ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে এফবিসিসিআইয়ের ৪৪৯ প্রস্তাব

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৮ এপ্রিল ২০১৬

বাজেটে এফবিসিসিআইয়ের ৪৪৯ প্রস্তাব

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ আগামী ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর, মূল্য সংযোজন কর ও শুল্ক খাতসহ বিভিন্ন বিষয়ে ৪৪৯টি প্রস্তাবনা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। বাজেট উপলক্ষে বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক অভিজাত হোটেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পরামর্শক কমিটির সভায় সংগঠনটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অর্থমন্ত্রীর কাছে এসব প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। এতে মোট ৪৪৯টি প্রস্তাবনার মধ্যে শুল্ক খাতে রয়েছে সর্বোচ্চ সুপারিশ। এ খাতে মোট ২৪১টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। আয়কর খাতে ১২৪টি এবং ভ্যাট খাতে রয়েছে ৮৪টি প্রস্তাব। প্রস্তাবনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনায় নিয়ে জীবনমানের বর্তমান ধারা ধরে রাখতে করমুক্ত আয়ের সীমা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৫০ হাজার টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে হয়রানি কমিয়ে করদানে উৎসাহিত করতে বাংলা ভাষায় সহজবোধ্য নতুন কর আইন প্রণয়নের প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি। ২০১৪-২০১৫ এবং ২০১৫-২০১৬ উভয় অর্থবছরই ব্যক্তি খাতের করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে এফবিসিসিআই যুক্তি দিচ্ছে, চলতি অর্থবছর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ৬ শতাংশ মূদ্রাস্ফীতি রয়েছে। কিন্তু দুই অর্থবছর ধরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা উচিত হবে। অন্যদিকে নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি করদাতার জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা, প্রতিবন্ধী করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। ব্যক্তিগত কর হারের ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব, প্রথম ৩ লাখ টাকার পরে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে করারোপ করা। চলতি অর্থবছর পরবর্তী ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ কর রয়েছে। নতুন বাজেটে পরবর্তী ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ১৫ শতাংশ করারোপের প্রস্তাব দিয়েছে এফবিসিসিআই। এরপর ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২০ শতাংশ ও পরবর্তী ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত ২৫ শতাংশ আয়করের প্রস্তাব রয়েছে সংগঠনটির প্রস্তাবনায়। ৪০ লাখ টাকার ওপরে আয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে৩০ শতাংশ করের প্রস্তাবনা। এফবিসিসিআইয়ের দাবি, আগামী অর্থবছর সারা দেশের করদাতার সর্বনিম্ন আয়কর ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যক্তিগত আয়করসীমা বৃদ্ধি ও করহার পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব সম্পর্কে এফবিসিসিআইয়ের যুক্তি হলো— মূদ্রাস্ফীতি, মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা রেখে আয়করের হার পুনর্নির্ধারণ করা জরুরি। বছরে একজন মানুষের যে ন্যূনতম অর্থের প্রয়োজন, সে পরিমাণ অর্থ করমুক্ত রাখলে কর ফাঁকির প্রবণতা কমে আসবে। সামর্থ্য অনুযায়ী, কর ও সারচার্জ আরোপিত হলে বর্তমানে ব্যক্তি করদাতার সর্বোচ্চ করভার ও করপোরেট করহারের ব্যবধান কমে আসবে। ব্যক্তিগত করভার কমালে সম্পদ ও মূলধন পাচারের প্রবণতা হ্রাস পাবে, যা বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অধিক রাজস্ব আহরণে সহায়ক হবে। প্রস্তাবনায় আরো বলা হয়েছে, ব্যক্তি করদাতার প্রদর্শিত নিট সম্পদের ভিত্তিতে সরকার সারচার্জ আদায় করা হচ্ছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে নিট সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা হলে কর দিতে হয় না। তবে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে কিন্তু ১০ কোটি টাকার বেশি নয়— এমন সম্পদধারীকে ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। সম্পদের মূল্য ১০ কোটি টাকার অধিক কিন্তু ২০ কোটি টাকার বেশি নয়— এমন সম্পদধারীকে ১৫ শতাংশ, ২০ কোটির বেশি কিন্তু ৩০ কোটির বেশি নয়— এমন সম্পদধারীকে ২০ শতাংশ এবং ৩০ কোটি টাকার বেশি যেকোনো পরিমাণ সম্পদের ওপর ২৫ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করা রয়েছে। এফবিসিসিআই এই সারচার্জ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। এমনিভাবে শুল্ক ও ভ্যাট খাতেও পৃথক পৃথক ৩২৫টি প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছে এফবিসিসিআই। ##
×