনও এ ধরনের কোন দরপত্র নিয়ে কোন কাজ হয়নি। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ছাড়া এবারের দরপত্রও মূল্যায়ন সম্ভব হবে না। বাংলাদেশে ওই মানের বিশেষজ্ঞ নেই। এখন হয় বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক ভাড়ায় আনতে হবে, নয়ত বাদ দিতে হবে। বিমানের অভিজ্ঞ কোন চাকুরে কর্মকর্তাও এ দরপত্রের মূল্যায়ন কাজের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন। এদিকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব জয়েন্ট ভেঞ্চার (জেভি) পদ্ধতিতে বিদেশী কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে বিমান, তা বাস্তবায়ন নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যথেষ্ট অবকাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে। এমন ত্রুটিপূর্ণ বিমানবন্দরে বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কোন উপায় নেই। জনবল নিয়োগ ও সরঞ্জামাদি বাড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক মানের অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। বছরে মাত্র বিশ লাখ যাত্রী ধারণক্ষমতা নিয়ে তিন যুগ আগে নির্মাণ করা হয় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখন সে যাত্রীসংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে তিন গুণেরও বেশি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল প্রায় পয়ষট্টি লাখ। এখন যদি ছয়টি ফ্লাইট একসঙ্গে নামে তাহলে এরাইভাল ইমিগ্রেশনের যাত্রী দাঁড়ানোর সুযোগ থাকে না। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংং সার্ভিস তখন তলানিতে গিয়ে দাঁড়ায়। একসঙ্গে ছয়টি ফ্লাইট নামার পর যে জনবল ও সরঞ্জামাদি দরকার বিমানের তা নেই। তার ওপর রয়েছে গ্রাউন্ড সার্ভিস ইকুইপমেন্টের (জিএসই) প্রকাশ্য দুর্নীতি। যার বিরুদ্ধে বিমান কঠোর ব্যবস্থা নিতে চিরকালই ব্যর্থ। মূলত ইউনিয়নের কাছে যুগ যুগ ধরে জিম্মি এই জিএসই শাখার লোকজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং শাখার কাজ। তারা চাইলে একটি ফ্লাইট এক চল্লিশ মিনিটেও লোড আনলোড করতে পারে। আবার এই নেই, সেই নেই অজুহাত দেখিয়ে তিন ঘণ্টাও লাগাতে পারে। এ শাখা সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জনকারী বিমানবন্দর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুফ উদাহরণ টেনে বলেছেন, একসঙ্গে যদি ইতিহাদ, এমিরেটস, টার্কি ও বিমানের ফ্লাইট নামেÑ তাহলে সবার আগে জিএসই দায়িত্বরত কর্মচারীরা আর্থিক সুবিধা নিয়ে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোকে সার্ভিস দেয়। বিমান যেহেতু নিজেদের এয়ারলাইন্স, এখান থেকে কোন আর্থিক ফায়দা লোটা যাবে নাÑ সেজন্য সবার আগে নামলেও সবার শেষে সার্ভিস দেয়া হয়। এদের সঙ্গে রয়েছে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের যোগসাজশ। ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে তাদের হাতেনাতে ধরে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বার বার এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়ায় এখন পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতির দিকে। কিন্তু কতক্ষণ এভাবে শাসন করে চালানো যাবে। এটা একটা সিস্টেমে আনতে হবে। সেজন্যই তো বিদেশী কোম্পানির কাছে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। জানতে চাইলে বিমানের সাবেক এক ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেছেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খুব একটা কঠিন কাজ বা বিষয় নয়। একটু নজর দিয়ে যদি কাজ করা হয়, যদি কিছু লোকবল বাড়ানো হয়, যদি প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি দেয়া হয়Ñ তাহলেই মানসম্মত সার্ভিস দেয়া সম্ভব। কিন্তু এ কাজটি গত ৪০ বছরেও করা হয়নি। সেজন্যই এখন বিদেশী কোম্পানির সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে যাওয়ার আরএফপি করা হয়েছে। যদি চুক্তি ভালভাবে মূল্যায়ন করা যায় তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি অবশ্যই ঘটানো যাবে। বেশি নয়, মাত্র এক শ’ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি আর শ’ পাঁচেক জনবল নিয়োগ দিলেই এ খাতের সার্ভিস মানসম্মত করা সম্ভব। তবে এ বিষয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ বিদেশীদের হাতে দিয়ে দিলেও সেবার মান তেমন একটা উন্নতি ঘটবে না। কারণ শাহজালাল বিমাবন্দরের অবকাঠামোগত ত্রুটির কারণে এখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক অত্যাধুিনক মানের সরঞ্জামাদি ব্যবহার করা যাবে না। শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কোন সুযোগ এখানে নেই। যদি তাই হয় তাহলে সেখানে বিদেশীরা শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে আসবে কিসের মোহে? বিমানের কাস্টমার সার্ভিস বিভাগের মতে, আশির দশকের সূচনায় তৈরি শাহজালাল বিমানবšদরে রয়েছে বড় ধরনের অবকাঠামোগত ত্রুটি। বর্তমান যাত্রীসংখ্যা ও প্রয়োজনীয় স্থাপনার তুলনায় এটা এখন ঘিঞ্জি ঘরে পরিণত হয়েছে। সারি সারি পানের দোকান, মদের দোকান, মিষ্টির দোকান, কাপড়ের দোকান, বইয়ের দোকান, ডলার, ব্যাংক-বীমা ও মোবাইল ফোনের পসরা দেখে মনে হয় এটা বাণিজ্যমেলায় পরিণত হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে যেখানেই ফাঁকা জায়গাÑ লিজের ব্যবসায়ীদের ডেকে এনে তুলে দেয়া হয়েছে দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সবচেয়ে মূল্যবান ও প্রয়োজনীয় জায়গা। অবস্থা এখন এতটাই শোচনীয় হয়েছে যে, ইচ্ছে করলেও এখানে বিদেশী কোন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলারের প্রয়োজনীয় জায়গা দেয়া যাবে না। শুধু টাকা বিনিয়োগ করলেই তো সেবা বাড়বে না। এখানে নিচতলার এরাইভালের জন্য রয়েছে মাত্র আটটা বেল্ট। বিনিয়োগকারীরা যদি আর একটা বেল্ট বাড়াতে চায় তাহলে জায়গা কোথায়? এরাইভাল ইমিগ্রেশনের অবস্থা তো আরও শোচনীয়। এতটুকু জায়গায় একযোগে ৫-৬টা ফ্লাইট নামার পর যাত্রীদের দাঁড়ানোর পরিবেশ থাকে না। বিদেশী কোম্পানি এসেই তো চাইবে এটা আরও বাড়াতে। কিন্তু দুই পাশের অবকাঠামো এমন অবস্থায় রাখা হয়েছেÑ সেটা আর বৃদ্ধির উপায় নেই। যেমন বেল্ট এরিয়ার পশ্চিম পাশের দেয়ালের পাশে যেভাবে পিলার তৈরি করে রাখা হয়েছে তাতে উড়োজাহাজ থেকে লাগেজ নিয়ে সরাসরি বেল্টের কাছে আসতে পারে না। অনেকটা ঘুরে এসে দূরে রেখে হাতে ঢিল দিয়ে বেল্টে ফেলতে হয়। এতে সময় যেমন লাগে তেমনি লাগেজ কেটে ছিঁড়ে নষ্ট হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতেই চলছে এখানকার সার্ভিস। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এসে এটার উন্নতি কিভাবে ঘটাবে তা বিশেষজ্ঞরাও বলতে সন্দিহান। বিমানের সাবেক পরিচালক জনকণ্ঠকে পরিসংখ্যানগত তথ্যসহ জানিয়েছেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বলতে শুধু লাগেজ ডেলিভারি আর লোড-আনলোড বোঝায় না। যাত্রীর চেকইন, লাগেজ মাপা, ট্যাগ লাগানো, টিকেট চেকিং, ইমিগ্রেশনের পর তাদের লাউঞ্জে নিয়ে প্রয়োজনে অপেক্ষায় রাখা, বোডিং ব্রিজ পয়েন্টে ফের ডকুমেন্টেশন, উড়োজাহাজে ওঠার আগ পর্যন্ত সমস্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তার লাগেজ ব্যাগেজ লোড করা। একইভাবে একটি ফ্লাইট বোর্ডিং ব্রিজে লাগানোর পর যাত্রীর লাগেজ আনলোড করে বেল্টে দেয়া, তার লাগেজের ট্যাগ মেলানোর কাজ পর্যন্ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের লোকজনকেই করতে হয়। তিনি জানান, ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশন্সের (আইএটিএ) মান অনুযায়ী একটি ফ্লাইট বোডিং ব্রিজে লাগার পঁচিশ মিনিটের মধ্যে প্রথম লাগেজ ডেলিভারি দিতে হয়, আর শেষ লাগেজ শেষ করতে হয় নব্বই মিনিটের মধ্যে। এ মান অনুযায়ী শাহজালাল বিমানবন্দরের সার্ভিস দেয়া হয় কিনাÑ সে নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সাধারণ যাত্রীদের চিরকালের অভিযোগ সঠিক সময়ে লাগেজ পাওয়া যায় না। যদিও বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান দাবি করছেনÑ এশিয়ার যে কোন দেশের এয়ারপোর্টের তুলনায় এখন অনেক ভাল। পরিস্থিতি এখন যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এখন ফ্লাইট বোর্ডিং ব্রিজে লাগার পর বিশ মিনিটের মধ্যেই প্রথম লাগেজ ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে এবং এক ঘণ্টার মধ্যেই সব লাগেজ দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মাঝে মাঝে যদি কোন ফ্লাইট দেরি হয় সেটা বোর্ডিং ব্রিজের বাইরে আউট-বে-তে পার্কিং করার জন্য। ওই ফ্লাইটের লাগেজ তাড়াতাড়ি আনলোড করতে চাইলেও সম্ভব নয়। বেল্ট এরিয়া থেকে টু ট্রাক্টর নিয়ে এপ্রোন পেরিয়ে আউট-বে-তে যেতে হলে অনুমতি লাগে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের। কারণ ওই দিক দিয়ে উড়োজাহাজ চলাচল করে। কোন দেশীয় এক্সপার্ট না পাওয়া গেলেও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে বিমানের ভেতর বাইরে চলছে নানা হিসেবনিকেশ। এতদিন বর্তমান সিবিএ বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে তীব্র বিরোধিতা করলেও এখন হঠাৎ নমনীয় ভূমিকা পালন করছে। যদিও সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান বলেছেন, ম্যানেজমেন্ট তো বলছে সিবিএর সঙ্গে আলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একতরফাভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিদেশীদের কাছে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত মানা হবে না। প্রয়োজনে আন্দোলন গড়া হবে। তবুও এ সিদ্ধান্ত মানা যাবে না। এ সম্পর্কে বিমানের এক পরিচালক জানান, কারও চাপে যদি কার্যাদেশ দিতেই হয় তাহলে তার পরিণাম কি হবে, সেটা কতটুুকু কল্যাণ বয়ে আনবে বিমানের জন্যÑ সেটা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। বিমানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়ন ও সিবিএ নেতার প্রধান প্রশ্ন হচ্ছেÑ কিভাবে কত বছরের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ছেড়ে দেয়া হবে। এতে বিমান কত টাকা পাবে, আর কত টাকা আয় করবে, বর্তমানে যা পায় তার চেয়ে কি বেশি আয় হবে, নাকি সেটা দুই ভাগ হয়ে আরও কমে যাবে। এসব প্রশ্নের জবাবে বিমানের বিভিন্ন বিভাগের প্রাথমিক হিসেবনিকেশে দেখা যায়Ñ বর্তমানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খাত থেকে বছরে সাড়ে চার শ’ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আসে। জয়েন্ট ভেঞ্চারে ছেড়ে দেযার পর কি এ টাকার ওপর ভাগ বসানো হবে নাকি এ টাকা বাদ দিয়ে উপার্জিত টাকার ওপর সমান হারে ভাগ বসানো হবে। বিদেশীরা এ খাতে কত টাকা ব্যয় করবে, কত বছরের জন্য চুক্তি করবেÑ সেটা মূল্যায়নের জন্য বিমানের কৌশল কী হবে, তা অনিশ্চিত। বিশেষ করে শাহজালালের বর্তমান অবস্থায় তিন বছরের বেশি দীর্ঘমেয়াদের জন্য এ চুক্তি করার কোন যৌক্তিকতা নেই। আগামী তিন বছরের মধ্যেই থার্ড টার্মিনাল নির্মিত হয়ে যাবে। তখন পরিস্থিতি এমনিতেই স্বাভাবিক ও আন্তর্জাতিক মানের হবে। এতে কারও কোন দ্বিধা নেই। এ অবস্থায় তিন বছরের কিংবা পাঁচ বছরের জন্য কোন বিদেশী কোম্পানি দরপত্রের সব শর্ত মেনে নিয়ে রাজি হয় কি না সেটাই দেখার বিষয়। এ সম্পর্কে সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান বলেন, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নিয়ে জেভি-তে দেয়া মানে লুটেরা কা- ছাড়া আর কিছুই নয়। এখন শোনা যাচ্ছে আইএটিএ থেকে কনসাল্ট্যান্ট নিয়ে দরপত্র মূল্যায়ন করা হবে। এটাও একটা লুটপাটের আয়োজন করা ছাড়া কিছুই নয়। এটা হবে সেই অর্গানোগ্রামের কনসাল্টের মতো। বছর কয়েক আগে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ভারত থেকে একটি কনসাল্টিং কোম্পানিকে দিয়ে অর্গানোগ্রাম তৈরি করা হয়। সেই অর্গানোগ্রাম এখন বাথরুমে ফেলে রাখা হয়েছে। বাস্তবায়ন করা তো দূরের কথা বিমান সেটার কথা ভুলেই গেছে। একই পরিণতি হবে বিদেশী পরামর্শক দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দরপত্র মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রেও। দেখা যাবে কোটি টাকা ব্যয়ে বিদেশী পরামর্শক এনে যে প্রতিবেদন দেবে বিমান তা বাস্তবায়ন করতে অক্ষম। তিনি এ সম্পর্কে একটি উদাহরণ টেনে বলেন, শুধু গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কেন জয়েন্ট ভেঞ্চারে ছেড়ে দেয়ার প্রশ্ন আসছে? আমরা তো চাই গোটা বিমানের প্রতি বিভাগেই স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ নিতে। বিদেশীরা শুধু সোনার ডিম পাড়া কিংবা লাভের খাতে বিনিয়োগ করতে চাইবে লোকসানের খাত নেবে না কেন। গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং কাজ সিবিএর কাছে জিম্মি, কথা কথায় তুচ্ছ কারণে ধর্মঘটের মতো ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী খেলায় মেতে ওঠে। সেবার মান তলানিতে ঠেকেছে এমন অভিযোগ সম্পর্কে মশিকুর রহমান পাল্টা অভিযোগ আনেন ম্যানেজমেন্টের বিরুদ্ধে। বলেন, সিবিএ দুনিয়া ব্যাপী স্বীকৃত একটা প্রতিষ্ঠান। এটা অস্বীকার করা বা এড়ানোর কোন উপায় নেই। যৌক্তিক কিছু দাবি যদি না মানা হয় তাহলে আন্দোলন সংগ্রাম তো করতেই হয়। সেবার মান সম্পর্কে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত ত্রুটি, লোকবল ও সরঞ্জামাাদির অভাবে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সেবা ব্যাহত হয়। এ বাস্তবতা বিমান জানে। কিন্তু মানে না। বিমান ইচ্ছা করলে কিছু জনবল ও সরঞ্জামাদি বাড়ালেই সঙ্কট অনেকটা উত্তরণ সম্ভব। এ সম্পর্কে শাহজালাল বিমানবন্দরে দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বপালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুফ ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। তিনি নিজে শাহজালালে প্রতিনিয়ত গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সমস্যা নিয়ে দেনদরবার ও বিচার আচার করায় সমস্যার গভীরে গিয়ে বেশ তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। তারই আলোকে বলেছেন- শাহজালাল বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত কিছু ত্রুটি থাকা সত্ত্বে লাগেজ ডেলিভারিতে আরও উন্নতি ঘটানো সম্ভব। আগের তুলনায় ইতোমধ্যে অনেক উন্নতি ঘটলেও অনেক বিষয় রয়ে গেছে চোখের আড়ালে। যেমন- আগে একটা ফ্লাইটের সম্পূর্ণ ব্যাগেজ ডেলিভারি দিতে সময় লাগত দুই থেকে তিনঘণ্টা। এখন সেটা এক ঘণ্টায়ও হয়ে যাচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে বিমানববন্দর ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতের সাঁড়াশি অভিযানের জন্য। উপর্যুপরি বেশ কয়েকটা এমিরেটস ইতিহাদ তুর্কী, টাইগারসহ বেশ কয়েকটা এয়ারলাইন্সকে লাগেজ ডেলিভারি দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া লেফট বিহাইন্ড লাগেজের জন্যও জরিমানা করায় এয়ারলাইন্সগুলো নিজেরাই সতর্ক হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে ফ্লাইট ব্যাগেজ ডেলিভারিতে ওরাও বেশ উদগ্রীব থাকে। কেননা বোর্ডিং ব্রিজে একটা ফ্লাইট এক ঘণ্টা থাকার জন্য সিভিল এভিয়েশনকে চার্জ পরিশোধ করতে হয় এক হাজার ডলার। যদি এক মিনিটও বেশি হয় তাহলেও দিতে পরিশোধ করতে হয় দুই হাজার ডলার। সেজন্য এয়ারলাইন্সগুলো পারতপক্ষে তাদের কাজকর্ম এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়। কিন্তু ওই যে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কর্মকর্তা কর্মচারীরা সঠিক সময়ে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, হোক সেটা স্বেচ্ছায় বা অদক্ষতায়। সেটার জন্যই এখন এ খাত বিদেশীদের হাতে ছেড়ে দেয়ার যৌক্তিকতা দেখা দিয়েছে। আর বর্তমান অবকাঠামোতেই বিদেশী কোম্পানিগুলো বিশ্বমানের সেবা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শাহজালাল, শাহ আমান ও ওসমানী বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং যদি একটি কোম্পানিকে না দিয়ে একাধিক কোম্পনিকে দেয়া হয়। তাহলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাস্বরূপ তারা ভাল সার্ভিস দেবে। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা যে দাবি করছে গ্রাউন্ড সার্ভিস বিদেশীদের কাছে দিলে হয়তো সার্ভিসের মান বাড়বে। কিন্তু বিমানের রাজস্ব তো বাড়বে না। সেক্ষেত্রে তো বিমানের রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা থাকে। এমন প্রশ্নের জবাবে মোঃ ইউসুফ বলেন-এটা ঠিক নয়। সার্ভিস বাড়ানো হলে এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ হারে চার্জ বাড়ানো যাবে। আমার জানা মতে এমন কয়েকটি এয়ারলাইন্স আছে। মাত্র দেড় হাজার টাকা করে সার্ভিস দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক দরের তুলনায় খুবই কম। বিদেশীরা আসলে এ সার্ভিস তিন থেকে চারগুণ বাড়ানো সম্ভব হবে। এ হারে বিমানের বর্তমান রাজস্ব দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার সুযোগ থাকছে। সঙ্কট কোথায় ॥ একটি বিদেশী এয়ারলাইন্সের এয়ারপোর্ট ম্যানেজার বলেন, বিমানের যন্ত্রপাতির সরঞ্জামাদির সঙ্কট প্রকট। তারপরও যদি যার যার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করত, এ সমস্যা অনেকটাই এড়ানো যেত। একটা ফ্লাইট বোর্ডিং ব্রিজ বা পার্কিং এরিয়ায় আসার আগেই সেখানে রেডি থাকা আবশ্যক হাই লিফটার, টু ট্রাক্টর ও অন্যান্য যানবাহন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, রেডি থাকা দূরের কথা, ফ্লাইট ল্যান্ড করার বিশ মিনিট অনেক ক্ষেত্রে বিশ আধঘণ্টার পরও ওসব যন্ত্রের দেখা মিলেনি। এর কারণ হিসেবে বিমান বলে আসছে, লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাব। তবে কি ইচ্ছে করেই ॥ এদিকে বিমানের একটি মহল মনে করছে- যুগ যুগ ধরেই এই খাতটিকে অকার্যকর করে রাখা হয়েছে কিছু গোষ্ঠীর হীন স্বার্থে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ করছে না, তারা এটি চালাতে পারবে না। এই ধুয়া তুলে যাতে এটিকে বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়া যায় সেজন্যই কাজ করছে বিমানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। যে সংখ্যক লোকবল ও সরঞ্জাম প্রয়োজন তার অর্ধেকও নেই। স্বল্প লোকবল ও সরঞ্জাম দিয়েই বছর বছর ধরে চলছে বিভাগটি। বর্তমানে যে জনবল রয়েছে তাদের সবাই চুক্তিভিত্তিক কাজ করছেন। একেকজন কর্মী ২০-২৫ বছর ধরেই চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতিতে কাজ করছেন। কিন্তু বিমানের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা বিষয়টির দিকে কখনই নজর দেননি। এক হিসাব মতে, বিমানে এই বিভাগে বর্তমানে লোকবল রয়েছে ১২২৭ জন। অথচ বিমানের হিসেবেই বিভাগটি যথাযথভাবে চালাতে ন্যূনতম ২ হাজার ৫৪০ লোক প্রয়োজন। বিমানের শীর্ষ কর্তারা মনে করেন। মাত্র প্রতি শিফটে ২ শত জনবল নিয়োগ আর মাত্র এক শত কোটি টাকার সরঞ্জামাদি কিনা হলেই বর্তমান পরিস্থিতিতেই সন্তোষজনক সার্ভিস দেয়া সম্ভব। জানা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৩ বিদেশী এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করছে, কার্গো ফ্লাইট চলছে ৮টি। সপ্তাহে বিমান ১৬৮ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো করে ২০০টি। কার্গো ফ্লাইট ১৫টি। বিমান বছরে এই খাত থেকে সাড়ে চার শত কোটি টাকা আয় করে থাকে। ২০১১ সালে আর্নেস্ট এ্যান্ড ইয়াং নামে একটি ভারতীয় কোম্পানি বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগে কত লোকবল প্রয়োজন তার ওপর একটি প্রতিবেদন দেয়। এজন্য আর্নেস্টকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিভাগের গ্রাউন্ড সার্ভিসের জন্য বিদ্যমান লোকবলের চেয়ে অনেক কর্মীর কথা বলে। বিমান অবশ্য এজন্য ২৫৪০ লোক চেয়েছে। অথচ এই শাখায় লোক হেলপারসহ লোক রয়েছে মাত্র ৭২২ জন। কার্গো শাখায় বর্তমানে লোক রয়েছে হেলপারসহ মাত্র ২৮০ জন। বিমান এই শাখায় লোক চেয়েছে ৬৭৯ জন। আর আর্নেস্ট শুধু সুপারভাইজার পদেই লোক চেয়েছে ২৯৫ জন। গ্রাউন্ড সার্ভিস ইক্যুইপমেন্ট শাখায় বর্তমানে লোক রয়েছে মাত্র ২২৫। বিমান এজন্য লোক চেয়েছে ৪৪১ আর আর্নেস্ট চেয়েছে ২৮৮। প্রতি শিফটে ৩৫০ লোক প্রয়োজন। অথচ সেখানে লোক রয়েছে মাত্র ৬০। বড় ধরনের উড়োজাহাজে ৩০ লোক প্রয়োজন হয়। ছোট উড়োজাহাজে ১৯। অথচ বিমান এখানে মাত্র অর্ধেক লোকবল দিতে পারছে। বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চুক্তিভিত্তিক লোকবল দিয়ে ভাল সেবা পাওয়া সম্ভব নয়। ১৮/২০ বছর ধরেই চুক্তিভিত্তিক কাজ চলছে। এটি টেকনিক্যাল জব। যারা এই বিভাগে কাজ করছেন তাদের ধারাবাহিক ট্রেনিংয়ের মধ্যে রাখা দরকার। কিন্তু আমরা আদৌ তা করতে পারছি না। ম্যানেজমেন্টের ব্যর্থতার দায়ে সেবা দিতে পারছি না। বিমান যদি এটি চালাতে না পারে তাহলে বিমানের হাতে এটি রাখার কোন যুক্তি নেই। দায়ী কেবলই দুর্নীতি ॥ চার দশকে এ খাতে সার্ভিসের অধপতনের জন্য দায়ী করা হয়েছে দুর্নীতি অপচয় ও দক্ষ ব্যবস্থপনার অভাবকে। বিমানের একজন পরিচালক জানান, শুধু গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং কেন। জিএসইয়ের সব সমস্যাই সমাধানযোগ্য। এর জন্য প্রয়োজন শুধু সব কর্মচারী কর্মকতার মানসিকতা পরিবর্তনের। সবার মনে যদি থাকে চুরি আর দুর্নীতি, তাহলে দক্ষ ব্যবস্থাপনা আর শাসক কতটা সামাল দিতে পারবে? অন্যসব বিভাগের মতোই গ্রাউন্ড হ্যান্ডিলিং শাখাও দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। কি ধরনের দুর্নীতি জানতে চাইলে তিনি অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়েই বললেন- সেবার মান বাড়ানোর তাগিদ দিলেই অজুহাত দেয়া হতো লোকবল নেই। যন্ত্রপাতি নেই। সব অচল হয়ে আছে। কিন্তু লোকবলও দেয়া হলো। গত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতিও কেনা হলো। পরে দেখা গেল নিম্নমানের চায়নিজ যন্ত্রপাতি কিনা হয়েছে। যেগুলো ক’দিন পরপরই অচল হচ্ছে। দুর্নীতির শেষ এখানেই নয়। দেখা গেছে, চায়নিজ মাল কিনে সেটার ওপর ঘষামাজা করে মেইড ইন আমেরিকা লেখা হয়েছে। এ মন জাল জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগে জিএসই বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। উল্লেখ্য শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম জয়েন্ট ভেঞ্চারে ছেড়ে দেয়ার জন্য পরপর দুদফা আরএফপি করা হয়। কিন্তু বারবারই নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। সর্বশেষ দরপত্রে দুবাইয়ের ডানাটা, টার্কিস এয়ারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সেলিভি, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের সিটা, মিসরের ইজিপ্ট এয়ার, ইউরোপের সুইসপোর্ট ও ভারতের দুটো প্রতিষ্ঠান। আগামীকাল শুক্রবার এ কটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের দেয়া শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা হবে। প্রয়োজনে আইএটিএ থেকে বিশেষজ্ঞ পরামর্শক এনে এ দরপত্রের কারিগরি মূল্যায়নের কাজ করার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে গত বছর বিমান কর্তৃপক্ষ শাহজালালের কার্গো ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং জয়েন্ট ভেঞ্চারে করার জন্য সরাসরি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সুইসপোর্টসহ বিশ্বের পাঁচটি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। কিন্তু বিমানের দরপত্র যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে মাত্র তিনটি দরপত্র গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়। সেগুলো ছিল সুইসপোর্ট, দুবাইভিত্তিক ডানাটা ও তুরস্কভিত্তিক কোম্পানি সিভেলি। কিন্তু বিমানে এ ধরনের জয়েন্ট ভেঞ্চারভিত্তিক কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার মতো বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকায় ওই দরপত্র বাতিল করা হয়। এরপরই বিমান পরিচালনা পর্ষদ একটি আন্তর্জাতিক কনসালট্যান্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিমান জয়েন্ট ভেঞ্চারের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করার পর দুবাইভিত্তিক ডানাটার সঙ্গে সম্প্রতি লাইসেন্স খোয়ানো একটি দেশী এয়ারলাইন্স একীভূত হয়ে গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যন্ডেলিংয়ের কাজ পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে।
×