ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দিদির দিকে ঝুঁকে সমীক্ষা

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৭ মে ২০১৬

দিদির দিকে ঝুঁকে সমীক্ষা

অনলাইন ডেস্ক ॥ তেতাল্লিশ দিন পর প্রথম আভাস। তামাম ভোট-পরবর্তী সমীক্ষা জানিয়ে দিল, ঈষৎ হলেও পাল্লা ভারী দিদির দিকে। কতটা? এবিপি আনন্দ-নিয়েলসেনের মতে, ১৬৩টি আসন পেতে পারেন দিদি। জোট পেতে পারে ১২৬টি আসন। প্রায় একই ধরনের সম্ভাবনার কথা বলেছে ইন্ডিয়া টিভি-সি ভোটারও। তাদের মতে, তৃণমূল পেতে পারে ১৬৭টি আসন। জোট ১২০টি। আবার ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিসের সমীক্ষার দাবি, আড়াইশো আসনে পেয়ে বাংলায় বিরোধীদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিতে পারেন দিদি। সবটাই সম্ভাবনার কথা। তবে আপাত ভাবে এই ইঙ্গিতটাই তৃণমূলকে স্বস্তি দেওয়ার কথা। কারণ আসন কমুক বা বাড়ুক ভরসার ব্যাপার একটাই যে, সরকার তাদের হচ্ছেই। তবে সেই ভাবনায় বাদ সাধছে নিয়েলসেন। তাদের বক্তব্য, এর মধ্যেও একটা ‘কিন্তু’ রয়েছে। ১৬৩ সংখ্যাটা আসলে দৃঢ় নয়। ভঙ্গুর। কেননা তাদের হিসেবে এর মধ্যে ২৫টি আসনে দিদির দলের সঙ্গে বিরোধীদের ভোটের ব্যবধান খুবই কম। অর্থাৎ হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তাই যে কোনও ফলাফল হতে পারে ওই আসনগুলিতে। হিসেব মতো, এর মধ্যে ১৬টি আসনে হেরে গেলেই তৃণমূলের মোট আসন সংখ্যাগরিষ্ঠতার নীচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিয়েলসেনের সমীক্ষা তাই তৃণমূলকে যেমন উৎকণ্ঠায় রেখেছে, তেমনই কিছুটা আশার আলো দেখছেন জোটের নেতারা। বলে রাখা ভাল যে, ভোট-পরবর্তী সমীক্ষা বেদবাক্য নয়। ভোটের পর কিছু ভোটারের মতামত নিয়ে সমীক্ষকরা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে একটি সংখ্যায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। তবে সেই প্রক্রিয়াও ত্রুটিমুক্ত নয়। তাই অতীতে যেমন অনেক বার সমীক্ষার ইঙ্গিতের সঙ্গে প্রকৃত ফলাফল মিলে গিয়েছে, উল্টোটাও ঘটেনি এমন নয়। হাতে-গরম নজির সাম্প্রতিক দু’টি নির্বাচন। দিল্লি ও বিহারে বিধানসভা ভোট। বিশেষ করে বিহারে কমবেশি সব ভোট-পরবর্তী সমীক্ষাই জানায়, সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। কিন্তু প্রকৃত ফলাফলে দেখা যায়, লালু-নীতীশ-কংগ্রেস জোটের এক তৃতীয়াংশ আসনও বিজেপি পায়নি। বিহারের অভিজ্ঞতাকে সামনে রেখেই আশাবাদী জোট। তাদের দাবি, সমীক্ষা যাই বলুক, ১৯ মে জোটই জিতবে। সমীক্ষা থেকে পাওয়া সংখ্যাগুলি নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন জোট নেতারা। কংগ্রেসের ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেন, ‘‘গত লোকসভা নির্বাচনে ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। তার মধ্যে বিস্তর ভুতুড়ে ভোট তথা জল মিশে ছিল। এ বার জল কিছুটা হলেও কমেছে। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, তারা ৪৪ শতাংশ ভোট পেতে পারে। এই ভোটবৃদ্ধি কী ভাবে সম্ভব? তবে কি ধরে নিতে হবে যে বিজেপি থেকে বেরিয়ে আসা দশ শতাংশ ভোটের অর্ধেকটাই তৃণমূলে চলে গিয়েছে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য?’’ নিয়েলসেনের প্রাক-ভোট সমীক্ষায় বলা হয়েছিল বিজেপি পেতে পারে ৫ শতাংশ ভোট। জোটের নেতাদের মতে, ভোট যত এগিয়েছে মূল লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘হ্যাঁ দিদি’ বনাম ‘না দিদি’। সেই মেরুকরণটা যদি বাস্তব হয়, তা হলে ভোট চলাকালীন বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৫ থেকে বেড়ে ৭ শতাংশ হল কী ভাবে? এখানেই থেমে থাকেননি জোটের নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিটি দফায় পৃথক পৃথক ভাবে ফলাফলের যে সম্ভাবনার ছবি উঠে এসেছে সমীক্ষায়, তাতেও অসঙ্গতি রয়েছে। বিশেষ করে তৃতীয় দফার ভোটে, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে তাঁরা একমত নন। একই ভাবে পঞ্চম দফার ইঙ্গিত নিয়েও সন্দিহান জোট। তবে সমীক্ষার ইঙ্গিত পেয়ে প্রকাশ্যে অন্তত প্রত্যয় দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূলের নেতারা। শুভেন্দু অধিকারীর মতো নেতাদের মতে, ‘‘নিয়েলসেনও সঠিক ইঙ্গিত দিতে পারেনি। প্রকৃত ফলে দেখা যাবে তৃণমূল আরও বেশি আসন পাচ্ছে।’’ সব মিলিয়ে তাই বলা যেতে পারে, চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগে ভোট-পরবর্তী সমীক্ষায় এ দিন একটা ইঙ্গিত পাওয়া গেল মাত্র। সমীক্ষা এ বার তার সুনাম রাখতে পারবে কি না, বোঝা যাবে বিষ্যুৎবার। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×