ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

টি ইসলাম তারিক

সুয়ারেজ একাই একশ’

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৭ এপ্রিল ২০১৬

সুয়ারেজ একাই একশ’

অবিশ্বাস্য কীর্তিই বটে। যেন গোলের নেশায় মত্ত বার্সিলোনা আর লুইস সুয়ারেজ। টানা চার ম্যাচ জয়বঞ্চিত থাকার পর ২০ এপ্রিল ডিপোর্টিভো লা করুণাকে ৮-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে স্বরূপে ফেরে বার্সা। ওই ম্যাচে নিজে চার গোল করাসহ আরও তিনটিতে সহায়তা করেছিলেন উরুগুইয়ান তারকা সুয়ারেজ। দুদিন বাদে ২৩ এপ্রিল রাতে আবারও প্রতিপক্ষের জালে গোলৎসব করেছে কাতালানরা। এবার ন্যূক্যাম্পে স্পোর্টিং ডি গিজনকে হাফডজন অর্থাৎ ৬-০ গোলে হারিয়েছে বার্সিলোনা। আগের ম্যাচের মতো এ ম্যাচেও হ্যাটট্রিকসহ একাই চার গোল করেন ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে থাকা সুয়ারেজ। টানা দুই ম্যাচে চার গোল করার এই কীর্তি লা লীগার ইতিহাসে আর কোন ফুটবলারের নেই। যেন সুয়ারেজ এখন একাই একশ’। আয়াক্স-লিভারপুল হয়ে বার্সিলোনা। সময়ের পরিক্রমায় সুয়ারেজ যেন এখন আরও অনেক বেশি পরিপক্ক। পারফর্মেন্সের বাইরেও বিতর্কিত কা- ঘটিয়ে আয়াক্স কিংবা লিভারপুলের সুয়ারেজ আলোচনায় এসেছেন বহুবার। কিন্তু সেই সুয়ারেজ বার্সিলোনায় দুর্দান্ত। বিতর্ক ভুলে এখন মনোযোগী ছাত্র শুধুই মাঠের খেলায়। কাতালান ক্লাবটিতে যেন রীতিমতো উড়ছেন এই উরুগুইয়ান। লা লীগায় শেষ দুই ম্যাচের পারফর্মেন্স তো আকাশছোঁয়া। টানা দুই ম্যাচে ৪ গোল করে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়ানোর বিস্ময়কর কীর্তি গড়েছেন তিনি। এ যেন অবিশ্বাস্যই! দুই ম্যাচে ৮ গোল! তা বিশ্বাস করতে পারছেন না সুয়ারেজ নিজেই, ‘তিন দিনের মধ্যেই ৮ গোল করে আমি বিস্মিত। এমনটি এর আগে কখনোই ঘটেনি। তবে আমি সবসময়ই চাই দলকে সহায়তা করতে।’ চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই বার্সা ছিল দুর্দান্ত। দুই সপ্তাহ আগেও ১০ পয়েন্ট বেশি নিয়ে লীগ টেবিলের শীর্ষে ছিল লুইস এনরিকের দল। লা লীগার শিরোপাটা তো হাতের মুঠোয় তুলে নিয়েছিলেন মেসি-নেইমাররা। অথচ সেই দলটিই টানা তিন ম্যাচে হেরে বসে। তবে হঠাৎ করে বিপর্যস্ত বার্সাকে নতুন উদ্যমে ফিরিয়ে আনেন সুয়ারেজই। ডিপোর্টিভো লা করুণার বিরুদ্ধে একাই চার গোল করেন এই উরুগুইয়ান। দলও জিতে ৮-০ গোলের বড় ব্যবধানে। মাঝের দুদিন বিরতির পর স্পোর্টিং গিজনের বিরুদ্ধেও ৪ বার বল জালে জড়ান সুয়ারেজ। সেইসঙ্গে চলতি মৌসুমে লা লীগায় সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনটিও নিজের করে নিয়েছেন এই উরুগুইয়ান তারকা। ছাড়িয়ে যান ৩১ গোল করে শীর্ষে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে। বর্তমানে লা লীগায় ৩৪ গোল নিয়ে সবার ওপরে অবস্থান করছেন সুয়ারেজ। ২৫ আর ২৩ গোল নিয়ে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছেন সুয়ারেজেরই ক্লাব সতীর্থ লিওনেল মেসি ও নেইমার। এই মৌসুমে বার্সার জার্সিতে সবধরনের প্রতিযোগিতামূলক ৪৯ ম্যাচ খেলে ৫৩ গোল করেছেন সুয়ারেজ। যে কারণে পিচিচি এবং ইউরোপীয়ান গোল্ডেন শো জয়েরও দারুণ সুযোগ তার। লা লীগায় সর্বোচ্চ গোলস্কোরার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সুয়ারেজ। এবার সেই স্বপ্নই বাস্তবে রূপ নিল তার। তবে এই মুহূর্তে লীগ শিরোপা জেতাটাই প্রাধান্য দিচ্ছেন উরুগুইয়ান, ‘লা লীগায় সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে চেয়েছিলাম আমি। এখন পিচিচি শিরোপা জিততে পারলে অবশ্যই স্বাগত জানাব। তবে লীগ শিরোপাকেই প্রাধান্য দিচ্ছি আমি।’ ২০০৮-০৯ মৌসুমে লা লীগায় সর্বোচ্চ গোলদাতার ‘পিচিচি’ পুরস্কার জিতেছিলেন দিয়াগো ফোরলান। এরপর শুধু মেসি-রোনাল্ডোর রাজত্ব। তবে এবার এই দুই তারকার বাইরে কেউ পিচিচি পুরস্কার জিততে যাচ্ছেন। শুধু সর্বোচ্চ গোলদাতাই নয় এবার সতীর্থদের দিয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করিয়েছেনও সুয়ারেজ। এই মৌসুমে তার এ্যাসিস্ট ১৫ গোলে। সমান ১৩টি করে এ্যাসিস্ট করেছেন তারই ক্লাব সতীর্থ লিওনেল মেসি এবং এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কোকে। ১১ গোল সহায়তায় তাদের পরে আছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। বার্সিলোনায় সুয়ারেজের দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের পেছনে ভূমিকা রয়েছে লিওনেল মেসি এবং নেইমারেরও। স্পোর্টিং গিজনের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে এই দুই সতীর্থকেই প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সুয়ারেজ। গোল করার পাশাপাশি রেকর্ডের পর রেকর্ডও গড়ে চলেছেন সুয়ারেজ। ডিপোর্টিভোর বিরুদ্ধে চার গোল করার পথে বার্সিলোনার হয়ে এক মৌসুমে ব্রাজিলের সাবেক তারকা রোনাল্ডোর সর্বোচ্চ গোলের কীর্তি ছাড়িয়ে যান। তবে মেসির রেকর্ড ভাঙা অসম্ভব বলে মনে করেন উরুগুয়ের এই তারকা ফরোয়ার্ড। ১৯৯৬-৯৭ মৌসুমে কাতালানদের হয়ে সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪৭ গোল করেন বড় রোনাল্ডো। আর চলতি মৌসুমে বার্সিলোনার জার্সি গায়ে সুয়ারেজের গোল এখন পর্যন্ত ৫৩টি। এ প্রসঙ্গে সুয়ারেজ বলেন, রোনাল্ডোকে ছাড়িয়ে যেতে পারাটা সম্মানের। তিনি অসাধারণ এক খেলোয়াড় ছিলেন। সবধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এক মৌসুমে বার্সিলোনার হয়ে ৫৩টির বেশি গোল কেবল মেসিরই আছে। ২০১১-১২ মৌসুমে ৮২ গোল করেছিলেন আর্জেন্টিনার তারকা ফরোয়ার্ড। এছাড়া ২০১০-১১ মৌসুমে ৫৭, ২০১২-১৩ মৌসুমে ৬৯, ২০১৪-১৫ মৌসুমে ৬২ গোল করেন মেসি। রেকর্ডের দিকে তাকিয়েই হয়ত সুয়ারেজ বুঝতে পেরেছেন মেসির রেকর্ড ভাঙা অসম্ভব। তাইতো তিনি বলেন, ফুটবলের অন্যতম সেরা এক খেলোয়াড়কে ছাড়িয়ে যাওয়া সম্মানের, কিন্তু মেসির রেকর্ড ভাঙা নিশ্চিত করেই অসম্ভব। তবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর সুয়ারেজের চোখেমুখে এখন শিরোপাস্বপ্ন। সাবেক লিভারপুল তারকার দৃঢ় বিশ্বাস, বাকি দিন ম্যাচ জিতে ট্রফি নিজেদের ঘরেই রেখে দেবে বার্সা। বাকি ম্যাচে বার্সার প্রতিপক্ষ রিয়াল বেটিস, এস্পানিওল ও গ্রানাডা। সুয়ারেজের বিশ্বাস, এ ম্যাচগুলো জিতে ২৪তম লীগ শিরোপার আনন্দে মেতে উঠবে ন্যুক্যাম্পই। এ প্রসঙ্গে সুয়ারেজের ভাষ্য, এটা (শিরোপা) এখন আমাদের হাতে। আমরা যদি বাকি সব ম্যাচ জিতে যাই, তাহলে কেউ আমাদের বিব্রত করতে পারবে না। আসল কথা হলো, আমাদের হোঁচট খাওয়া চলবে না। আমরা লীগের শীর্ষে আছি আর আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আমরাই শিরোপা জিতব। শিরোপা ছাড়া অন্যকিছুর কথা চিন্তা করছি না আমরা।
×