ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মাহবুবা সুলতানা

প্রাচ্যনাটের ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১২ মে ২০১৬

প্রাচ্যনাটের  ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’

আজাদ আবুল কালামের নির্দেশনায় শনিবারে এক্সপেরিমেন্টাল হল, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে প্রদর্শিত হবে প্রাচ্যনাট থিয়েটারের মঞ্চ নাটক ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’। এইদিন দুটি প্রদর্শনী দেখানো হবে। ১ম প্রদর্শনী শুরু“হবে সন্ধ্যা ৬টা এবং ২য় প্রদর্শনী হবে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে। টিকেট পাওয়া যাবে প্রদর্শনীর আগে হল কাউন্টারে। ‘ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি’ নাটকের দুটি প্রদর্শনীতে অভিনয় করবেন পারভীন পারু,প্রদ্যুত কুমার ঘোষ, শাহারিয়ার রানা জুয়েল ,পারভিন সুলতানা কলি, মোহাম্মাদ রফিক, রিফাত নোবেল, গোপি , দীপ, মনির, ফুয়াদ প্রমুখ। । ২০০৫ সালের ১১ এপ্রিল গভীর রাতে সাভারের পলাশবাড়িতে ধসে পড়ে স্পেকট্রাম সোয়েটার এ্যান্ড নিটিং ফ্যাক্টরি। সে সময় ফ্যাক্টরিতে রাতের শিফটে কাজ করছিলেন শতাধিক কর্মী। সেই ঘটনায় নিহত হয় প্রায় ৬৪ জন। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে জানা যায়, কোন রকম ঝুঁকি মোকাবেলার ব্যবস্থা ছাড়াই ঘটনার ৩ বছর আগে ফ্যাক্টরিটি তৈরি হয়েছিল একটি জলাভূমির ওপর। ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি নাটকটি সেই ঘটনাকেই কেন্দ্রীভূত করে লেখা যেখানে একক চরিত্র তারাভান। সেদিনের নাইট শিফটে কাজ করতে আসা কর্মীদেরই প্রতিচ্ছবি। নাটকটি গ্রন্থিত হয় তার স্মৃতিচক্র, স্বপ্নচক্র আর জীবনচক্রের রোমন্থনে। যে কোন সময় মাথার ওপর ছাদ ভেঙে পড়ে পিষে দেবে তার জীবন, এমনকি তার নড়ার উপায়টুকুও নেই। এ রকম অবস্থায় সে যেন এক প্রকার তার সমগ্র জীবনের পাওয়া-না পাওয়ার হিসাব মিলিয়ে নেয়। সেই হিসাব প্রতিনিধিত্ব করে তারই মতো শত শত তারাভানের, যাদের অনেকেই এভাবে মরে যায়, আবার কেউ কেউ বেঁচে থাকে কারখানার মেশিনের মতো নির্বাক আজ্ঞাবহ হয়ে, দাস হয়ে। তারাভানের স্মৃতিচক্রের সমান্তরালে একই ঘটনাকে দেখা যায় একজন ভিনদেশী আউটসোর্সিং পারসন মিস্টার ওয়েস্ট এর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। এই আকস্মিক ঘটনায় তার প্রতিক্রিয়া বিশ্বমঞ্চে যেসব চিত্র তুলে ধরে সেগুলো তারাভানরা কখনো জানে না, কিংবা জানার সুযোগ পায় না। ২০০৫ সালের এপ্রিলে সাভারের পলাশবাড়িতে স্পেকট্রাম সোয়েটার ফ্যাক্টরির নয়তলা ভবন ধসে পড়ে। আপাত আধুনিক এই স্থাপত্য দখলকৃত পাবলিক খাল-ডোবা রাতারাতি ভরাট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল, মেশিন বসল, রফতানিমুখী পোশাক তৈরি শুরু করে দিল। তখন সংশ্লিষ্ট নজরদারিদের কেউ প্রশ্ন করেনি। দায়িত্ববান সরকারী পোষ্য কিঞ্চিৎ আর্থিক অনুগ্রহে তুষ্ট হলো। দ্রুত গতিতে টাকা কামানোর মনস্তত্ত্বসর্বস্ব বেনিয়াকুলের লক্ষো জনের একজন স্পেকট্রাম ফ্যাক্টরির মালিক বা মালিক সম্প্রদায়। গভীর রাতে নির্মাণ ত্রুটির কারণে ইমারতটি একদিকে হেলে গিয়ে অবশেষে একস্তূপ। ব্যাপক তথ্যের যুগে রেডিও, টিভি, সংবাদপত্র ইত্যাদিতে শুধু লাগাতার ধ্বংস, মৃত্যু আর আহাজারির ছবি তথ্যের বন্যা। আমাদের মাথা ভো ভো করে- ক্ষোভ, রাগ, হতাশায় আমরা তরপাই- তথ্য ঝড়ের ভেতর ছিল কিছু সযতেœ রাখা ‘স্বপ্নমুষ্টি’। কেউ ছুটিতে বাড়ি যাবে, কেউ মাস গেলে মা হবে- হবে বাবা, কেউ সকাল হলেই হলুদ বরণ কন্যা সেজে বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। এতসব মানুষের ‘স্বপ্নমুষ্টি’ কেমন আদরে সঞ্চয় করেছিল হৃদয়ের গহিন মণিকোটায়। এই নয়তলা কংক্রিট ধসে পড়া আদতে লোভী, কুৎসিত কিছু অর্থান্বেষী সারমেয়র বিপরীতে কিছু মানুষের স্বপ্নের অন্তিম যাত্রার প্রতীক হয়। অপূর্ণ সেই স্বপ্ন ধরার চেষ্টা ট্র্যাজেডি পলাশবাড়ি- কী রচনা কী নির্মাণে।
×